ETV Bharat / state

'আমি নারী, আমিও পারি;' বাবার গড়া জগদ্ধাত্রী প্রতিমায় চক্ষুদান কিশোরী মেয়ের - 16 year old girl artisan in Chandannagar

Chandannagar Jagadhatri Puja: কে বলে ছেলেরাই বাবার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যায় ৷ তার জলজ্যান্ত উদাহরণ মৌপিয়া পাল ৷ বাবার কাজের বোঝা কম করতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে মূর্তি গড়ায় হাত লাগিয়েছে এই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ৷ আমি নারী, আমিও পারি-এই প্রবাদ বাক্যকে সত্যি করে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার চক্ষুদান করে চলেছে কিশোরী ৷

16 year old girl artisan in Chandannagar
শিল্পী মৌপিয়া পাল
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 18, 2023, 6:22 PM IST

বাবার গড়া জগদ্ধাত্রী প্রতিমায় চক্ষুদান কিশোরী মেয়ের

চন্দননগর, 18 নভেম্বর: পড়াশুনা করে যে মায়ের মূর্তি গড়ে সে ৷ এমনই এক ধন্যি মেয়ের খোঁজ মিলল চন্দননগরে ৷ তার নাম মৌপিয়া পাল ৷ মাধ্যমিকের ছাত্রী সে ৷ তবে তার আরও একটি পরিচয় রয়েছে ৷ সে একজন শিল্পী ৷ আর কয়েকদিন পরে জগদ্ধাত্রী পুজোয় মেতে উঠবে চন্দননগরবাসী ৷ সেই চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার চক্ষুদান করে চলেছে 16 বছরের মৌপিয়া ৷

ছোট প্রতিমা থেকে সুউচ্চ প্রতিমার অনায়াসেই চোখ আঁকছে এই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী । সে চন্দননগরের কৃষ্ণভাবিনী স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ে । তবে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে তার প্রতিমা তৈরির হাতে খড়ি ৷ তাও বাবা মুক্তি পালের হাত ধরেই । চন্দননগরের 40টি জগদ্ধাত্রী ঠাকুর তৈরি করেন তিনি । এমনকী এলাহাবাদে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করতে যান । সেই সঙ্গে চুঁচুড়ার বাড়িতে সব ধরনের প্রতিমা তৈরির কারখানাও রয়েছে মুক্তি পালের ।

16 year old girl artisan in Chandannagar
প্রতিমায় চক্ষুদান করতে ভালো লাগে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর

বাবাকে ছোট থেকে মাটির কাজ দেখতে দেখতে বড় হওয়া মৌপিয়ার । আগে মূর্তি তৈরি করলেও লকডাউনের সময় খুব বিপদে পড়তে হয় ৷ হাতে সময় ছিল কম, তার মধ্যে অনেক জগদ্ধাত্রী প্রতিমা তৈরি করতে হয়েছিল মুক্তি পালকে । একা সামলাতে পারছিলেন না তিনি । হিমশিম খাচ্ছিলেন প্রতিমা গড়তে গিয়ে ৷ তখন তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায় মেয়ে ৷ মৌপিয়া চোখ আঁকা শুরু করে প্রতিমার । সেই থেকেই বাবার গড়া জগদ্ধাত্রীর চক্ষুদান হয় এই কিশোরীর হাতে ।

বাবার তৈরি 40টি জগদ্ধাত্রী প্রতিমা মধ্যে দশটিতে চক্ষুদান করেছে মৌপিয়া একাই । একটা প্রতিমার চোখ আঁকতে সময় লাগে তার 2 ঘণ্টা । কিছুদিন আগে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা হয়েছে । তাই এ বছর সেভাবে প্রতিমার কাজ করতে পারেনি সে । তবে পুজো কমিটির অনুরোধ চোখ আঁকতে হবে মৌপিয়াকেই ৷ তাই শিক্ষকদের কাছে সময় চেয়ে নিয়ে এই কটা দিন পড়াশুনার মাঝেই জগদ্ধাত্রীর চোখ আঁকা শুরু করেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী । মেয়েকে এখন কলকাতার আর্ট কলেজে ভরতির স্বপ্ন দেখছে বাবা ৷ একই স্বপ্ন মেয়েরও, ভবিষ্যতে শিল্পী হতে চায় মৌপিয়া ।

