দার্জিলিং, 18 মে: একমাস ধরে বালকের শ্বাসনালীতে আটকে রয়েছে একটি বাঁশি ৷ জোরে শ্বাস ছাড়লেই বেজে উঠছে সেই বাঁশি । কেউ বলেছে শুকনো ভাত খাওয়ালে শৌচকার্যের সময় বেরিয়ে যাবে, তো কেউ বলেছে এমনিতেই বেরিয়ে যাবে । স্থানীয়দের কথা শুনে এভাবেই একমাস ধরে শ্বাসনালীতে আটকে থাকা সেই বাঁশি নিয়েই চলছিল বালকটি । সামান্য শ্বাসকষ্ট হলেও শারীরিক পরিস্থিতি খুব একটা খারাপ হয়নি বলে বাড়ির কেউই বিষয়টি তেমন গায়ে মাখেননি ৷
কিন্তু চিকিৎসককে দেখাতেই মাথায় হাত । শ্বাসনালীতে আটকে থাকা ধাতুর বাঁশি দেখেই চক্ষু চড়কগাছ চিকিৎসকের । অবশেষে বৃহস্পতিবার জটিল অস্ত্রোপচার করে শ্বাসনালী থেকে সেই বাঁশি বের করতে সফল হন তাঁরা । ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি সংলগ্ন আমবাড়ির বাসিন্দা পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বিপ্লব রায়ের 9 বছরের ছেলে বিবেক রায় ৷ একমাস আগে বাঁশি বাজানোর সময় কোনওভাবে সেটি মুখের ভিতরে ঢুকে বুকের কাছে শ্বাসনালীতে আটকে যায় । কিছুদিন সেইভাবেই চলছিল । পরে ওই কিশোরটিকে রাজগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু কিশোরের কোনও শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ না হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসকরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি ।
এরপর পরিবারের লোক 16 মে বিবেককে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যায় । বিষয়টি জানা মাত্র ইএনটি বিভাগের চিকিৎসক তথা বিভাগীয় প্রধান রাধেশ্যাম মাহাতো তড়িঘড়ি চিকিৎসা শুরু করেন । দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হওয়ায় তাঁরা বিশেষ মেডিকেল টিমও গঠন করেন । অ্যানাস্থেসিয়া, সার্জেন, ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে ওই টিম গঠন করা হয় । চিকিৎসকদের টিমে ছিলেন, রাধেশ্যাম মাহাতো, ধ্রুপদ রায়, গৌতম দাস, সন্দীপ ঘোষ, তুহিন শাসমল, অজিতাভ সরকার, শুভম গুপ্ত, এসকে আজহারউদ্দিন ও সন্দীপ মণ্ডল ।
এর মধ্যে অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগ থেকে ছিলেন, চিকিৎসক সুব্রত মণ্ডল ও ওয়াসিম । নার্সদের মধ্যে ছিলেন শবনম ও শালিনী । ব্রোনোস্কপি ফোরসেপ্স পদ্ধতির মাধ্যমে বুকের কাছে আটকে থাকা ওই বাঁশি বের করেন চিকিৎসকরা । এই বিষয়ে চিকিৎসক রাধেশ্যাম মাহাতো বলেন, "জটিল অস্ত্রোপচার করে বাঁশিটি বের করা হয়েছে । বর্তমানে বালকটি সুস্থ রয়েছে । বেশিদিন বাঁশিটি থাকলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল ।" বিবেকের বাবা বিপ্লব রায় বলেন, "চিকিৎসকদের অনেক ধন্যবাদ আমার ছেলের প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ।"
আরও পড়ুন : খাদ্যনালীতে আটকে সেফটিপিন, জটিল অস্ত্রোপচারে 'জীবনদান' শিশুর