ETV Bharat / state

করোনার ধাক্কায় চন্দননগরের আলোক শিল্পে অন্ধকার - চন্দননগরের আলোক শিল্পে করোনার প্রভাব

করোনা আবহে আলোর শহরে অন্ধকার শিল্পীদের ভবিষ্যৎ ৷ করোনার প্রথম ঢেউ ৷ এবার আবার দ্বিতীয় ঢেউ ৷ বাধ্য হয়ে পেশা বদলাচ্ছেন শিল্পীরা ৷ কারও মুদিখানা দোকান ৷ কেউ বিক্রি করছেন মুরগি ৷ তার উপর টিকাকরণ হয়নি ৷ ফলে দেশের বাইরেও যেতে পারছেন না শিল্পীরা ৷

অন্ধকারে চন্দননগরের আলোক শিল্প
অন্ধকারে চন্দননগরের আলোক শিল্প
author img

By

Published : Jun 18, 2021, 8:40 PM IST

Updated : Jun 18, 2021, 8:51 PM IST

চন্দননগর, 18 জুন : আলোর শহর চন্দননগর ৷ ছোট ছোট রঙিন লাইট ৷ শিল্পীদের হাতের সূক্ষ্ম কাজ বলে যায় কোনও গল্প ৷ কিংবা ফুটে ওঠে বাস্তব কোনও চিত্র ৷ দুর্গাপুজো হোক কিংবা কালীপুজো ৷ আলোর রোশনাইয়ে সেজে ওঠে চন্দননগর ৷ এখানকার জগদ্ধাত্রী পুজোয় তো মূল আকর্ষণ আলোর কাজ ৷ কিন্তু, করোনার কারণে আলোক শিল্পীদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে ৷

করোনার প্রথম ঢেউ ৷ তারপর আবার দ্বিতীয় ঢেউ ৷ ফলে বাধ্য হয়ে পেশা বদলাছেন শিল্পীরা ৷ গতবছরই বেশিরভাগ শিল্পী পেশা পরিবর্তন করেছেন । আর এবছরের করোনা পরিস্থিতিতে অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর ৷ শিল্পীরা প্রায় সবাই বসে গিয়েছেন ৷ চন্দননগরের আলোক শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে 10 হাজার মানুষ যুক্ত । করোনা আবহে সব কিছু শেষ হতে বসেছে । হাতেগোনা কয়েকজন এই শিল্পকে আকঁড়ে ধরে রেখেছেন বটে । কিন্তু অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছেন ৷ চন্দননগর বাগবাজার থেকে বিদ্যালঙ্কা পর্যন্ত আলোক শিল্পের দোকানগুলি গতবছর থেকেই মুদিখানা, মুরগি ও সবজির দোকান হয়ে গিয়েছে ।

চন্দননগরের আলোক শিল্প
চন্দননগরের আলোক শিল্প

আলোক শিল্পীরা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত কোনও পুজো কমিটি এগিয়ে আসেনি । পুজোর বায়না দিতেও কেউ এগিয়ে আসেনি ৷ অন্যান্য বছরে মে মাসে মধ্যে অনেকটাই কাজ হয়ে যায় । কিন্তু এবারে এখনও কেউ আসেনি ৷ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার নিয়ে কোনও মতে কাঁচামালটুকু তাঁরা কিনছেন । তবুও লাভের মুখ দেখার আশা নেই শিল্পী থেকে ব্যবসায়ীদের । ভারতবর্ষের বাইরেও কাজ হয় তাঁদের ৷ কিন্তু, তাও এখন বন্ধ ৷ এই বিষয়ে আলোক শিল্পী অসীম দে বলেন, "পুজো কমিটিগুলি সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে ৷ তাই তারা এগিয়ে আসতে চাইছে না ৷ তার উপর যদি তৃতীয় ঢেউ আসে তাহলে কী হবে কিছু বোঝা যাচ্ছে না ৷ পুরোটাই সরকারি সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে ৷"

