Iশিলিগুড়ি, 29 জুন : নৃশংসভাবে সন্তান সহ দম্পতি খুনের ঘটনায় তিনজনকে ফাঁসির সাজা শোনাল শিলিগুড়ি আদালত । নাম সহদেব বর্মণ, দীপু সূত্রধর ও চিরঞ্জিত মোদক । এই প্রথম শিলিগুড়ি আদালত কোনও দোষীকে ফাঁসির নির্দেশ দিল । আদালতের রায়ে খুশি নিহত দম্পতির মেয়ে রেশমি বর্ধন ।
শিবমন্দিরের লেলিনপুরের বাসিন্দা প্রদীপ বর্ধনের নির্মীয়মাণ বাড়িতে 2015-র জুলাইয়ের শেষের দিকে কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কাজ করেছিল সহদেব, দীপু ও চিরঞ্জিত । সেই সূত্রে ওই বছরের 14 সেপ্টেম্বর রাতে ডাকাতির উদ্দেশ্যে প্রদীপ বর্ধনের বাড়িতে যায় তারা । ডাকাতির পর বাড়ির দোতলায় প্রথমে প্রদীপ বর্ধনকে দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে । একইসঙ্গে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে । তারপর তাঁর দেহে রং ঢেলে দেয় । এরপর নিচে নামে । টার্গেট করে প্রদীপ বর্ধনের স্ত্রী দিপ্তী বর্ধনকে । তাকেও একইভাবে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় । সেইসময় বাড়িতে ছিল বর্ধন দম্পতির ছেলে প্রসেনজিৎ । তাকেও বিছানার চাদর দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় । এছাড়াও, মাথা সহ শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাত করা হয় ।
প্রদীপবাবুর বাড়িতে সেইসময় রঙের কাজ চলছিল । ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ 15 সেপ্টেম্বর রংমিস্ত্রিরা এসে দেখে দরজা খোলা । ভিতরে গিয়ে দেখে, ঘরে পড়ে আছে বর্ধন দম্পতি ও তাঁদের ছেলের নিথর দেহ । খবর দেওয়া হয় পুলিশে । খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছায় বর্ধন দম্পতির বিবাহিতা মেয়ে রেশমি বর্ধন । তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে বর্ধন দম্পতি ও তাঁদের ছেলের মোবাইল ফোন ঘটনাস্থানে নেই । এরপর ওই মোবাইল ফোনগুলির IMEI নম্বর ট্র্যাক করে পুলিশ । 15 সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পুলিশের কাছে মোবাইলের ট্র্যাকিং রিপোর্ট আসে । সেই রিপোর্ট অনুযায়ী ওই মোবাইলে 14 তারিখ রাতে ও 15 তারিখ ভোরে কিছু অ্যাক্টিভিটি দেখা গেছে । IMEI নম্বরের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে মোবাইলটি প্রদীপ বর্ধনের । এরপর পুলিশ জানতে পারে মোবাইলটি ব্যবহার করছে সহদেব বর্মণ নামে এক ব্যক্তি । 17 সেপ্টেম্বর সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । সহদেব বর্মণের সূত্র ধরে খোঁজ মেলে দীপু সূত্রধর ও চিরঞ্জিত মোদকের ।
মামলাকারীর আইনজীবী পীযূষকান্তি ঘোষ জানান, মঙ্গলবার ধৃত তিনজনকে দোষীসাব্যস্ত করেছিল বিচারক । আজ এই ঘটনাকে বিরল থেকে বিরলতম বলে ঘোষণা করে দোষীদের ফাঁসির সাজা শোনান শিলিগুড়ি আদালতের বিচারক । যদিও এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানান বিবাদীপক্ষের আইনজীবী চন্দন দে ।
প্রদীপ বর্ধনের মেয়ে রেশমি বর্ধন বলেন, "শুরু থেকেই দোষীদের মৃত্যুদণ্ড কামনা করেছিলাম । আদালত আজ সেই রায় দিল । আমি খুব খুশি ।"