16 year old girl artisan in Chandannagar
পড়াশুনার মাঝেই চলছে তার এই কাজ

সে বলে, "আমি ছোট থেকেই বাবাকে কাজে সাহায্য করি । লকডাউনের সময় থেকেই চোখ আঁকা শুরু করেছি । ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই ঠাকুর তৈরির সঙ্গে যুক্ত আমি । বাবা মূর্তি তৈরি করে সেই সঙ্গে আমিও করি । ঠাকুরের চোখ আঁকতে ভালো লাগে আমার ৷ তাই চোখ আঁকি । প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হত, এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে । পড়াশুনার মাঝেও আমি সময় বার করে এই কাজ করি ৷ ভবিষ্যতে আর্ট কলেজে পড়তে চাই ৷ বাবার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই ৷ সর্বপরী ভালো শিল্পী হতে চাই ৷"

16 year old girl artisan in Chandannagar
দশটি জগদ্ধাত্রী প্রতিমায় চক্ষুদান সেরেছে মৌপিয়া

বাবা মুক্তি পালের কথায়, "আমার ছেলের চেয়ে মেয়ে প্রতিমার তৈরি করতে খুব উৎসাহী । ছোট থেকেই আঁকতে ও ঠাকুর তৈরি করতে ভালোবাসে ও । প্রথম লকডাউনে তাড়াতাড়ি কাজের জন্য জগদ্ধাত্রীর চোখ আঁকা শুরু করে মৌপিয়া । এ বছর 10টি প্রতিমার চোখ আঁকছে মেয়ে । চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীর মুখই তো সব ৷ মুখই দেখা যায় ৷ বাকি সাজে ঢাকা পড়ে যায় । মুখেতেই পুরস্কার দেওয়া হয় । আমার ছেলে আছে ৷ তবে সে ঠাকুর তৈরির চেয়ে পড়াশোনায় ব্যস্ত । কিন্তু মেয়ের উৎসাহ আছে । তাই ওর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর ওকে কলকাতার আর্ট কলেজে ভরতি করার চিন্তাভাবনা করছি । তাহলে ওর উন্নতি হবে । ঠাকুর তৈরির সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনাতেও খুব ভালো মেয়ে ।"

আরও পড়ুন:

  1. নারীর হাতে পূর্ণতা পাচ্ছে ‘মৃন্ময়ী‘
  2. মাকে গড়ছে মেয়ে, কুমোরটুলির সপ্তদশীর হাতে 'প্রাণ' পাচ্ছে দশভূজা
  3. জেলার একমাত্র মহিলা শিল্পী, যার হাতে তৈরি হচ্ছে চিন্ময়ী মায়ের মৃন্ময়ী রূপ

বাবার গড়া জগদ্ধাত্রী প্রতিমায় চক্ষুদান কিশোরী মেয়ের

চন্দননগর, 18 নভেম্বর: পড়াশুনা করে যে মায়ের মূর্তি গড়ে সে ৷ এমনই এক ধন্যি মেয়ের খোঁজ মিলল চন্দননগরে ৷ তার নাম মৌপিয়া পাল ৷ মাধ্যমিকের ছাত্রী সে ৷ তবে তার আরও একটি পরিচয় রয়েছে ৷ সে একজন শিল্পী ৷ আর কয়েকদিন পরে জগদ্ধাত্রী পুজোয় মেতে উঠবে চন্দননগরবাসী ৷ সেই চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার চক্ষুদান করে চলেছে 16 বছরের মৌপিয়া ৷

ছোট প্রতিমা থেকে সুউচ্চ প্রতিমার অনায়াসেই চোখ আঁকছে এই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী । সে চন্দননগরের কৃষ্ণভাবিনী স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ে । তবে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে তার প্রতিমা তৈরির হাতে খড়ি ৷ তাও বাবা মুক্তি পালের হাত ধরেই । চন্দননগরের 40টি জগদ্ধাত্রী ঠাকুর তৈরি করেন তিনি । এমনকী এলাহাবাদে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করতে যান । সেই সঙ্গে চুঁচুড়ার বাড়িতে সব ধরনের প্রতিমা তৈরির কারখানাও রয়েছে মুক্তি পালের ।

16 year old girl artisan in Chandannagar
প্রতিমায় চক্ষুদান করতে ভালো লাগে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর

