ভদ্রেশ্বর, 12 অক্টোবর: কালিকাপুরাণ মতে, আনুমানিক 290 বছর ধরে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে বিঘাটির চক্রবর্তী পরিবারে। এই পরিবারে শাক্তধর্মের সাধকরা মাতৃ আরাধনা করতেন। পরিবার সূত্রে শোনা যায়, মা দুর্গার কাঠামোতে লোহার শিকল বাঁধা থাকে পুজোর পাঁচদিন। কথিত রয়েছে, আগে পুজো চলাকালীন দুর্গা ঠাকুরের কাঠামো কাঁপত। যাতে প্রতিমা পড়ে গিয়ে পুজোয় ব্যাঘাত না-ঘটে সেই কারণেই শিকল লাগানো থাকে। সেই রীতি মেনে আজও শিকল লাগানো থাকে মা দুর্গাকে। এই পুজোয় প্রতিদিন অন্ন ভোগের সঙ্গে তিনদিন বলি প্রথা রয়েছে। তার মধ্যে সন্ধি পুজোয় ছাগবলি প্রচলন রয়েছে । এই পুজোর আরও রীতিনীতি জানতে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি খোঁজ নিলেন ৷
ভদ্রেশ্বর বিঘাটি গ্রামের ধোপাপুকুরে চক্রবর্তীদের প্রথম পুজোর পতন করা হয় আনুমানিক বাংলার 1135 সনে। এখানে সিংহবাহিনী মা দুর্গা অসুরের সঙ্গে লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী ও কার্তিককে নিয়ে এক চালায় অধিষ্ঠিতা। পরিবার সূত্রে শোনা যায়, কোনও এক সময় পরিবারে আর্থিক সংকট নেমে আসে। পুজো বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম হয়। পরে মায়ের আদেশেই কলা গাছের থোর দিয়ে নৈবেদ্য দিয়ে পুজো করা হয়। তাই নবমীর দিন থোরের নৈবেদ্য দিয়ে পুজো করা হয়।
বতর্মান প্রজন্মের এখনও একজন পণ্ডিত নারায়ণ চক্রবর্তীর টোলে সংস্কৃত, ব্যাকরণ ও পৌরহিত্যের পড়াশোনা করান। তিনি বলেন, "আমাদের পূর্বপুরুষরা পণ্ডিত ছিলেন শিক্ষকতা ও পুজো অর্চনা করতেন। নিষ্ঠার সঙ্গে এই পুজো হয়ে আসছে।" পরিবারের এক বয়স্ক সদস্য রাসবিহারী চক্রবর্তী বলেন, "মন্বন্তর সময় পুজো করতে পারছিলেন না পূর্বপুরুষরা। এখানে একচালায় মা দুর্গা ছেলে, মেয়ে নিয়ে অধিষ্ঠিতা রয়েছেন। একসময় পুজোর সময় প্রতিমার কাঠামো কাঁপে। সেই সময় যাতে পড়ে কোনও অঘটন না-হয় তার জন্য পিছন থেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। সেই থেকে এই নিয়ম চলে আসছে। দশমীর দিন বিসর্জনে মা দুর্গাকে দোলায় অর্থাৎ বাঁশে করে নিয়ে যাওয়া হয়।"
আরও পড়ুন: 290 বছরের পুরনো মল্লিক বাড়ির দুর্গাপুজোয় আজও পালকি চড়ে বিসর্জনে যান উমা