শিলিগুড়ি, 4 অক্টোবর : পুজোয় পরিকল্পনা ছিল বাচ্চাদের নিয়ে ঠাকুর দেখার । নতুন জামা, জুতো পরে সবার মতোই ঠাকুর দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ওরা । পুজোর বাকি দিনগুলো বাবাকে কাছে পাওয়া যায় না সেভাবে, তাই পুজোয় কোথায় যাবে, কী খাবে, সব ঠিক হয়ে গেছিল । গতকাল পঞ্চমীর সকাল থেকে যখন মণ্ডপে মণ্ডপে মায়ের মূর্তি ঢুকছে, জামা-কাপড়ের সঙ্গে জাঙ্ক জুয়েলারি বাছতে ব্যস্ত পরিবার । আচমকাই ফোনের অন্যদিকে মাটিগাড়া বাজারে আগুনের খবর । একধাক্কায় পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাওয়ার জো । তখনও কেউ জানে না আদৌ কার ঘর পুড়েছে । ছোটাছুটি মাঝেই জানা গেল সাতটি দোকান পুড়ে ছাই । পুড়ে ছাই দোকান মালিক, কর্মচারিদের পরিবারের পুজো দেখার স্বপ্নও । মা তো এলেন, নিয়ে এলেন একরাশ দুঃখ ? কেড়ে অন্ন জোগানের রাস্তাটাই ?এসব প্রশ্নের মাঝেই চোখের কোণ চিকচিক করে উঠল ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের মালিক শ্যামল দাসের ।
বৃহস্পতিবার মাঝরাতে আগুন লাগে শিলিগুড়ি মহকুমার মাটিগাড়া বাজারে । পুড়ে ছাই হয়ে যায় সাতটি দোকান । পুজোর মুখে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় সাত ব্যবসায়ী-সহ কর্মচারীদের । ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক এক কোটি বলে দাবি করছেন তাঁরা । কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আগুনে ছয়লাপ সাত পরিবার । পুজোয় আনন্দ তো দূর, এখন শুধু বাঁচার রসদ খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাঁরা ।
গতকালের ঘটনার পর আজ সকাল থেকেই থমথমে পরিবেশ মাটিগাড়া বাজার এলাকায় । দেবীর বোধন হলেও আনন্দের বদলের বিষাদের সুরই রয়েছে এলাকায় । ঘটনাস্থানে মোতায়েন রয়েছে RAF ও পুলিশ বাহিনী । পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে দফায় দফায় ঘটনাস্থানে যাচ্ছেন মন্ত্রী, মেয়র, সভাধিপতি । আশ্বাস দিচ্ছেন পাশে দাঁড়ানোর । যদিও কতটা সাহায্য পাবেন তা নিয়ে সংশয়ে ব্যবসায়ীরা ।
এবিষয়ে হার্ডওয়্যার মালিক শ্যামল দাস বলেন, "পুজোর মুহূর্তে এমন ঘটনায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছি । বেঁচে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ আমাদের কাছে । পুজো আর পুজো নেই । অনেক স্বপ্ন ছিল পুজোর বাজার শেষে পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু একটা করব । কিন্তু সেটা আর সম্ভব হবে কীভাবে?" পাশ থেকেই অপর এক ব্যবসায়ী মিলন দাস বলে ওঠেন, "সব কথার শেষ কথা আমরা নিঃস্ব । ফেরার রাস্তা নেই । তবে প্রশাসনের তরফে যদি কোনওমতে দোকান তৈরি করে দেওয়া হত তবে ধার দেনা করে অন্তত নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতাম ।"