চুঁচুড়া ও শিলিগুড়ি, 30 জানুয়ারি: অনূর্ধ্ব-19 টি-20 বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারতের মেয়েরা । ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছেন হুগলির তিতাস সাধু। ছোটদের হাত ধরে প্রথমবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতের মেয়েরা । আর সেই জয়ের উচ্ছ্বাস এসে পড়েছে হুগলির চুঁচুড়ায়। অন্যদিকে উইকেটকিপার-ব্যাটার শিলিগুড়ির রিচা ঘোষ ব্যাটিংয়ে সুযোগ না-পেলেও শেফালি বর্মার বলে বেকারকে স্ট্যাম্প আউট করে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়েছেন। আর বিশ্বকাপ জিততেই উচ্ছ্বসিত রিচার পরিবার। সঙ্গে রয়েছেন হাওড়ার হৃষিতা বসুও ৷ ভারতীয় দলকে সেরার শিরোপা এনে দিতে তাঁর অবদানও অনস্বীকার্য ৷ জয়ের পর তাঁদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া নিল ইটিভি ভারত ৷
ভারতের একমাত্র পেস বোলার চুঁচুড়ার তিতাস সাধু। তাঁর অনবদ্য বোলিংয়ের সামনে পোচেস্ট্রুমে গতকাল টিকতেই পারেননি ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। চার ওভার বল করে মাত্র ছ'রান দিয়ে 2 উইকেট নেন তিতাস। 68 রানে অল-আউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। 7 উইকেটে জয়ী হয় উইমেন ইন ব্লু। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের ইতিহাসে গতকাল ছিল সোনালি দিন। এর আগে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল কোনও পর্যায়ে আইসিসির ট্রফি জয়ের স্বাদ পায়নি। একাধিকবার ওডিআই বিশ্বকাপ ও একবার টি-20 বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠলেও ভারতীয় মহিলা সিনিয়র দলকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল রানার্স হয়েই। কিন্তু ছোটরা প্রথম টি-20 বিশ্বকাপ জিতে নয়া ইতিহাস তৈরি করল।
আরও পড়ুন: ছেলেদের ক্রিকেটে খেলিয়ে তিতাসকে তৈরি করিয়েছিলেন কোচ প্রিয়ঙ্কর
গতকালের ম্যান অফ দ্য় ম্যাচ অর্থাৎ চুঁচুড়ার তিতাস টেকনো ইন্ডিয়ায় ক্লাস টুয়েলভ পড়েন। তবে সময়ের কারণে পরীক্ষা দিতে পারছেন না। তাঁর পরিবার চায় আগামিদিনে সিনিয়র টিমে খেলুক মেয়ে তিতাস। তিতাসের বাবা রণদীপ সাধু বলেন, "প্রত্যাশা করেছিলাম মেয়ে ভালো বল করবে, সেই প্রত্যাশা পূরণ হল।" ভারতের জয়ের পর তিনি বলেন, "মেয়ে অত্যন্ত ভালো খেলেছে। প্রথমবারেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। 80 শতাংশ বল যেখানে করা উচিত সেখানেই রেখেছিল। ভারতের খেলোয়াড়রা বল থেকে ব্যাট, ফিল্ডিং সবটাই ভালো করেছে। যার ফলে প্রতিপক্ষের জেতা সম্ভব হয়নি।"
তিনি আরও বলেন, "টুর্নামেন্ট শুরুতে একটু সমস্যা থাকলেও খেলা যত এগিয়েছে ততই ভালো খেলতে থাকে উইমেন ইন ব্লু ব্রিগেড। মেয়েকে বলব জাতীয় দলে খেলার জন্য আরও ভালো প্র্যাকটিস করতে। চাকদা এক্সপ্রেস ঝুলন গোস্বামী অবসর নিয়েছেন, তাঁর জায়গা তিতাস পূরণ করতে পারবে কি না, তা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে ঝুলনের মতো হতে গেলে ম্যাচফিট থাকতে হবে পাশাপাশি দীর্ঘদিন খেলার মানসিকতা রাখতে হবে।" তিতাসের লোকাল কোচ দেবদুলাল রায় চৌধুরী বলেন, "ওর ইচ্ছা শক্তির জোরেই এই সাফল্য ৷ আমরা চাই ও মহিলা সিনিয়র টিমে চান্স পাক।"
অন্যদিকে, গতকাল অনূর্ধ্ব-19 বিশ্বকাপ ফাইনালের শুরু থেকেই প্রতিবেশীদের নিয়ে টেলিভিশনের সামনে ছিলেন শিলিগুড়ির রিচা ঘোষের মা স্বপ্না ঘোষ। বিদেশের মাটিতে মেয়ের বিশ্বজয়ের মুহূর্ত কোনওভাবেই হাতছাড়া করতে চাননি তিনি। খেলা দেখেছেন আদ্যপ্রান্ত। আর জয় পেতেই আনন্দে আত্মহারা তিনি। এখন অপেক্ষা মেয়ের বাড়ি ফেরার। উৎসবের প্রহর গোনা চলছে ঘোষ পরিবারে। মেয়ে বাড়ি ফিরলেই শুরু হবে উৎসব। শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার মেয়ে রিচা ঘোষ। আগেই আইসিসির সিনিয়র দলে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: আত্মপ্রকাশেই চ্যাম্পিয়ন, অনূর্ধ্ব-19 কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে সেরা ভারতের মেয়েরা
বিশ্বকাপে শিলিগুড়ির উইকেট কিপার ব্যাটারের দিকে তাকিয়ে ছিল রাজ্য। আর ফাইনালে ভারত জয় পেতেই উৎসব শুরু হয় ঘোষ পরিবারে। শুরু হয় মিষ্টিমুখও । মা স্বপ্না ঘোষ বলেন, "এর আগে কোনও বিশ্বকাপ জেতেনি ভারতীয় মহিলা দল। এই প্রথম। আর ওই দলে রিচা রয়েছে। আমি সত্যি খুব গর্ব অনুভব করছি। প্রথম থেকেই রিচাকে বলেছিলাম নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য। সেটাই দিয়েছে। এখনও কথা হয়নি। বাড়ি ফিরলে অবশ্যই পার্টি হবে। যা যা খেতে ভালোবাসে সব করে খাওয়াব।"