চন্দননগর, 18 নভেম্বর: পড়াশুনা করে যে মায়ের মূর্তি গড়ে সে ৷ এমনই এক ধন্যি মেয়ের খোঁজ মিলল চন্দননগরে ৷ তার নাম মৌপিয়া পাল ৷ মাধ্যমিকের ছাত্রী সে ৷ তবে তার আরও একটি পরিচয় রয়েছে ৷ সে একজন শিল্পী ৷ আর কয়েকদিন পরে জগদ্ধাত্রী পুজোয় মেতে উঠবে চন্দননগরবাসী ৷ সেই চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার চক্ষুদান করে চলেছে 16 বছরের মৌপিয়া ৷
ছোট প্রতিমা থেকে সুউচ্চ প্রতিমার অনায়াসেই চোখ আঁকছে এই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী । সে চন্দননগরের কৃষ্ণভাবিনী স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ে । তবে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে তার প্রতিমা তৈরির হাতে খড়ি ৷ তাও বাবা মুক্তি পালের হাত ধরেই । চন্দননগরের 40টি জগদ্ধাত্রী ঠাকুর তৈরি করেন তিনি । এমনকী এলাহাবাদে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করতে যান । সেই সঙ্গে চুঁচুড়ার বাড়িতে সব ধরনের প্রতিমা তৈরির কারখানাও রয়েছে মুক্তি পালের ।
বাবাকে ছোট থেকে মাটির কাজ দেখতে দেখতে বড় হওয়া মৌপিয়ার । আগে মূর্তি তৈরি করলেও লকডাউনের সময় খুব বিপদে পড়তে হয় ৷ হাতে সময় ছিল কম, তার মধ্যে অনেক জগদ্ধাত্রী প্রতিমা তৈরি করতে হয়েছিল মুক্তি পালকে । একা সামলাতে পারছিলেন না তিনি । হিমশিম খাচ্ছিলেন প্রতিমা গড়তে গিয়ে ৷ তখন তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায় মেয়ে ৷ মৌপিয়া চোখ আঁকা শুরু করে প্রতিমার । সেই থেকেই বাবার গড়া জগদ্ধাত্রীর চক্ষুদান হয় এই কিশোরীর হাতে ।
বাবার তৈরি 40টি জগদ্ধাত্রী প্রতিমা মধ্যে দশটিতে চক্ষুদান করেছে মৌপিয়া একাই । একটা প্রতিমার চোখ আঁকতে সময় লাগে তার 2 ঘণ্টা । কিছুদিন আগে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা হয়েছে । তাই এ বছর সেভাবে প্রতিমার কাজ করতে পারেনি সে । তবে পুজো কমিটির অনুরোধ চোখ আঁকতে হবে মৌপিয়াকেই ৷ তাই শিক্ষকদের কাছে সময় চেয়ে নিয়ে এই কটা দিন পড়াশুনার মাঝেই জগদ্ধাত্রীর চোখ আঁকা শুরু করেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী । মেয়েকে এখন কলকাতার আর্ট কলেজে ভরতির স্বপ্ন দেখছে বাবা ৷ একই স্বপ্ন মেয়েরও, ভবিষ্যতে শিল্পী হতে চায় মৌপিয়া ।
সে বলে, "আমি ছোট থেকেই বাবাকে কাজে সাহায্য করি । লকডাউনের সময় থেকেই চোখ আঁকা শুরু করেছি । ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই ঠাকুর তৈরির সঙ্গে যুক্ত আমি । বাবা মূর্তি তৈরি করে সেই সঙ্গে আমিও করি । ঠাকুরের চোখ আঁকতে ভালো লাগে আমার ৷ তাই চোখ আঁকি । প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হত, এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে । পড়াশুনার মাঝেও আমি সময় বার করে এই কাজ করি ৷ ভবিষ্যতে আর্ট কলেজে পড়তে চাই ৷ বাবার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই ৷ সর্বপরী ভালো শিল্পী হতে চাই ৷"
বাবা মুক্তি পালের কথায়, "আমার ছেলের চেয়ে মেয়ে প্রতিমার তৈরি করতে খুব উৎসাহী । ছোট থেকেই আঁকতে ও ঠাকুর তৈরি করতে ভালোবাসে ও । প্রথম লকডাউনে তাড়াতাড়ি কাজের জন্য জগদ্ধাত্রীর চোখ আঁকা শুরু করে মৌপিয়া । এ বছর 10টি প্রতিমার চোখ আঁকছে মেয়ে । চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীর মুখই তো সব ৷ মুখই দেখা যায় ৷ বাকি সাজে ঢাকা পড়ে যায় । মুখেতেই পুরস্কার দেওয়া হয় । আমার ছেলে আছে ৷ তবে সে ঠাকুর তৈরির চেয়ে পড়াশোনায় ব্যস্ত । কিন্তু মেয়ের উৎসাহ আছে । তাই ওর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর ওকে কলকাতার আর্ট কলেজে ভরতি করার চিন্তাভাবনা করছি । তাহলে ওর উন্নতি হবে । ঠাকুর তৈরির সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনাতেও খুব ভালো মেয়ে ।"
আরও পড়ুন: