ETV Bharat / state

বাজারে চাহিদা থাকলেও জোগান নেই, ক্ষতির আশঙ্কা উত্তরবঙ্গের চা শিল্পে

লকডাউনের জেরে প্রথম মরশুমে চা তোলা যায়নি ৷ দ্বিতীয় মরশুমে বাগানে কাজ হলেও উৎপাদিত চা বাজারে নিয়ে যেতে নানা সমস্যা হচ্ছে ৷ ফলে শ্রমিকদের মজুরি-সহ নানা খরচ বাড়ছে ৷ কোরোনার জেরে এবার চা শিল্পে সব মিলিয়ে দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চা উৎপাদকরা ৷

চা বাগান
চা বাগান
author img

By

Published : Jul 18, 2020, 9:52 PM IST

শিলিগুড়ি, 18 জুলাই : বাজারে ভালো চাহিদা থাকলেও জোগান নেই ৷ তাই ক্ষতির মুখে চা শিল্প ৷ বাজারে এই মুহূর্তে নিলামে চায়ের দাম গত বছরের তুলনায় বেশ কিছুটা ভালো রয়েছে ৷ কিন্তু, একদিকে যেমন ভালো চায়ের জোগান কম, তেমনই বড় হোটেল-সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চায়ের ব্যবহার কিছুটা হলেও কমেছে ৷ এছাড়া, লকডাউনের জেরে প্রথম মরশুমে চা তোলা যায়নি ৷ দ্বিতীয় মরশুমে বাগানে কাজ হলেও উৎপাদিত চা বাজারে নিয়ে যেতে নানা সমস্যা হচ্ছে ৷ ফলে শ্রমিকদের মজুরি-সহ নানা খরচ বাড়ছে ৷ এই পরিস্থিতিতে আপাতত চায়ের দাম কিছুটা বেশি পেলেও বছরের শেষে তুল্যমূল্য বিচারে ক্ষতির সম্ভাবনাই প্রবল ৷

দার্জিলিং, তরাই ও ডুয়ার্সের মূল অর্থনীতি চা শিল্প ৷ তবে, 2017 সালে একবার ক্ষতির মুখে পড়েছিল চা উৎপাদন ও কেনাবেচা ৷ তখন গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের সময় প্রায় তিন মাস বন্ধ থেকেছে চা বাগানগুলি ৷ তারপর একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল শিল্পটি ৷ কিন্তু, বিপদ হিসেবে এবার হাজির কোরোনা সংক্রমণ ৷ এর জেরে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের ৷ প্রথম মরশুম চলে গেলেও দ্বিতীয় মরশুমে চা পাতা তোলার কাজ চলছে ৷ কিন্তু, লকডাউনের জেরে চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য দু'টোই নষ্ট হচ্ছে ৷ কোরোনার জেরে এবার চা শিল্পে সব মিলিয়ে দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চা উৎপাদকরা ৷

চা পাতা
চা পাতা

দার্জিলিঙের একটি চা বাগানের তরফে ঋষি সরিয়া বলেন, "পাহাড়ের চায়ের ক্ষেত্রে বাগানগুলিকে লাভের মুখ দেখাত প্রথম মরশুমের চা ৷ যা লকডাউনের জেরে তোলাই হয়নি ৷ দ্বিতীয় মরশুমে চা পাতা তোলা হলেও বাজার নেই ৷ দেশের অভ্যন্তরে অফিস, রেস্তরাঁ, হোটেল বন্ধ থাকায় চায়ের ব্যবহারও কমেছে ৷ ফলে ক্রেতার অভাব রয়েছে ৷ তবে, যেহেতু প্রথম মরশুমের চা মেলেনি, তাই ভালো চায়ের কিছুটা বাজার আছে ৷ কিন্তু একটু কম গুণগত মানের চায়ের বাজার এবার তলানিতে ৷" চা বিক্রেতা রাজীব লোচন বলেন, "লকডাউন চলাকালীন চা পাতা তৈরি করা এবং তার বিক্রি বন্ধ থাকলেও বাগানগুলোতে শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করা-সহ অন্য বেশ কিছু খরচ কমেনি । সামনে পুজো রয়েছে । পুজোর সময় তিন লাখ চা শ্রমিকদের বোনাস দিতে হবে । ফলে চা বাগানগুলোর উপর বড় আর্থিক বোঝা চাপবে । তাই প্রাথমিকভাবে ভালো চা নিলামে ওঠার পর গতবারের তুলনায় বেশ কিছুটা ভালো দাম মিললেও সব মিলিয়ে বিচার করলে তাতে লাভের মুখ দেখবে না বাগানগুলি ।"

