আরামবাগ, 7 সেপ্টেম্বর: দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদারহণ গ্রাম বাংলার আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ৷ তেমনই একটি হল আরামবাগের ভালিয়ার সরকার বাড়ির দুর্গাপুজো (Sarkar Bari Durga Puja of Valia) ৷ সাড়ে তিনশো বছর ধরে সপ্তমীতে এই পুজো শুরু হয় নমাজের আজান শুরুর সঙ্গে ৷ আর নমাজ পড়া শেষ হলে শুরু হয় আরতি ৷ আরও বড় বিষয় পুজো শুরু আগেই দুর্গাপুজোর মণ্ডপেই এখানে নমাজ পাঠ করেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা ৷
350 বছর আগে আরামবাগের ভালিয়া এলাকার সরকার বাড়ির দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন জমিদার বাবুরাম সরকার ৷ জানা যায়, তাঁর জমিদারিতে অধিকাংশ প্রজাই ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের ৷ আর বাবুরাম সরকার নিজে ছিলেন প্রগতিশীল ভাবধারার ৷ তাই একে অপরের সংস্কৃতিকে ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন ৷ হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ই মিলেমিশে দুর্গাপুজোর আয়োজন করত (Example of Communal Harmony) ৷ যা একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ চিন্তা করতে পারত না, তা সাড়ে তিনশো বছর আগে করে দেখিয়েছিলেন বাবুরাম সরকার ৷ সেই রীতি আজও বর্তমান ৷
সেই থেকে সপ্তমীর দিন নমাজের আজান শুরু হলে পুজো শুরু হয় সরকার বাড়িতে ৷ আর অষ্টমী, নবমী ও দশমীতে ভোরের প্রথম আজান শেষ হওয়ার পরেই দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন সরকার বাড়ির সদস্যরা ৷ আর পুজো শুরুর আগে মণ্ডপেই নমাজ পড়ার রীতি রয়েছে সরকারদের দুর্গাপুজোয় ৷ গত 30 বছর ধরে পুজো শুরু আগে শেখ মতলেব নামে এক ব্যক্তি মণ্ডপে নমাজ পাঠ করেন ৷ সরকার পরিবার পুরনো সেই সব রীতি আজও পালন করে আসছেন ৷ এ নিয়ে সরকার বাড়ির এক সদস্য জানান, তাঁদের পূর্বপুরুষরা যে সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরি করেছিলেন ৷ সেটাকে বজায় রাখাই বর্তমান প্রজন্মের দায়িত্ব ৷
আরও পড়ুন: নাড়াজোল রাজবাড়ির 610 বছরের দুর্গাপুজো, মায়ের আরাধনায় ব্রাত্য মহিলারাই
সরকারদের পুজোয় আজও বলি প্রথার প্রচলন রয়েছে ৷ সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী, এই তিনদিনই পাঁঠাবলি হয় ৷ এর মধ্যে অষ্টমীর দিন বলি হয় কালো পাঁঠা ৷ এ ছাড়াও পুজোর রীতি মেনে দশমীর দিন চ্যাং মাছ বলি দেওয়া হয় ৷ 108টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে সন্ধিপুজোর আয়োজন করা হয় ৷ আর এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব থাকে পরিবারের মহিলারা ৷ সব মিলিয়ে আরামবাগের ভালিয়া গ্রামে প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন সরকার বাড়ির দুর্গাপুজোতে আজও অটুট সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন ৷