দার্জিলিং, 2 মার্চ: রাজ্যের চা বাগান শ্রমিকদের চা সুন্দরী ও গীতাঞ্জলি আবাস যোজনার নামে শ্রমিকদের বাস্তবে জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই অভিযোগ তুললেন বিশিষ্ট সমাজসেবী অনুরাধা তলোয়ার-সহ চা বাগান শ্রমিকের একাংশ। রাজ্যে 19টি চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিকদের চা সুন্দরী আবাস যোজনার মাধ্যমে বিনামূল্যে বাড়ি তৈরি করার কাজ শুরু করেছে রাজ্যের শ্রম দফতর। উত্তরবঙ্গে শ্রম দফতরের আর্থিক সহযোগিতায় সেই কাজ করছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর (North Bengal Development Department) । কিন্তু অভিযোগ, চা সুন্দরী হোক কিংবা গীতাঞ্জলি আবাস যোজনা, তার মাধ্যমে চা শ্রমিকদের চা বাগান এলাকা থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সেখানে তাঁদের পাট্টার বদলে সাময়িক জমির অধিকার দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে ইতিমধ্যে একটি রিপোর্ট তৈরি করে আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ চা বাগান শ্রমিক সমিতি। এই বিষয়ে অনুরাধা তলোয়ার বলেন, "চা সুন্দরী প্রকল্পের সুবিধা খালি স্থায়ী শ্রমিকরা পাচ্ছে। বিপুল পরিমাণ অস্থায়ী শ্রমিকরা আবাস যোজনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। চা বাগান শ্রমিকরা আগে যেখানে থাকত সেটার সঙ্গে তাদের রীতি ও সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে। সেখান থেকে তাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেখানে তাদের প্রকল্পের অধীনে ঘর দেওয়া হচ্ছে সেটা অনেকটা দূরে।"
তিনি জানান, আর জমির পরিমাণও অনেকটা কম। বংশ পরম্পরায় তারা সেখানে বাস করত। সেখান থেকে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মুজনাই চা বাগানের শ্রমিক বিকাশ ওরাঁও বলেন, "আগে আমরা যেখানে বাস করতাম সেখানে চা পাতা তোলার পাশাপাশি সেখানে পশুপালন বা কৃষিকাজ করতে পারতাম। কিন্তু চা সুন্দরী প্রকল্পর নামে আমাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেখানে জমির পরিমাণ এতটাই কম যে সেখানে পশুপালন বা কৃষিকাজ তো দূরের কথা একটা লঙ্কার চারা পর্যন্ত লাগানো যাবে না।"
আরও পড়ুন: তরাই-ডুয়ার্সের চা শ্রমিকরা পুজো বোনাস পাবেন 20% হারে
তাঁর কথায়, "এতে আর্থিকভাবে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে শ্রমিকরা। পাশাপাশি যে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে সেটার গুণগতমানও অনেকটা খারাপ। সেইসব ঘরে একটা পরিবার থাকতে পারার যোগ্য নয়।" জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের নয়টি চা বাগানে চা সুন্দরী প্রকল্প'র কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। প্রায় পাঁচ হাজার চা বাগান শ্রমিকদের ওই প্রকল্পের আওতায় এনে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। প্রকল্প বাবদ মাথাপিছু প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে রাজ্যের তরফে।