চা কারখানায় চলছে কাজ
চা কারখানায় চলছে কাজ

শিলিগুড়িতে চা নিলাম কেন্দ্রের তরফে সহ-সভাপতি প্রবীর শীল জানান, "পাহাড়ের প্রায় 100টি বাগান এবং তরাই ও ডুয়ার্স এলাকার 300টি বাগানে চা উৎপাদন হয় । ভালো চা নির্ভর করে তা তোলার সময় এবং গুণগত মানের উপর । লকডাউন চলাকালীন বেশ কিছুটা সময় বাগানগুলিতে চা উৎপাদন এবং বাগান পরিচর্যার কাজ বন্ধই ছিল । ফলে বাজারে ভালো চায়ের অভাব রয়েছে । যেসব বাগান উন্নত মানের চা তৈরি করছে তারা ভালো দাম পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার পরিমাণ অত্যন্ত কম । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে চা বাজারে আসছে তার গুণগত মান ততটা উন্নত মানের নয় । ফলে শুধুমাত্র নিলামে উন্নত মানের চায়ের দাম কিছুটা বেড়েছে বলেই সব মিলিয়ে বছর শেষে চা বাগানে লাভ হবে এমনটা বলার সময় আসেনি । বরং আমরা আশঙ্কা করছি গড়ে দুই হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির বোঝা চাপবে চা বাগানগুলি ঘাড়ে । এই পরিস্থিতিতে আমরা চাইছি চা শিল্পে উৎপাদন এবং চা বিপণনের ক্ষেত্রে টি বোর্ড আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করুক ।" চা বিক্রেতাদের দাবি, সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতির জেরে পাহাড় এবং সমতলের উত্তরবঙ্গের বাগানগুলিতে 130-150 মিলিয়ন কিলোগ্রাম চা কম উৎপাদন হয়েছে ।

ক্ষতির আশঙ্কা উত্তরবঙ্গের চা শিল্পে

হিসেব বলছে, 2019 আর্থিক বছরে চায়ের মোট উৎপাদন ছিল 1,400 মিলিয়ন কিলোগ্রাম । কিন্তু চলতি বছরে 22 মার্চ থেকে লকডাউনের জেরে গুণগত মানের চা পাতা তোলা যায়নি । অভাব রয়েছে উন্নত মানের চায়ের । ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুজিত পাত্র জানান, চা পাতা তোলার মরশুম হল এই সময়টিই । এই সময় বাগানগুলো নানা সমস্যার জেরে সঠিকভাবে উৎপাদন করে উঠতে পারেনি । ফলে সঠিক কী অবস্থা দাঁড়াবে তার বিশ্লেষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রকের পাশাপাশি টি বোর্ডকে রিপোর্ট পাঠানো হবে । আপাতত সেই তথ্য সংগ্রহের কাজ চালানো হচ্ছে ।

শিলিগুড়ি, 18 জুলাই : বাজারে ভালো চাহিদা থাকলেও জোগান নেই ৷ তাই ক্ষতির মুখে চা শিল্প ৷ বাজারে এই মুহূর্তে নিলামে চায়ের দাম গত বছরের তুলনায় বেশ কিছুটা ভালো রয়েছে ৷ কিন্তু, একদিকে যেমন ভালো চায়ের জোগান কম, তেমনই বড় হোটেল-সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চায়ের ব্যবহার কিছুটা হলেও কমেছে ৷ এছাড়া, লকডাউনের জেরে প্রথম মরশুমে চা তোলা যায়নি ৷ দ্বিতীয় মরশুমে বাগানে কাজ হলেও উৎপাদিত চা বাজারে নিয়ে যেতে নানা সমস্যা হচ্ছে ৷ ফলে শ্রমিকদের মজুরি-সহ নানা খরচ বাড়ছে ৷ এই পরিস্থিতিতে আপাতত চায়ের দাম কিছুটা বেশি পেলেও বছরের শেষে তুল্যমূল্য বিচারে ক্ষতির সম্ভাবনাই প্রবল ৷

দার্জিলিং, তরাই ও ডুয়ার্সের মূল অর্থনীতি চা শিল্প ৷ তবে, 2017 সালে একবার ক্ষতির মুখে পড়েছিল চা উৎপাদন ও কেনাবেচা ৷ তখন গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের সময় প্রায় তিন মাস বন্ধ থেকেছে চা বাগানগুলি ৷ তারপর একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল শিল্পটি ৷ কিন্তু, বিপদ হিসেবে এবার হাজির কোরোনা সংক্রমণ ৷ এর জেরে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের ৷ প্রথম মরশুম চলে গেলেও দ্বিতীয় মরশুমে চা পাতা তোলার কাজ চলছে ৷ কিন্তু, লকডাউনের জেরে চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য দু'টোই নষ্ট হচ্ছে ৷ কোরোনার জেরে এবার চা শিল্পে সব মিলিয়ে দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চা উৎপাদকরা ৷