আরও একটা চোখ ধাঁধানো অসাধারণ কাজ
আরও একটা চোখ ধাঁধানো অসাধারণ কাজ

আরও পড়ুন, মালদা থেকে দিল্লি, ফলের রাজার রাজকীয় যাত্রা

চন্দননগর আলোক শিল্পীরা জানাচ্ছেন, সারা বছর একশো কোটি টাকার উপর লেনদেন হত । কিন্তু এখন সব বন্ধ । চন্দননগর আলোক শিল্পের অ্যাসোসিয়েশনে একশো জন শিল্পী যুক্ত । আবার এঁদের সঙ্গে যুক্ত আরও 20 থেকে 30 জন শ্রমিক ও শিল্পী । কিন্তু বর্তমানে যে কারখানাগুলি কাজ হচ্ছে, সেখানে তিন থেকে চারজন কাজ করছেন । নামমাত্র কাজ করানো হচ্ছে । তাছাড়া, পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ছে ৷ পরিবহণ ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ৷ তবু করোনা পরবর্তী সময়ের দিকে তাকিয়ে কিছুটা আশায় বুক বাঁধছেন অনেকে । করোনার তৃতীয় ঢেউ এলে আদৌ কী হবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না কেউই । যদি সরকারিভাবে পুজো সহ অন্যান্য উৎসবে ছাড় দেয় তাহলেই চন্দননগরের আলোক শিল্প বাঁচবে । নয়তো করোনা চন্দননগরের আলোক শিল্পকে গ্রাস করবে । সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী স্বপ্নের প্রকল্প আলো হাব স্বপ্নই থেকে যাবে ।

দূর দূর থেকে লোকজন এখানে আলোর কাজ দেখতে আসেন
দূর দূর থেকে লোকজন এখানে আলোর কাজ দেখতে আসেন

বর্তমান সময়ে শিল্পীদের দাবি, দেশ-বিদেশে চন্দননগরের আলো যায় । রাজ্যের বাইরে শিল্পী ও শ্রমিকদের নিয়ে যেতে গেলে বা শ্রমিকদের বাঁচাতে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করুক সরকার। নাহলে শিল্পীদের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পরও মৃত্যু ঘটবে ৷

চন্দননগরে আলোক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বাবু পাল বলেন, "সমস্ত আলোক শিল্পের কাজ রাজ্য-সহ গোটা দেশে হত ৷ সেটা পুরোপুরি বন্ধ । এরপর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পর তৃতীয় ঢেউ এলে আমরা কীভাবে বাঁচব ? সেটাই আমরা বুঝে উঠতে পারছি না । এর পরবর্তীকালে কী পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোব সেটাও বুঝে উঠতে পারছি না । চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো মানুষের কাছে আকর্ষণীয় । সেটাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে । চন্দননগরের আলোক শিল্পের যে ঐতিহ্য সেটাও মনে হয় আর থাকবে না । চন্দননগরের আলো হাবের ব্যাপারে চন্দননগরের বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছিল । আলো হাবের জন্য যে 50 হাজার টাকা শিল্পীদের দিতে হত, সেটা বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনওমতেই সম্ভব নয় ।"

চন্দননগরের আলোর ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে
চন্দননগরের আলোর ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে

আরও পড়ুন, আলোর ব্যবসা অন্ধকারে, আত্মহত্যা করছেন বিষ্ণুপুরের লন্ঠন শিল্পীরা

তিনি আরও জানান, করোনাকালে ভায়া দিল্লি হয়ে চিন থেকে এলইডি ল্যাম্প সহ বিভিন্ন রকম জিনিস আসত । এখন তা পুরোপুরি বন্ধ । তাহলে খরচের ব্যাপারটা অনেকটাই আয়ত্তের মধ্যে থাকত । তাঁর আবেদন, সরকার যেন তাঁদের দিকে নজর দেয় ৷ শিল্পী ও শ্রমিকদের সরকারি তরফে তাদের টিকাকরণের ব্যবস্থা করা হোক । কারণ, আলোকশিল্পী বাইরে যেতে গেলে টিকাকরণের সার্টিফিকেট চাইছে । সেক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের ।

