ETV Bharat / state

Woman Kabaddi Player: কবাডিতে বাবার আপত্তি, খেলো ইন্ডিয়ায় ব্রোঞ্জ জয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তুহিনার - Hooghly girl Tuhina wins bronze in Kabaddi

কবাডি খেলে বলে পরিবার ও গ্রামের গঞ্জনা কম সহ্য করতে হয়নি ৷ তা সত্ত্বেও সেসব উপেক্ষা করে মেয়েটি চালিয়ে গিয়েছেন খেলা ৷ আর তারই ফল হিসাবেই খেলো ইন্ডিয়ায় ব্রোঞ্জ জিতলেন কবাডি খেলোয়াড় হুগলির তুহিনা মাইতি ৷

Hooghly Kabaddi Player Tuhina
কবাডি খেলোয়াড় তুহিনা মাইতি
author img

By

Published : Jun 10, 2023, 10:09 PM IST

কবাডিতে ব্রোঞ্জ জয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তুহিনার

পোলবা, 10 জুন: মেয়ে হয়ে কবাডি খেলবে, তাতে রাজি ছিলেন না বাবা । কবাডি খেলা নিয়ে কম গঞ্জনা শুনতে হয়নি পাড়া পড়শিদের থেকেও । তবে সে সব কিছুই মুখ বুঝে সহ্য করেছেন বছর 19-এর তুহিনা মাইতি ৷ মনে মনে ভেবেছিলেন একদিন খেলা দিয়েই সকলের মুখ বন্ধ করে দেবেন তিনি ৷ যেমন কথা তেমন কাজ ৷ খেলো ইন্ডিয়ায় কবাডিতে ব্রোঞ্জ জিতে গ্রামের পাশাপাশি রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করেছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তুহিনা ।

তুহিনা-সহ রাজ্য থেকে 12 জনের দল অংশ নিয়েছিল খেলো ইন্ডিয়াতে ৷ প্রথমে হয় ইস্ট জোনের খেলা ৷ সেখানে জিতে তারা যান অল ইন্ডিয়ায় খেলতে ৷ তারপর খেলো ইন্ডিয়ায় ভাগ নেয় ওই মেয়েদের দলটি ৷ এ বছর 23 মে খেলো ইন্ডিয়ায় দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করে ব্রোঞ্জ ঘরে নিয়ে আসেন এই 12 জন 'দস্যি' মেয়ে ৷ সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তুহিনা ৷

Hooghly Kabaddi Player Tuhina
কবাডি খেলায় মা বরাবরই পাশে থেকেছেন তুহিনার

পোলবার কচুয়া গ্রামে বাবা মা ভাই ও ঠাকুমার সঙ্গে থাকেন তিনি । মাত্র 3 বছর বয়সে স্থানীয় এক কোচিং সেন্টার দিয়ে তাঁর কবাডিতে হাতে খড়ি । মায়ের শখ ছিল মেয়েকে কবাডি খেলোয়াড় করবেন । তাই নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সেসব অতিক্রম করে এই জায়গায় নিয়ে এসে দাঁড় করিয়েছেন মেয়েকে । প্রথম দিকে বাবার আপত্তি থাকলেও পরে মেয়ের উন্নতি দেখে উৎসাহ দিয়েছেন তিনিও । লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে গিয়েছেন তুহিনা । একদিকে পড়াশোনা অন্যদিকে খেলাধুলা, সমান পারদর্শী হয়েছে মেয়েটি ।

Hooghly Kabaddi Player Tuhina
পড়াশোনার পাশাপাশি সমান তালে চলছে তুহিনার কবাডি খেলা

আগামিদিনে কবাডি নিয়ে অনেক স্বপ্ন রয়েছে তুহিনার । তিনি চান এশিয়ান গেমসের মতো আন্তর্জাতিক খেলায় অংশ নিতে । দেশের হয়ে আরও বড় সফলতা আনতে কঠিন পরিশ্রম করছেন তুহিনা । বাড়ি থেকে 24 কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে চন্দননগর কলেজে ও কবাডি খেলার জন্য ক্লাবে আসেন তিনি নিয়মিত । মেয়ে হয়েও কবাডির প্রতি ভালোবাসা থেকে এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তুহিনা । তবে সরকারিভাবে বা অন্য কোনভাবে সাহায্যের আশা করছেন তিনি ৷ এই সাহায্য পেলে আরও উন্নতি করতে পারতেন তুহিনা ।

আরও পড়ুন: মহিলা কবাডি লিগ খেলতে দুবাই পাড়ি দিচ্ছেন চাষির মেয়ে শুক্লা

তিনি পোলবার এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা মেয়ে । এখন চন্দননগর সরকারি কলেজ থেকে ইডুকেশন নিয়ে অনার্স করছেন তিনি । পড়াশোনার পাশাপাশি খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকই । কোনওরকমে সংসার চলে তাঁদের । বাবা মন্টু মাইতি একটি সোনার দোকানে কাজ করেন । টালির চাল ও মাটির ঘরে তাঁদের বাস ৷ বর্তমানে সরকারি ঘর পেলেও তা সম্পূর্ণ করতে পারেনি এখনও বাবা । দুই ছেলে মেয়ের পড়াশোনা-সহ গোটা পরিবার মন্টুর উপর নির্ভরশীল ।