চা পাতা
চা পাতা

দার্জিলিঙের একটি চা বাগানের তরফে ঋষি সরিয়া বলেন, "পাহাড়ের চায়ের ক্ষেত্রে বাগানগুলিকে লাভের মুখ দেখাত প্রথম মরশুমের চা ৷ যা লকডাউনের জেরে তোলাই হয়নি ৷ দ্বিতীয় মরশুমে চা পাতা তোলা হলেও বাজার নেই ৷ দেশের অভ্যন্তরে অফিস, রেস্তরাঁ, হোটেল বন্ধ থাকায় চায়ের ব্যবহারও কমেছে ৷ ফলে ক্রেতার অভাব রয়েছে ৷ তবে, যেহেতু প্রথম মরশুমের চা মেলেনি, তাই ভালো চায়ের কিছুটা বাজার আছে ৷ কিন্তু একটু কম গুণগত মানের চায়ের বাজার এবার তলানিতে ৷" চা বিক্রেতা রাজীব লোচন বলেন, "লকডাউন চলাকালীন চা পাতা তৈরি করা এবং তার বিক্রি বন্ধ থাকলেও বাগানগুলোতে শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করা-সহ অন্য বেশ কিছু খরচ কমেনি । সামনে পুজো রয়েছে । পুজোর সময় তিন লাখ চা শ্রমিকদের বোনাস দিতে হবে । ফলে চা বাগানগুলোর উপর বড় আর্থিক বোঝা চাপবে । তাই প্রাথমিকভাবে ভালো চা নিলামে ওঠার পর গতবারের তুলনায় বেশ কিছুটা ভালো দাম মিললেও সব মিলিয়ে বিচার করলে তাতে লাভের মুখ দেখবে না বাগানগুলি ।"

চা কারখানায় চলছে কাজ
চা কারখানায় চলছে কাজ

শিলিগুড়িতে চা নিলাম কেন্দ্রের তরফে সহ-সভাপতি প্রবীর শীল জানান, "পাহাড়ের প্রায় 100টি বাগান এবং তরাই ও ডুয়ার্স এলাকার 300টি বাগানে চা উৎপাদন হয় । ভালো চা নির্ভর করে তা তোলার সময় এবং গুণগত মানের উপর । লকডাউন চলাকালীন বেশ কিছুটা সময় বাগানগুলিতে চা উৎপাদন এবং বাগান পরিচর্যার কাজ বন্ধই ছিল । ফলে বাজারে ভালো চায়ের অভাব রয়েছে । যেসব বাগান উন্নত মানের চা তৈরি করছে তারা ভালো দাম পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার পরিমাণ অত্যন্ত কম । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে চা বাজারে আসছে তার গুণগত মান ততটা উন্নত মানের নয় । ফলে শুধুমাত্র নিলামে উন্নত মানের চায়ের দাম কিছুটা বেড়েছে বলেই সব মিলিয়ে বছর শেষে চা বাগানে লাভ হবে এমনটা বলার সময় আসেনি । বরং আমরা আশঙ্কা করছি গড়ে দুই হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির বোঝা চাপবে চা বাগানগুলি ঘাড়ে । এই পরিস্থিতিতে আমরা চাইছি চা শিল্পে উৎপাদন এবং চা বিপণনের ক্ষেত্রে টি বোর্ড আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করুক ।" চা বিক্রেতাদের দাবি, সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতির জেরে পাহাড় এবং সমতলের উত্তরবঙ্গের বাগানগুলিতে 130-150 মিলিয়ন কিলোগ্রাম চা কম উৎপাদন হয়েছে ।

ক্ষতির আশঙ্কা উত্তরবঙ্গের চা শিল্পে

হিসেব বলছে, 2019 আর্থিক বছরে চায়ের মোট উৎপাদন ছিল 1,400 মিলিয়ন কিলোগ্রাম । কিন্তু চলতি বছরে 22 মার্চ থেকে লকডাউনের জেরে গুণগত মানের চা পাতা তোলা যায়নি । অভাব রয়েছে উন্নত মানের চায়ের । ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুজিত পাত্র জানান, চা পাতা তোলার মরশুম হল এই সময়টিই । এই সময় বাগানগুলো নানা সমস্যার জেরে সঠিকভাবে উৎপাদন করে উঠতে পারেনি । ফলে সঠিক কী অবস্থা দাঁড়াবে তার বিশ্লেষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রকের পাশাপাশি টি বোর্ডকে রিপোর্ট পাঠানো হবে । আপাতত সেই তথ্য সংগ্রহের কাজ চালানো হচ্ছে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.