করোনা পরিস্থিতিতে একপ্রকার অন্ধকারে চন্দননগরের আলোক শিল্প

দেশে করোনার আরও একটা ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে ৷ করোনার তৃতীয় ঢেউ এলে আদৌ কী হবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না কেউ । অনেকে বলছেন, ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে ৷ চন্দননগরের আলোর ঐতিহ্য হয়তো হারিয়ে যাবে ৷

চন্দননগর, 18 জুন : আলোর শহর চন্দননগর ৷ ছোট ছোট রঙিন লাইট ৷ শিল্পীদের হাতের সূক্ষ্ম কাজ বলে যায় কোনও গল্প ৷ কিংবা ফুটে ওঠে বাস্তব কোনও চিত্র ৷ দুর্গাপুজো হোক কিংবা কালীপুজো ৷ আলোর রোশনাইয়ে সেজে ওঠে চন্দননগর ৷ এখানকার জগদ্ধাত্রী পুজোয় তো মূল আকর্ষণ আলোর কাজ ৷ কিন্তু, করোনার কারণে আলোক শিল্পীদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে ৷

করোনার প্রথম ঢেউ ৷ তারপর আবার দ্বিতীয় ঢেউ ৷ ফলে বাধ্য হয়ে পেশা বদলাছেন শিল্পীরা ৷ গতবছরই বেশিরভাগ শিল্পী পেশা পরিবর্তন করেছেন । আর এবছরের করোনা পরিস্থিতিতে অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর ৷ শিল্পীরা প্রায় সবাই বসে গিয়েছেন ৷ চন্দননগরের আলোক শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে 10 হাজার মানুষ যুক্ত । করোনা আবহে সব কিছু শেষ হতে বসেছে । হাতেগোনা কয়েকজন এই শিল্পকে আকঁড়ে ধরে রেখেছেন বটে । কিন্তু অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছেন ৷ চন্দননগর বাগবাজার থেকে বিদ্যালঙ্কা পর্যন্ত আলোক শিল্পের দোকানগুলি গতবছর থেকেই মুদিখানা, মুরগি ও সবজির দোকান হয়ে গিয়েছে ।

চন্দননগরের আলোক শিল্প
চন্দননগরের আলোক শিল্প

আলোক শিল্পীরা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত কোনও পুজো কমিটি এগিয়ে আসেনি । পুজোর বায়না দিতেও কেউ এগিয়ে আসেনি ৷ অন্যান্য বছরে মে মাসে মধ্যে অনেকটাই কাজ হয়ে যায় । কিন্তু এবারে এখনও কেউ আসেনি ৷ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার নিয়ে কোনও মতে কাঁচামালটুকু তাঁরা কিনছেন । তবুও লাভের মুখ দেখার আশা নেই শিল্পী থেকে ব্যবসায়ীদের । ভারতবর্ষের বাইরেও কাজ হয় তাঁদের ৷ কিন্তু, তাও এখন বন্ধ ৷ এই বিষয়ে আলোক শিল্পী অসীম দে বলেন, "পুজো কমিটিগুলি সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে ৷ তাই তারা এগিয়ে আসতে চাইছে না ৷ তার উপর যদি তৃতীয় ঢেউ আসে তাহলে কী হবে কিছু বোঝা যাচ্ছে না ৷ পুরোটাই সরকারি সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে ৷"

