বিঘাটি, 11 অগস্ট : হুগলি (Hooghly) থেকে হাওড়ার দিকে যেতে বিঘাটি গ্রাম পঞ্চায়েত (Bighati Gram Panchayet) এলাকায় দিল্লি রোড (Delhi Road)-র দু’পাশে নয়ানজুলি বুজিয়ে কারখানা তৈরির অভিযোগ ৷ যার জেরে প্রায় ছ’টি গ্রামের জমির ফসল জলের তলায় চলে গিয়েছে । নষ্ট হয়েছে সবজি ৷ এমনকি আমন ধান চাষ কোন সম্ভাবনা আর নেই । প্রায় 2 হাজার বিঘার বেশি জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে । বিঘাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের গৌরঙ্গপুর, ধোবাপুকুর, পাটুল, রাঘবপুর, পাড়ালা ও পেয়ারাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন জলমগ্ন । বেশ কিছু বাড়িতে পর্যন্ত জল ঢুকে গেছে । ফলে সমস্যায় পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ ৷
অভিযোগ প্রশাসনিক উদাসীনতায় দিল্লি রোডের দু’পাশে নয়ানজুলি ভরাট করে অবৈধ ভাবে ব্যবসা শুরু করেছে কিছু লোকজন । তার কারণেই ম্যানমেড বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে বৈদ্যবাটি ও সিঙ্গুর বিধানসভার বেশ কিছু অঞ্চলে । ফলে ভোগান্তির মুখে ওই এলাকার চাষী ও সাধারণ মানুষ । আগামী দিনে নয়ানজুলি কেটে নিকাশি না করলে দুই থেকে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও দু’টি পৌরসভা এলাকা আরও বন্যা কবলিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা ৷
বৈদ্যবাটি থেকে হাওড়া পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার জুড়ে দিল্লি রোডের পাশে নয়নজুলি রয়েছে । যার কিছুটা অংশ গঙ্গা ও ডাকাতিয়া খালে মিশেছে । আগের বছর বিঘাটি পঞ্চায়েত ও বৈদ্যবাটির কিছু অংশ সংস্কার করার ব্যবস্থা করা হয় । কিন্তু কারখানার নোংরা আবর্জনা ফেলার ফলে নয়ানজুলির জল গঙ্গায় যাচ্ছে না । উল্টে কারখানা, হোটেল ও রেস্তোরাঁ তৈরির নামে নয়ানজুলি বুজিয়ে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ৷ এ নিয়ে হুগলির জেলাশাসক দীপাপ্রিয়া পি জানান, নয়ানজুলি বুজিয়ে ফেলা নিয়ে রিপোর্ট জমা পড়ার কথা রয়েছে ৷ সেই রিপোর্ট জমা পড়লেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি ।
আরও পড়ুন : ratua flood : গঙ্গা-ফুলহারের জল ঢুকছে মালদার রতুয়ায়, বিপন্ন একাধিক গ্রাম
রাঘবপুর গ্রামের কৃষক সুরজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের 180 বিঘার উপর ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে । পেঁপে, শসা সহ একাধিক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে । বিগত 3 বছর ধরে নয়ানজুলি বুজিয়ে ফেলার কারণে বন্যা হচ্ছে । কোনও নিকাশি ব্যবস্থা নেই এই গ্রামগুলির । দিল্লি রোডের কারখানাগুলো ক্রমশ এগিয়ে আসছে । আর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নিকাশি ব্যবস্থা । জল বসতবাড়ি পর্যন্ত ঢুকে যাচ্ছে । দিল্লি রোডের পাশে কারখানাগুলি জল নিকাশি ব্যবস্থার রেখে যদি কারখানা করত । তাহলে এই সমস্যা সৃষ্টি হত না । ধান পর্যন্ত চাষ করা যাচ্ছে না । এক কোমর করে জল হওয়ায় বীজ তলা নষ্ট হয়ে গেছে । আমরা বিঘাটি পঞ্চায়েতে জানালেও কোন ফল হয়নি । এখনও 15 দিন না গেলে জল নামবে না । আমার পুরো এক বিঘার উপর পেঁপে জমিতেই নষ্ট হয়ে গেছে । 5 বিঘা ধান জমি আছে, সেখানেও দেখতে যেতে পারছি না জলের কারণে । মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুন ৷ না হলে আমাদের প্রাণে মরতে হবে ।"
আরও পড়ুন : Ghatal Flood : ফের বৃষ্টিতে জল বাড়তে শুরু করেছে ঘাটালে
কৃষকদের অভিযোগ সত্যি বলে বিঘাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দীপক পাকিরা জানান, নয়ানজুলি দখল করে বিভিন্ন রকমের কলকারখানা হওয়ার ফলে দীর্ঘদিন ধরেই বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে নয়ানজুলি । পূর্ত দফতর এবং হাইওয়ে অথরিটি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিঘাটি পঞ্চায়েতের প্রধান ৷ জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, নয়নজুলি বজানোর ফলে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে । এর জন্য প্রয়োজন মাস্টারপ্ল্যান । সেচ দফতর, পি ডব্লিউ ডি ও পূর্ত দফতরকে সঙ্গে নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে এর স্থায়ী সমাধান করতে হবে ।