হুগলি, 21 অক্টোবর: ঘরের ছেলে ভালো আছে, সুস্থ আছে ৷ একথা জানার পরও দুঃস্বপ্নের ঘোর যেন কিছুতেই কাটছে না ! তাড়া করে বেড়াচ্ছে আতঙ্ক ৷ অভাবী সংসারের মেধাবী ছেলে চাকরির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ৷ নিজের হকের লড়াই করতে গিয়ে তিনি যে নিরুদ্দেশ হয়ে যাবেন, একথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি বৃদ্ধা সরস্বতী ৷ এখনও তাই বোনপোর কথা বলতে গেলেই গলা ধরে আসছে তাঁর ৷ বাঁধ মানছে না চোখের জল ৷
সরস্বতী চট্টোপাধ্যায় ৷ হুগলির বৈঁচি গ্রামের বাসিন্দা ৷ তাঁরই বোনপো অর্ণব ঘোষ ৷ 2014 সালে টেট পাশ করেছিলেন অর্ণব ৷ তারপর কেটে গিয়েছে আট বছর ৷ তবু চাকরি জোটেনি ৷ চাকরির দাবিতে অন্য আরও অনেকের সঙ্গেই বিধাননগরের করুণাময়ীতে অবস্থান বিক্ষোভে (TET Agitation) বসেছিলেন অর্ণব ৷ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সেই আন্দোলনস্থলে অভিযান চালায় পুলিশ ৷ তখন থেকেই খোঁজ মিলছিল না তিন আন্দোলনকারীর ৷ এঁরা হলেন অচিন্ত্য সামন্ত, অচিন্ত্য ধারা এবং অর্ণব ঘোষ (Arnab Ghosh) ৷ এই খবর টিভিতে দেখেই অসুস্থ হয়ে পড়েন অর্ণবের মাসি সরস্বতী ৷ ছুটে আসেন তাঁর জামাইবাবু শ্যামসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ চারিদিকে শুরু হয় খোঁজ ৷ অবশেষে শুক্রবার সকালে জানা যায়, অর্ণব ও তাঁর দুই 'নিখোঁজ' সহযোদ্ধা ভালো আছেন ৷
আরও পড়ুন: রাতভর 'নিখোঁজ' থাকার পর সন্ধান মিলল তিন চাকরিপ্রার্থীর
এই ঘটনার পর ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি পৌঁছে গিয়েছিলেন অর্ণবের মাসির বাড়িতে ৷ সরস্বতী জানালেন, অর্ণব তাঁর বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ৷ কিন্তু, ছেলেকে পড়াশোনা করানোর তেমন সামর্থ তাঁদের ছিল না ৷ তাই ছোট থেকেই মাসির কাছে মানুষ হন অর্ণব ৷ বৃদ্ধা জানালেন, বৃহস্পতিবার সকালে শেষবার অর্ণবের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছিল ৷ তারপর রাতেই তাঁর নিখোঁজ হওয়ার কথা জানতে পারেন তিনি ৷ শেষমেশ শুক্রবার সকালে আবার বাড়িতে ফোন করেন অর্ণব ৷ জানান, তাঁরা সকলেই ভালো আছেন ৷ বাড়ির কেউ যেন তাঁদের জন্য দুশ্চিন্তা না করেন ৷
কিন্তু, বললেই তো দুশ্চিন্তা চলে যায় না ৷ শ্য়ালকের লড়াইয়ের কথা বলতে গিয়ে ক্যামেরার সামনেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন অর্ণবের জামাইবাবু ৷ তাঁর আবেদন, সরকার ও প্রশাসন এই আন্দোলনকারীদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হোক ৷ শ্যামসুন্দর মনে করেন অর্ণবদের দাবি ন্যায্য ৷ তাই অবিলম্বে আন্দোলনকারীদের চাকরি পাওয়া উচিত ৷ একই মত অর্ণবের মাসি সরস্বতীরও ৷ প্রসঙ্গত, চাকরি না পেয়ে টিউশনি করেন অর্ণব ৷ সেই টাকাতেই সংসার চলে তাঁর অসুস্থ বাবা-মায়ের ৷
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবারের রাতের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার হুগলিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে বিজেপি ৷ চুঁচুড়া তিন নম্বর গেট থেকে মিছিল করে পিপুলপাতিতে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তির সামনে অবরোধ করে তারা ৷ পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় ৷