চন্দননগর, 17 অক্টোবর: দুর্গাপুজোয় চন্দননগরের আলোর নতুন চমক চন্দ্রযান থ্রি । কলকাতার বরানগরে চন্দননগরের শিল্পীদের হাতের জাদুতে মানুষ দেখবে চন্দ্রযান 3-এর গতিবিধির নানা মুহূর্ত ৷
চন্দননগরের আলোর জাদু মন কাড়ে সাধারণ মানুষের । সচল আলোক শিল্পের মোটেই চাহিদা কমেনি । দুর্গাপুজো হোক বা জগদ্ধাত্রী, চন্দননগরের আলোর গুরুত্বই আলাদা । করোনার পর থেকে বাজার মন্দা গেলেও এখানকার আলোকশিল্প ফের ধীরে ধীরে চাঙ্গা হয়েছে । তাই প্রতি বছর চন্দননগরের আলোক শিল্পীরা নতুনত্ব আনেন তাঁদের শিল্পে । গোটা দেশ যখন চন্দ্রযান 3-এর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত, তখন চন্দননগরের আলোকশিল্পীরাও নিজেদের কাজে ফুটিয়ে তুলেছেন ভারতের গৌরব ।
চন্দননগরের শিল্পীরা অ্যানিমেশনের মাধ্যমে ওড়াবেন আলোর চন্দ্রযান । ইসরোর প্রধান কার্যালয়ে রকেট উৎক্ষেপণ থেকে চাঁদে বিক্রমের ল্যান্ডিং - সবকিছুই থ্রিডি মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ৷ চাঁদের মাটিতে কীভাবে রোভার প্রজ্ঞান চলাফেলা করে, সেটাও দেখা যাবে এ বারের দুর্গাপুজোয় । একজন নয়, একাধিক শিল্পী টুডি ও থ্রিডির মাধ্যমে চন্দ্রযান 3-কে মেলে ধরেছেন ৷ এছাড়াও থাকছে আলোর মাধ্যমে ডেঙ্গি সচেতনতার প্রচার । শুধু কলকাতা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে চন্দননগরের আলো ।
চন্দননগরের এক বিখ্যাত আলোকশিল্পী অসীম দে বলেন, ভারতের চন্দ্রযান 3-এর প্রতিলিপি তৈরি করা হয়েছে চন্দননগরের আলোকশিল্পের মাধ্যমে । পিএসএলভি রকেট উড়ছে, চন্দ্রযানের ল্যান্ডিং, রোভারের গতিবিধি ও সোলার প্যানেল খোলা সবই দেখানো হয়েছে । চন্দননগর এখনও তার মেকানিজমের জন্যই বিখ্যাত । কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে চন্দননগরের আলোকশিল্প বিভিন্ন রাজ্যে যে ভাবে বিক্রি হচ্ছে, তার ফলে এখানকার প্রযুক্তি বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে । অন্যান্য জায়গাতেও চন্দননগরের আলোকশিল্পের কাজ হচ্ছে । অ্যানিমেশনের মাধ্যমে যে আলোকসজ্জা, সেটা এখনও রপ্ত করতে পারেননি কেউই । তার কারণেই এখনও চন্দননগরের আলোকশিল্প টিকে আছে । আগামী দিনে নতুন প্রজন্ম চন্দননগরের আলোকশিল্পে আরও নতুনত্ব আনতে না-পারলে, ভবিষ্যতে খুব খারাপ অবস্থায় চলে যাবে চন্দননগরের আলোকশিল্প । চন্দননগরের যে ঐতিহ্য আছে, সেটা হারিয়ে যেতে বসবে ৷ হয়তো দেখা যাবে দেশের কোনও এক শহর সেই ঐতিহ্য দখল করে নিয়েছে । এ বছর চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় বারো পঞ্চানন তলার থিম গ্রিক মাইথলজির কাজ করছেন তিনি । আর দুর্গাপুজোয় বরানগর নওপাড়া দাদাভাই সংঘে চন্দ্রযান 3-এর আলোকসজ্জা হয়েছে তাঁর হাতে ৷
আরও পড়ুন: শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে জনসমুদ্র, যানজটে স্তব্ধ ভিআইপি রোড
চন্দননগর আলোকশিল্পে শিল্পী ও কারিগরের পাশাপাশি এর নেপথ্যে আরেক জনের অবদান অনস্বীকার্য ৷ যাঁরা হাতে বা কম্পিউটারে মাপ করে বিষয়বস্তুর বাস্তবিক রূপ দেন । প্রাথমিক স্তরে অঙ্কন শিল্পীরাই তাঁদের আঁকার মাধ্যমে পরিকল্পনা, মাপ, বিষয়টির পজিশন ও রঙের বিষয়টি তুলে ধরেন । যেটা চন্দননগর আলোকশিল্পে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।
তেমনই এক শিল্পী অভিজিৎ দাস বলেন, "চন্দ্রযান ও ডেঙ্গি সচেতনতা নিয়ে আমাদের কাজ করা হয়েছে । এছাড়াও প্লাস্টিক বর্জন, গাছ লাগানোর মতো সচেতনতার কাজ আলোকশিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ৷ স্ট্রিটলাইটের মাধ্যমে টুডি এবং থ্রিডিতে দেখানো হবে সেই প্ল্যানিং ও মেজারমেন্ট, যা মূলত এখানেই করা হয় । চন্দননগরের বিখ্যাত আলোকশিল্পী ছাড়াও অন্যান্য জায়গার আলোকশিল্পীরও কাজ হচ্ছে এখানে । আলোর সাইজ অনুযায়ী প্রথমে কাগজে আঁকা হয় । সেটাকে কম্পিউটার ও হাতের মাধ্যমে প্রিন্ট করে লাইট লাগানো হয় । মেকানিজমের ক্ষেত্রে এঁকে লোহার ও ফাইবারের স্ট্রাকচার করে লাইট লাগানো হয় । এই কাজ সারা বছর চলে ।"