আরও একটা চোখ ধাঁধানো অসাধারণ কাজ
আরও একটা চোখ ধাঁধানো অসাধারণ কাজ

আরও পড়ুন, মালদা থেকে দিল্লি, ফলের রাজার রাজকীয় যাত্রা

চন্দননগর আলোক শিল্পীরা জানাচ্ছেন, সারা বছর একশো কোটি টাকার উপর লেনদেন হত । কিন্তু এখন সব বন্ধ । চন্দননগর আলোক শিল্পের অ্যাসোসিয়েশনে একশো জন শিল্পী যুক্ত । আবার এঁদের সঙ্গে যুক্ত আরও 20 থেকে 30 জন শ্রমিক ও শিল্পী । কিন্তু বর্তমানে যে কারখানাগুলি কাজ হচ্ছে, সেখানে তিন থেকে চারজন কাজ করছেন । নামমাত্র কাজ করানো হচ্ছে । তাছাড়া, পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ছে ৷ পরিবহণ ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ৷ তবু করোনা পরবর্তী সময়ের দিকে তাকিয়ে কিছুটা আশায় বুক বাঁধছেন অনেকে । করোনার তৃতীয় ঢেউ এলে আদৌ কী হবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না কেউই । যদি সরকারিভাবে পুজো সহ অন্যান্য উৎসবে ছাড় দেয় তাহলেই চন্দননগরের আলোক শিল্প বাঁচবে । নয়তো করোনা চন্দননগরের আলোক শিল্পকে গ্রাস করবে । সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী স্বপ্নের প্রকল্প আলো হাব স্বপ্নই থেকে যাবে ।

দূর দূর থেকে লোকজন এখানে আলোর কাজ দেখতে আসেন
দূর দূর থেকে লোকজন এখানে আলোর কাজ দেখতে আসেন

বর্তমান সময়ে শিল্পীদের দাবি, দেশ-বিদেশে চন্দননগরের আলো যায় । রাজ্যের বাইরে শিল্পী ও শ্রমিকদের নিয়ে যেতে গেলে বা শ্রমিকদের বাঁচাতে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করুক সরকার। নাহলে শিল্পীদের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পরও মৃত্যু ঘটবে ৷

চন্দননগরে আলোক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বাবু পাল বলেন, "সমস্ত আলোক শিল্পের কাজ রাজ্য-সহ গোটা দেশে হত ৷ সেটা পুরোপুরি বন্ধ । এরপর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পর তৃতীয় ঢেউ এলে আমরা কীভাবে বাঁচব ? সেটাই আমরা বুঝে উঠতে পারছি না । এর পরবর্তীকালে কী পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোব সেটাও বুঝে উঠতে পারছি না । চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো মানুষের কাছে আকর্ষণীয় । সেটাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে । চন্দননগরের আলোক শিল্পের যে ঐতিহ্য সেটাও মনে হয় আর থাকবে না । চন্দননগরের আলো হাবের ব্যাপারে চন্দননগরের বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছিল । আলো হাবের জন্য যে 50 হাজার টাকা শিল্পীদের দিতে হত, সেটা বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনওমতেই সম্ভব নয় ।"

চন্দননগরের আলোর ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে
চন্দননগরের আলোর ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে

আরও পড়ুন, আলোর ব্যবসা অন্ধকারে, আত্মহত্যা করছেন বিষ্ণুপুরের লন্ঠন শিল্পীরা

তিনি আরও জানান, করোনাকালে ভায়া দিল্লি হয়ে চিন থেকে এলইডি ল্যাম্প সহ বিভিন্ন রকম জিনিস আসত । এখন তা পুরোপুরি বন্ধ । তাহলে খরচের ব্যাপারটা অনেকটাই আয়ত্তের মধ্যে থাকত । তাঁর আবেদন, সরকার যেন তাঁদের দিকে নজর দেয় ৷ শিল্পী ও শ্রমিকদের সরকারি তরফে তাদের টিকাকরণের ব্যবস্থা করা হোক । কারণ, আলোকশিল্পী বাইরে যেতে গেলে টিকাকরণের সার্টিফিকেট চাইছে । সেক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের ।

করোনা পরিস্থিতিতে একপ্রকার অন্ধকারে চন্দননগরের আলোক শিল্প

দেশে করোনার আরও একটা ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে ৷ করোনার তৃতীয় ঢেউ এলে আদৌ কী হবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না কেউ । অনেকে বলছেন, ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে ৷ চন্দননগরের আলোর ঐতিহ্য হয়তো হারিয়ে যাবে ৷

Last Updated : Jun 18, 2021, 8:51 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.