দাদপুর (হুগলি), 3 নভেম্বর: স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে দেড় কোটি টাকা মুক্তিপণ চেয়ে পরিবারকে ফোন । ঘটনায় 4 দিন পর 5 জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ ৷ উদ্ধার হয়েছে একটি গাড়ি ৷ আগেই উদ্ধার হয়েছেন অপহৃত ব্যবসায়ী। জানা গিয়েছে, 29 অক্টোবর রবিবার বিকাল চারটে নাগাদ একটি স্করপিও গাড়িতে থাকা দুষ্কৃতীরা জোর করে তুলে নিয়ে যায় পুঁইনানের এক সোনা ব্যবসায়ীকে । অপহৃতের নাম দীপঙ্কর দাস । বাড়ি পুঁইনান ঘোলসাড়া গ্রামে ।
বাড়ি থেকে সোনার দোকানে আসার পথে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ওই এলাকার এক ব্যক্তি ফোন করে বিষয়টি জানায় পরিবারকে। এরপর ব্যবসায়ীর স্ত্রী সেখানে পৌঁছে দেখেন হেলমেট ও বাইক পড়ে রয়েছে । পরে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ফোন করে অপহরণকারীরা দেড় কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে । তা না দিলে ব্যবসায়ীকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় দুষ্কৃতীরা ৷
এরপর ব্যবসায়ীর পরিবার স্থানীয় দাদপুর থানায় যোগাযোগ করে বিষয়টি জানায় । হুগলি গ্রামীণ পুলিশ তদন্ত নেমে ফোন ট্র্যাক করা শুরু করে । অপহরণের কারণ খুঁজতে পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে ৷ তাতেই কয়েকটি নাম উঠে আসে । তার মধ্যে তারকেশ্বরের এক সোনা ব্যবসায়ীর নামও ছিল। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ তারকেশ্বর থানার সাহায্যে পুরো অপহরণকারী দলের খোঁজ পায়। রবিবারই গভীর রাতে তারকেশ্বর থানার পুলিশের সাহায্য নেয় ।
আরও পড়ুন : বরাকরের নিখোঁজ যুবকের দেহ মিলল ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলে, অপহরণ করে খুনের অনুমান পুলিশের
পুলিশ গোপনে গিয়ে তারকেশ্বরের আইরাপাড়া গ্রামের শ্মশানের নির্জন মাঠ থেকে দড়ি বাঁধা অবস্থায় ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে । তার কিছুটা দূর থেকে গ্রেফতার হয় মূল অভিযুক্ত সোনা ব্যবসায়ী সিরাজুল হক-সহ চারজন কুখ্যাত দুষ্কৃতী ৷ অপহৃত ব্যবসায়ীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে অপহরণের মামলা রুজু করা হয় । পরে চুঁচুড়া জেলা আদালতে চারজনকে পেশ করা হয় । তাদের পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করে আদালত ।
তদন্ত নেমে আরও কয়েকজন দুষ্কৃতীর এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার হদিশ পায় পুলিশ। এছাড়াও যে স্করপিও গাড়ি করে অপহরণ করা হয়েছিল সেই গাড়ি ও চালকের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে । মূল অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের পর 2 নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে জাঙ্গিপাড়া থানার রাজবলহাট থেকে সাদা স্করপিও গাড়িটিকে আটক করা হয় ৷ গ্রেফতার হয় চালক নয়ন সুর ৷ শুক্রবার তাকে চুঁচুড়া আদালতে পেশ করা হবে ।
এই বিষয়ে হুগলি গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি প্রিয়ব্রত বক্সি বলেন,"অপহরণের মূল অভিযুক্ত সিরাজুল তারকেশ্বর-সহ বেশ কিছু এলাকা থেকে অপরাধীদের নিযুক্ত করে এই কাজে । জিজ্ঞাসাবাদ করে আপাতত জানা যাচ্ছে দীপঙ্করের সঙ্গে টাকার লেনদেন ছিল সিরাজুলের । সেখানে টাকা বাকি ছিল দীপঙ্করের । সেই টাকা আদায়ের জন্যই এই কান্ড ঘটিয়েছে তারকেশ্বরের সোনা ব্যবসায়ী।"যদিও দীপঙ্করের দাবি, তার কাছ থেকে কোনও টাকা পেতেন না সিরাজুল ।
এদিকে, ব্যবসায়ী অপহরণের সঙ্গে সঙ্গেই হুগলি গ্রামীণ পুলিশের দাদপুর থানার ওসি তন্ময় বাগ তড়িঘড়ি তদন্তে নেমে উদ্ধারের কাজ শুরু করেন । গ্রামীণ পুলিশের বিভিন্ন থানার সাহায্যে খুব তাড়াতাড়ি ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে । এখন গাড়ি ও চালক গ্রেফতার হয়েছে । তবে আরও কয়েকজন দুষ্কৃতী এর সঙ্গে যুক্ত আছে বলে অনুমান তদন্তকারী। তাদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে। পুরোপুরি তদন্ত শেষ হলে গোটা বিষয়টি পরিষ্কার হবে ।
আরও পড়ুন : আধার কার্ড আপডেটের নামে বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ, গ্রেফতার 3