খানাকুল, 24 জানুয়ারি : নবজাগরণের পথিকৃৎ রাজা রামমোহন রায়ের জন্মভিটেকে হেরিটেজ মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার (Heritage Status to Birthplace of Raja Ram Mohan Roy) ৷ এটি রাজা রামমোহন রায়ের 250তম জন্মবার্ষিকী ৷ এ বছর 22 মে তাঁর জন্মের 250 বছর পূর্ণ হবে ৷ বিশেষ এই মুহূর্তে খানাকুলের রাধানগরে ভারত পথিকের জন্মভিটে সংরক্ষণ করে হেরিটেজ ঘোষণার মধ্যে তাঁকে সম্মান জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন ৷
1772 সালের 22 মে হুগলির খানাকুলের রাধানগরে জন্মগ্রহণ করেন রাজা রামমোহন রায় (Raja Ram Mohan Roys House) ৷ রাধানগরে অবস্থিত রামমোহন রায়ের পৈতৃক ভিটেটি বছরের পর বছর ধরেই জীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৷ সেই বাড়িটি যাতে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় সেই চিন্তাভাবনা শুরু করেছে রাজ্য সরকার ৷ সেজন্য পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল গত 12 জানুয়ারি রামমোহন রায়ের জন্মভিটের এলাকাটি ঘুরে দেখে গিয়েছে ৷ পৈতৃক বাড়ি ছাড়াও আশেপাশে রামমোহন রায়ের স্মৃতি বিজড়িত জায়গাগুলিও ঘুরে দেখেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ৷
জন্মভিটে ছাড়াও কাছেই রঘুনাথপুরে রামমোহন রায়ের তৈরি আরেকটি বাড়ি রয়েছে ৷ সেই বাড়িটিও পরিদর্শন করে প্রতিনিধিদল ৷ রামমোহন রায়ের বৌদিকে যেখানে সতীদাহ করা হয়েছিল ৷ সেখানে বৌদির স্মৃতিতে একটি সৌধ তৈরি করেছিলেন রাজা রামমোহন রায় ৷ ভারতের নবজাগরণের সূচনায় সতীদাহ প্রথা রোধে রাজা রামমোহন রায়ের অবদানকে সম্মান জানাতেই হেরিটেজের তালিকায় ওই সৌধটিকেও রাখার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের ৷
কিছুদিনের মধ্যে কমিশনের তরফে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করা হবে ৷ সেই রিপোর্ট নিয়ে কমিশনের বৈঠকে আলোচনা হবে ৷ তার পর একটি বিজ্ঞপ্তিতে রামমোহনের জন্মভিটেকে হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে কমিশনকে ৷ সেই বিজ্ঞপ্তি যদি কোনও আপত্তি না আসে, তাহলে এক মাসের মধ্যে রাজা রামমোহন রায়ের পৈতৃক বাড়ি সহ তাঁর স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলিকে হেরিটেজ সাইটের তালিকাভুক্ত করা হবে ৷ উল্লেখ্য, 1916 সালে রামমোহনের ওই জন্মভিটেতে রামমোহন স্মৃতি মন্দির তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা মাথায় রেখেই এই স্মৃতি মন্দিরের নকশা তৈরি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৷
আরও পড়ুন : UNESCO Durga Puja : দুর্গাপুজোকে ইউনেসকোর স্বীকৃতি, ধন্যবাদ জানিয়ে শহরে 'মায়ের জন্য পদযাত্রা'
রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগে খুশি রাজা রামমোহন রায়ের বংশধরেরা ৷ অন্যদিকে, রামমোহন গবেষক ডঃ পরেশচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘শুধু হেরিটেজ ঘোষণায় নয় ৷ সরকারকে রাজা রামমোহন রায়ের মতাদর্শকে চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে ৷ কারণ, আজও সমাজে মহিলারা লাঞ্ছিত ৷ বর্তমানে সতীদাহ প্রথা না থাকলেও, মহিলাদের প্রতি অত্যাচার চলছে ৷ এটা বন্ধ হওয়া জরুরি ৷’’ পাশাপাশি খানাকুলের সঙ্গে রেল সংযোগের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি ৷ খানাকুলের সাধারণ মানুষও রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি ৷ তার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে তাঁরা ৷