Hooghly Kabaddi Player Tuhina
খেলো ইন্ডিয়ায় ব্রোঞ্জ জিতলেন হুগলির তুহিনা মাইতি

তুহিনা ছোট থেকে কালিয়াড়া শক্তি সংঘ ক্লাবে খেলাধুলা করতেন । কিছু সমস্যার জন্য ক্লাব ছাড়তে হয় তাঁকে । এখন তিনি চন্দননগর হাটখোলা সপ্ত সম্মেলনী ক্লাবের হয়ে কবাডি খেলেন । দুটি ন্যাশনাল স্কুল গেমস ও একটি জুনিয়ার ওপেন ন্যাশনাল খেলেছেন তুহিনা । আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় পড়াশোনা ও খেলাধুলা একসঙ্গে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে তুহিনার পরিবারের কাছে । তাঁর মা চান সরকারি চাকরি বা অন্য কিছু হলে উপকার হয় তুহিনার জন্য ।

Hooghly Kabaddi Player Tuhina
কবাডি নিয়ে অনেক স্বপ্ন রয়েছে তুহিনার

কবাডি খেলোয়াড় তুহিনা বলেন, "আরও ভালো করে অভ্যাস করলে হরিয়ানার মতো প্রথম হতে পারতাম খেলো ইন্ডিয়ায় । এখানে থেকে খেলা বা পড়াশোনা করা খুব কঠিন । আমাদের পরিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ । আমি চাই এশিয়ান গেমসে ভালো একটা জায়গা করে নিতে । খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয় । চাই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য চাকরি করতে । আমরা দুই ভাই বোন ৷ ফলে বাবার কম আয়ে সব দিক থেকে সমস্যা হয় ।"

আরও পড়ুন: অভাবকে জয় করে সাব জুনিয়র ন্যাশনাল কবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে জঙ্গলমহলের সরস্বতী

তুহিনার মা বলেন, "ওর বাবা পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে খেলার জন্য প্রথমে বাঁধা দিয়েছিল । আমি ও মেয়ে এক সঙ্গে কঠিন লড়াই করে এতো দূর এসেছি । আমি চাই তুহিনা সরকারি সাহায্য পাক ৷ তাহলে ওর খেলাধুলা এবং পড়াশোনার ক্ষেত্রে উপকার হয় । যদি খেলার ক্ষেত্রে চাকরি হয় তাহলে খুব ভালো হয় আমাদের । খুব কষ্ট করে ওর বাবা সংসার চালাচ্ছে ।"

কবাডিতে ব্রোঞ্জ জয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তুহিনার

পোলবা, 10 জুন: মেয়ে হয়ে কবাডি খেলবে, তাতে রাজি ছিলেন না বাবা । কবাডি খেলা নিয়ে কম গঞ্জনা শুনতে হয়নি পাড়া পড়শিদের থেকেও । তবে সে সব কিছুই মুখ বুঝে সহ্য করেছেন বছর 19-এর তুহিনা মাইতি ৷ মনে মনে ভেবেছিলেন একদিন খেলা দিয়েই সকলের মুখ বন্ধ করে দেবেন তিনি ৷ যেমন কথা তেমন কাজ ৷ খেলো ইন্ডিয়ায় কবাডিতে ব্রোঞ্জ জিতে গ্রামের পাশাপাশি রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করেছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তুহিনা ।

তুহিনা-সহ রাজ্য থেকে 12 জনের দল অংশ নিয়েছিল খেলো ইন্ডিয়াতে ৷ প্রথমে হয় ইস্ট জোনের খেলা ৷ সেখানে জিতে তারা যান অল ইন্ডিয়ায় খেলতে ৷ তারপর খেলো ইন্ডিয়ায় ভাগ নেয় ওই মেয়েদের দলটি ৷ এ বছর 23 মে খেলো ইন্ডিয়ায় দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করে ব্রোঞ্জ ঘরে নিয়ে আসেন এই 12 জন 'দস্যি' মেয়ে ৷ সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তুহিনা ৷

