শেওড়াফুলি, 9 মার্চ: তাঁকে নাকি যুবা বয়সের অনুব্রত মণ্ডলের মতো দেখতে (Fish Seller looks like Anubrata Mondal) ! আর সেটাই এখন বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ কেউ বা কারা লুকিয়ে তাঁর ছবি তুলে পোস্ট করে দিয়েছে সোশাল মিডিয়ায় ৷ এখন সেই ছবি ভাইরাল ! সবথেকে বড় কথা হল, অনেকেই দাবি করছেন, এই ছবি নাকি আসলেই অনুব্রত মণ্ডলের তরুণ বয়সের ছবি ! যখন তিনি বাহুবলী নেতা ছিলেন না ৷ ছিলেন একজন সাধারণ মাছ বিক্রেতা ৷ এমন ঘটনায় ঘুম ছুটে গিয়েছে সুকুমার হালদার ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ৷ কারণ, 'যুবা অনুব্রত মণ্ডল' বলে যাঁর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেটি আসলে এই সুকুমারের ৷ হুগলির শেওড়াফুলির বাসিন্দা সুকুমারও একজন মাছ বিক্রেতা !
বৃহস্পতিবার সুকুমারের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ সাংবাদিককে সামনে পেয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন খেটে খাওয়া মাঝবয়সি মানুষটি ৷ জানালেন, তাঁকে যে কিছুটা বীরভূমের কেষ্টর মতো দেখতে, একথা ক্রেতারা অনেকেই বলেন ৷ কেউ কেউ আবার এ নিয়ে ঠাট্টাও করেন ৷ কিন্তু, সুকুমার কোনও দিন সেসব গায়ে মাখেননি ৷ গোল বাধে কিছুদিন আগে থেকে ৷ যখন সোশাল মিডিয়ায় তাঁর ছবিকেই অনুব্রত মণ্ডলের ছবি বলে দেগে দেওয়া হয় ! কে বা কারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন, জানেন না সুকুমার ৷ শুধু জানালেন, তিনি খেটে খাওয়া, অভাবী মানুষ ৷ তাঁর সঙ্গে এমন 'রসিকতা' যাঁরা করেছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া উচিত ৷
ক্ষোভের একই সুর শোনা গিয়েছে সুকুমারের স্ত্রী শুক্লা হালদারের গলাতেও ৷ তিনি জানান, একটা সময় অবস্থা ভালোই ছিল হালদার পরিবারের ৷ তারপর দুর্ঘটনার কবলে পড়েন সুকুমার ৷ তাতে তাঁর একটি পা মারাত্মক জখম হয় ৷ বেশ কয়েকবার সেই পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হয় ৷ চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে হালদার পরিবারের দু'টি বাড়িই বিক্রিই হয়ে যায় ৷ এখন তাঁরা থাকেন ভাড়া বাড়িতে ৷ রোজ সকাল সাতটা থেকে মাছ বিক্রি করতে বসেন সুকুমার ৷ বিকিকিনি চলে দুপুর প্রায় দেড়টা পর্যন্ত ৷ ডান পা মুড়ে বসতে পারেন না সুকুমার ৷ টানা পা লম্বা করে রাখতে হয় ৷ তাতে কষ্ট হয় ৷ কিন্তু, পরিবারের অন্ন সংস্থান করতে মাছ বিক্রি করা ছাড়া আর কোনও উপায় জানা নেই তাঁর ৷
আরও পড়ুন: কেষ্টর গড়ে দলকে উতরে দিতে প্রস্তুত তিনি, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বড় ঘোষণা মদনের
শুক্লাদেবী জানান, অনুব্রত মণ্ডল গরুচুরির অভিযোগে জেলবন্দি ৷ আর তাঁর স্বামী একজন পরিশ্রমী, সৎ মানুষ ৷ এই দু'জনের তুলনা কি আদৌ সম্ভব ! জোর গলায় একই কথা বলেন সুকুমারও ৷ তাঁর বক্তব্য, তিনি কোটিপতি নন ৷ কোটিপতি হওয়ার কোনও ইচ্ছাও নেই তাঁর ৷ তবে, মাথা উঁচু করে বাঁচেন ৷ কারণ, তিনি কোনও মামলার আসামী নন ৷ তাই তাঁর আর্জি, যাঁরা ছবি তুলে এমন নির্মম 'মশকরা' করেছেন, তাঁদের শাস্তি দেওয়া হোক ৷