শিলিগুড়ি, 4 মার্চ : খুব অসুস্থ । বুকে ব্যথা । প্রায় মরণ-বাঁচন অবস্থা । ইসিজির প্রয়োজন । কিন্তু, হাসপাতালে তো ইসিজি করার লোকই নেই । তাহলে এই অবস্থায় কী করবেন? না কারও সঙ্গে এমনটা ঘটেনি । কিন্তু ঘটতে কতক্ষণ? যে কেউ এরকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে পারেন । কিন্তু কেন ? সামনেই ভোট । তার উপর করোনার ভ্রুকুটি । এমনিতেই ভোটের সময় করোনার সেকেন্ড ওয়েভের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা । এক্ষেত্রে সংক্রমণ এড়াতে বাড়ানো হচ্ছে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা । দার্জিলিঙেও বেড়েছে কেন্দ্রের সংখ্যা । ভোটের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারি কর্মীদের । বাদ যাচ্ছেন না স্বাস্থ্যকর্মীরাও । আর এখানেই তৈরি হয়েছে সমস্যা । পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী না থাকলে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে । এমনই আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য় আধিকারিক থেকে চিকিৎসকরা ।
দার্জিলিং জেলায় প্রায় 31 হাজার ভোটকর্মী নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন । এর মধ্যে যেমন একদিকে রয়েছে পুলিশ, রয়েছেন সরকারি কর্মীরা । রয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মীরাও । 31 হাজার ভোট কর্মীদের মধ্যে 17 হাজার কর্মী ভোটের সময় প্রথম সারিতে কাজ করবেন । এই 17 হাজারের মধ্যে আবার 14 হাজার ভোট কর্মীরা হলেন স্বাস্থ্যকর্মী । যদিও এর মধ্যে রয়েছে আশা, অঙ্গনওয়ারির মতো স্বাস্থ্য কর্মীরা । যাদের ভোট চলাকালীন করোনার স্বাস্থ্যবিধির জন্য ব্যবহার করা হবে । কিন্তু, মোট স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে 9 হাজার 857 জন স্বাস্থ্যকর্মীরাই জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে সরাসরি জরুরিকালীন চিকিৎসা এবং রোগী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন । হাসপাতালের কর্মীদের ভোট প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হলে রোগী পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকরা ।
উত্তরের স্বাস্থ্য পরিষেবার মূল কেন্দ্র উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল । ওই দুই হাসপাতালে এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ীকর্মীর অভাব রয়েছে । হাতে গোনা কয়েকজন স্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীকে নিয়ে চুক্তিভিত্তিক এবং দৈনিক মজুরি হিসেবে কর্মী নিয়োগ করে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । কিন্তু, এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের জন্য স্থায়ী কর্মীদের ডেকে পাঠানোয় একপ্রকার মাথায় হাত পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে 14 জন এবং উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে 110 জন স্থায়ী কর্মীকে ভোটের জন্য ব্যবহার করা হবে । ইতিমধ্যে তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে । জেলা হাসপাতালের 14 জনের মধ্যে 6 জন অত্যন্ত জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত । তাঁদের মধ্যে 4জনকে ছাড় দেওয়ার আবেদন নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের 110 জনের মধ্যে 23 জন গ্রুপ-বি এবং 44 জন সরাসরি জরুরিকালীন রোগী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন । পরিস্থিতি সামাল দিতে 51 জন স্বাস্থ্যকর্মীকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে ছাড় দেওয়ার আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ।
আরও পড়ুন, পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে সুদীপ জৈনের অপসারণ চাইল তৃণমূল
উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, " এমনিতেই হাসপাতালে স্থায়ীকর্মীর সংখ্যা খুবই নগণ্য । চুক্তিভিত্তিক এবং দৈনিক মজুরিতে কর্মী নিয়োগ করে হাসপাতালে পরিষেবা চালানো হচ্ছে । প্রায় শতাধিক স্থায়ীকর্মীকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য ব্যবহার করা হলে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হবে । সেজন্য আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে 51 জনকে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে লিখিত আবেদন জানিয়েছি।"
উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের ডিন তথা চিকিৎসক সন্দীপ সেনগুপ্তের মুখেও একই কথা । বলেন, " আমাদের নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন থাকবে যাতে যে সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী জরুরিকালীন পরিষেবার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, তাদের যেন ছাড় দেওয়া হয় ।"
আরও পড়ুন, ‘বাংলার আসল বাঘিনী’-র পাশে শিবসেনা, লাভ হবে কি মমতার ?
উত্তরবঙ্গের রিজিওনাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টারের আধিকারিক মৃদুময় দাস বলেন, " উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কে 12 জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে । তার মধ্যে ছয়জনকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন । আমরা কয়েকজনকে নির্বাচন কমিশনের কাছে ছাড় দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি । করোনা আবহে যেভাবে ভোট প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে ব্যবহার করছে তাতে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে ।"
স্বাস্থ্যকর্মীদের ছাড় দেওয়ার আবেদনের বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি জেলার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠী । তিনি বলেন, "আমার কাছে এখনও পর্যন্ত কোনও আবেদন আসেনি । আবেদন আসলে অবশ্যই বিবেচনা করে দেখা হবে ।"