Hooghly Kabaddi Player Tuhina
কবাডি খেলায় মা বরাবরই পাশে থেকেছেন তুহিনার

পোলবার কচুয়া গ্রামে বাবা মা ভাই ও ঠাকুমার সঙ্গে থাকেন তিনি । মাত্র 3 বছর বয়সে স্থানীয় এক কোচিং সেন্টার দিয়ে তাঁর কবাডিতে হাতে খড়ি । মায়ের শখ ছিল মেয়েকে কবাডি খেলোয়াড় করবেন । তাই নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সেসব অতিক্রম করে এই জায়গায় নিয়ে এসে দাঁড় করিয়েছেন মেয়েকে । প্রথম দিকে বাবার আপত্তি থাকলেও পরে মেয়ের উন্নতি দেখে উৎসাহ দিয়েছেন তিনিও । লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে গিয়েছেন তুহিনা । একদিকে পড়াশোনা অন্যদিকে খেলাধুলা, সমান পারদর্শী হয়েছে মেয়েটি ।

Hooghly Kabaddi Player Tuhina
পড়াশোনার পাশাপাশি সমান তালে চলছে তুহিনার কবাডি খেলা

আগামিদিনে কবাডি নিয়ে অনেক স্বপ্ন রয়েছে তুহিনার । তিনি চান এশিয়ান গেমসের মতো আন্তর্জাতিক খেলায় অংশ নিতে । দেশের হয়ে আরও বড় সফলতা আনতে কঠিন পরিশ্রম করছেন তুহিনা । বাড়ি থেকে 24 কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে চন্দননগর কলেজে ও কবাডি খেলার জন্য ক্লাবে আসেন তিনি নিয়মিত । মেয়ে হয়েও কবাডির প্রতি ভালোবাসা থেকে এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তুহিনা । তবে সরকারিভাবে বা অন্য কোনভাবে সাহায্যের আশা করছেন তিনি ৷ এই সাহায্য পেলে আরও উন্নতি করতে পারতেন তুহিনা ।

আরও পড়ুন: মহিলা কবাডি লিগ খেলতে দুবাই পাড়ি দিচ্ছেন চাষির মেয়ে শুক্লা

তিনি পোলবার এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা মেয়ে । এখন চন্দননগর সরকারি কলেজ থেকে ইডুকেশন নিয়ে অনার্স করছেন তিনি । পড়াশোনার পাশাপাশি খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকই । কোনওরকমে সংসার চলে তাঁদের । বাবা মন্টু মাইতি একটি সোনার দোকানে কাজ করেন । টালির চাল ও মাটির ঘরে তাঁদের বাস ৷ বর্তমানে সরকারি ঘর পেলেও তা সম্পূর্ণ করতে পারেনি এখনও বাবা । দুই ছেলে মেয়ের পড়াশোনা-সহ গোটা পরিবার মন্টুর উপর নির্ভরশীল ।

Hooghly Kabaddi Player Tuhina
খেলো ইন্ডিয়ায় ব্রোঞ্জ জিতলেন হুগলির তুহিনা মাইতি

তুহিনা ছোট থেকে কালিয়াড়া শক্তি সংঘ ক্লাবে খেলাধুলা করতেন । কিছু সমস্যার জন্য ক্লাব ছাড়তে হয় তাঁকে । এখন তিনি চন্দননগর হাটখোলা সপ্ত সম্মেলনী ক্লাবের হয়ে কবাডি খেলেন । দুটি ন্যাশনাল স্কুল গেমস ও একটি জুনিয়ার ওপেন ন্যাশনাল খেলেছেন তুহিনা । আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় পড়াশোনা ও খেলাধুলা একসঙ্গে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে তুহিনার পরিবারের কাছে । তাঁর মা চান সরকারি চাকরি বা অন্য কিছু হলে উপকার হয় তুহিনার জন্য ।

Hooghly Kabaddi Player Tuhina
কবাডি নিয়ে অনেক স্বপ্ন রয়েছে তুহিনার

কবাডি খেলোয়াড় তুহিনা বলেন, "আরও ভালো করে অভ্যাস করলে হরিয়ানার মতো প্রথম হতে পারতাম খেলো ইন্ডিয়ায় । এখানে থেকে খেলা বা পড়াশোনা করা খুব কঠিন । আমাদের পরিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ । আমি চাই এশিয়ান গেমসে ভালো একটা জায়গা করে নিতে । খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয় । চাই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য চাকরি করতে । আমরা দুই ভাই বোন ৷ ফলে বাবার কম আয়ে সব দিক থেকে সমস্যা হয় ।"

আরও পড়ুন: অভাবকে জয় করে সাব জুনিয়র ন্যাশনাল কবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে জঙ্গলমহলের সরস্বতী

তুহিনার মা বলেন, "ওর বাবা পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে খেলার জন্য প্রথমে বাঁধা দিয়েছিল । আমি ও মেয়ে এক সঙ্গে কঠিন লড়াই করে এতো দূর এসেছি । আমি চাই তুহিনা সরকারি সাহায্য পাক ৷ তাহলে ওর খেলাধুলা এবং পড়াশোনার ক্ষেত্রে উপকার হয় । যদি খেলার ক্ষেত্রে চাকরি হয় তাহলে খুব ভালো হয় আমাদের । খুব কষ্ট করে ওর বাবা সংসার চালাচ্ছে ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.