দার্জিলিং, 22 জুন : দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা তৈরি না হওয়ায় এবার ভোট বয়কটের ডাক গ্রামবাসীদের (Vote Boycott in Kurseong) । যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রশাসন রাস্তা তৈরি করে না দিচ্ছে ততদিন কোনওরকম নির্বাচনে ভোট দেবে না গ্রামবাসীরা । আর এমনটাই জানিয়ে এবার গ্রামের বাইরে পোস্টার লাগালো গ্রামবাসীরাই । শুধু তাই নয়, রাস্তা তৈরির আগে কোনওরকম প্রতিশ্রুতি নিয়ে যেন কেউ গ্রামে না ঢোকে সেই হুঁশিয়ারিও দিয়েছে গ্রামবাসীরা ।
26 জুন জিটিএ (গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল এডমিনিস্ট্রেশন) নির্বাচন । আর তার আগেই আস্ত একটা গ্রাম ভোট বয়কটের ডাক দিল । গ্রামের বাইরে মূল সেই বেহাল রাস্তার উপর বাঁশের বড় গেট বানিয়ে তাতে নো রোড, নো ভোটের ব্যানার লাগালো গ্রামবাসীরা । আর তাদের পোস্টারের মাধ্যমে দাবিকে ঘিরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর তৈরি হয়েছে ।
আরও পড়ুন : Elders Protest in Asansol : রাস্তা খারাপ, প্রতিবাদে রাস্তায় চেয়ার পেতে গল্পে মাতলেন প্রবীণরা
কার্শিয়াং মহকুমা এলাকার লোয়ার বড় সিটং রয়েছে । গ্রামের যাওয়ার একমাত্র মূল রাস্তা কয়েক দশক ধরে বেহাল । প্রশাসনের কাছে একাধিকবার ওই রাস্তা নির্মাণের দাবি জানালেও কাজ হয়নি । উলটে প্রত্যেক নির্বাচনের আগে মিলেছে খালি প্রতিশ্রুতির বন্যা । অভিযোগ, গ্রামবাসীদের বোকা বানানো হয়েছে এতদিন । বড় সিটংয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আরও তিনটি পাহাড়ি গ্রাম । যাতায়াতের একমাত্র সম্বল সেই রাস্তা । কিন্তু ওই মূল রাস্তা দিয়ে নিত্যযাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই । রাস্তার অবস্থা এতটাই বেহাল যে গাড়ি তো দূর, সাইকেল পর্যন্ত চালানো যায় না । রাস্তা তৈরি না হওয়ায় অগ্যতা পায়ে হেঁটেই যাবতীয় কাজে যাওয়া থেকে বাজার হাট এমনকী বাড়ি তৈরির জন্য ইট, বালি, পাথর পর্যন্ত কাঁধে বয়ে নিয়ে যেতে হয় ।
এদিকে ওই গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যেতে প্রতিদিন অন্তত দু থেকে আড়াই ঘণ্টা টানা হাঁটতে হয় । আর ওই রাস্তা না হওয়ার কারণে চরম সমস্যায় সেই পাহাড়ি গ্রামের মানুষেরা । রাস্তাই এখন ওই গ্রামের একমাত্র আর্থ সামাজিক উন্নয়নের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে । নাসপাতি গাঁও থেকে লোয়ার বাড় সিটং পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় চার কিলোমিটার । সড়কটি নির্মাণ হলে এলাকার প্রায় শতাধিক বাড়িঘর উপকৃত হবে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন ।
স্থানীয়দের মতে, গত কয়েক বছর ধরে সিটংয়ের বিভিন্ন এলাকায় পর্যটনের জন্য শতাধিক হোম-স্টে খোলা হয়েছে । কিন্তু রাস্তার অভাবে তাদের এলাকাগুলো এখনও বিচ্ছিন্ন । যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরাও পা মারান না । পাশাপাশি ওই রাস্তা হলে তারা গ্রামের কৃষিকাজ ও পর্যটনের উন্নয়ন হবে ।
আরও পড়ুন : রাস্তার অবস্থা জীর্ণ, ঢোকেনি অ্যাম্বুলেন্স ; অটোতে হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মৃত্যু বৃদ্ধের
এলাকাবাসী মুসকান ভুজেল বলেন, "অন্তত তিনশো পরিবার রয়েছে গ্রামগুলিতে । অথচ যাতায়াতের মূল রাস্তা কয়েক দশক ধরে নেই । দাবি জানানো হলেও কাজ হয়নি । ভোটের সময় খালি প্রতিশ্রুতি পেয়েছি আমরা । কিন্তু রাস্তা পাইনি । সেজন্য রাস্তা না হলে আমরা কেউ ভোট দেব না ।"
ছাত্রী রিমিক লেপচা বলেন, "বাড়ি আমাদের অনেক দূর । রাস্তা না থাকায় হেঁটেই সব জায়গায় যেতে হয় । খালি স্কুল যেতেই আমাদের দু আড়াই ঘণ্টা হাঁটতে হয় । রাস্তা থাকলে অন্তত গাড়ি করে যেতে পারতাম ।"
আরেক ছাত্রী জুনিতা গুরুং বলেন, "খুব খারাপ অবস্থা রাস্তার । কোনও রাস্তাই নেই ৷ হেঁটে স্কুল যেতে পা ব্যাথা হয়ে যায় ।"