বাবাকে ছোট থেকে মাটির কাজ দেখতে দেখতে বড় হওয়া মৌপিয়ার । আগে মূর্তি তৈরি করলেও লকডাউনের সময় খুব বিপদে পড়তে হয় ৷ হাতে সময় ছিল কম, তার মধ্যে অনেক জগদ্ধাত্রী প্রতিমা তৈরি করতে হয়েছিল মুক্তি পালকে । একা সামলাতে পারছিলেন না তিনি । হিমশিম খাচ্ছিলেন প্রতিমা গড়তে গিয়ে ৷ তখন তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায় মেয়ে ৷ মৌপিয়া চোখ আঁকা শুরু করে প্রতিমার । সেই থেকেই বাবার গড়া জগদ্ধাত্রীর চক্ষুদান হয় এই কিশোরীর হাতে ।

বাবার তৈরি 40টি জগদ্ধাত্রী প্রতিমা মধ্যে দশটিতে চক্ষুদান করেছে মৌপিয়া একাই । একটা প্রতিমার চোখ আঁকতে সময় লাগে তার 2 ঘণ্টা । কিছুদিন আগে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা হয়েছে । তাই এ বছর সেভাবে প্রতিমার কাজ করতে পারেনি সে । তবে পুজো কমিটির অনুরোধ চোখ আঁকতে হবে মৌপিয়াকেই ৷ তাই শিক্ষকদের কাছে সময় চেয়ে নিয়ে এই কটা দিন পড়াশুনার মাঝেই জগদ্ধাত্রীর চোখ আঁকা শুরু করেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী । মেয়েকে এখন কলকাতার আর্ট কলেজে ভরতির স্বপ্ন দেখছে বাবা ৷ একই স্বপ্ন মেয়েরও, ভবিষ্যতে শিল্পী হতে চায় মৌপিয়া ।

16 year old girl artisan in Chandannagar
পড়াশুনার মাঝেই চলছে তার এই কাজ

সে বলে, "আমি ছোট থেকেই বাবাকে কাজে সাহায্য করি । লকডাউনের সময় থেকেই চোখ আঁকা শুরু করেছি । ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই ঠাকুর তৈরির সঙ্গে যুক্ত আমি । বাবা মূর্তি তৈরি করে সেই সঙ্গে আমিও করি । ঠাকুরের চোখ আঁকতে ভালো লাগে আমার ৷ তাই চোখ আঁকি । প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হত, এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে । পড়াশুনার মাঝেও আমি সময় বার করে এই কাজ করি ৷ ভবিষ্যতে আর্ট কলেজে পড়তে চাই ৷ বাবার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই ৷ সর্বপরী ভালো শিল্পী হতে চাই ৷"

16 year old girl artisan in Chandannagar
দশটি জগদ্ধাত্রী প্রতিমায় চক্ষুদান সেরেছে মৌপিয়া

বাবা মুক্তি পালের কথায়, "আমার ছেলের চেয়ে মেয়ে প্রতিমার তৈরি করতে খুব উৎসাহী । ছোট থেকেই আঁকতে ও ঠাকুর তৈরি করতে ভালোবাসে ও । প্রথম লকডাউনে তাড়াতাড়ি কাজের জন্য জগদ্ধাত্রীর চোখ আঁকা শুরু করে মৌপিয়া । এ বছর 10টি প্রতিমার চোখ আঁকছে মেয়ে । চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীর মুখই তো সব ৷ মুখই দেখা যায় ৷ বাকি সাজে ঢাকা পড়ে যায় । মুখেতেই পুরস্কার দেওয়া হয় । আমার ছেলে আছে ৷ তবে সে ঠাকুর তৈরির চেয়ে পড়াশোনায় ব্যস্ত । কিন্তু মেয়ের উৎসাহ আছে । তাই ওর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর ওকে কলকাতার আর্ট কলেজে ভরতি করার চিন্তাভাবনা করছি । তাহলে ওর উন্নতি হবে । ঠাকুর তৈরির সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনাতেও খুব ভালো মেয়ে ।"

আরও পড়ুন:

  1. নারীর হাতে পূর্ণতা পাচ্ছে ‘মৃন্ময়ী‘
  2. মাকে গড়ছে মেয়ে, কুমোরটুলির সপ্তদশীর হাতে 'প্রাণ' পাচ্ছে দশভূজা
  3. জেলার একমাত্র মহিলা শিল্পী, যার হাতে তৈরি হচ্ছে চিন্ময়ী মায়ের মৃন্ময়ী রূপ
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.