শিলিগুড়ি, 6 সেপ্টেম্বর: দিদিকে বলোতে একবার অভিযোগ জানিয়ে পাঁচ বছর পর ঘরের মেয়েকে খুঁজে পেল পরিবার । মেয়েকে ফেরত পেয়ে আপ্লুত সেই পরিবারের সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ৷
জানা গিয়েছে, পাঁচ বছর আগে 2018 সালে আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান শিলিগুড়ি সংলগ্ন অম্বিকানগরের বাসিন্দা রুম্পা মজুমদার । তখন রুম্পার বয়স ছিল 30 বছর । রুম্পার বিয়ে হয়েছিল শিলিগুড়িতেই । তাঁর 10 বছরের একটি ছেলেও রয়েছে । কিন্তু স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল । আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব সব জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরেও মেলেনি খোঁজ । এরপর নিউ জলপাইগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করে পরিবার । কিন্তু কাজ হয়নি ।
এ দিকে, বিগত পাঁচ বছর ধরে হন্যে হয়ে মেয়েকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন মা কাজল মালাকার এবং বাবা গজন মালাকার । কোথায় গেল রুম্পা, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না তাঁরা ! কার সঙ্গে গেল ? কেন গেল ? কেউ কি অপহরণ করল ? নানা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল তাঁদের মাথায় । কোনও পথ না পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয় রুম্পা মজুমদারের পরিবার ।
মার্চ মাসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যের মানুষের জন্য তৈরি দিদিকে বলো পোর্টালে রুম্পার নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ জানান দাদা মহাদেব মালাকার । পরিবারের কাতর আরজি শুনে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ করা হয় নবান্নের তরফে । রুম্পা মজুমদারের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটির পুনরায় তদন্ত শুরু করার জন্য শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার অখিলেশ চতুর্বেদীকে নির্দেশ দেওয়া হয় ।
আরও পড়ুন: টার্গেট 540 ইঞ্জিন, নিজেদের রেকর্ড নিজেরাই ভাঙতে মরিয়া চিত্তরঞ্জনের রেল কারখানা
নির্দেশমতো তৎক্ষণাৎ শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার নিউ জলপাইগুড়ি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে নির্দেশ দেন রুম্পা মজুমদারের নিখোঁজ সংক্রান্ত ঘটনার কাজ দ্রুত শুরু করতে । নির্দেশমতো তড়িঘড়ি তৈরি হয় একটি বিশেষ টিম । রুম্পা মজুমদারের পরিবারের থেকে সংগ্রহ করা হয় নানা তথ্য । সেখান থেকে পাওয়া যায় আধার কার্ডের নম্বর । আর সেই আধার কার্ডের নম্বর থেকেই তদন্ত শুরু করে নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ ।
পুলিশ জানতে পারে, নদিয়া জেলার নাকাশিপাড়ায় রুম্পা মজুমদারের আধার কার্ড দিয়ে একটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে । তড়িঘড়ি নিউ জলপাইগুড়ি থানার একটি টিম রওনা দেয় নদিয়ার নাকাশিপাড়াতে । নাকাশিপাড়া থানা পুলিশের সহযোগিতায় নির্দিষ্ট ওই ব্যাংকে পৌঁছয় নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ । এরপর ওই ব্যাংক থেকে বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করে নাকাশিপাড়া এলাকায় রুম্পা মজুমদারের বর্তমান ঠিকানায় পৌঁছে যায় পুলিশ ।
বাড়িতে পুলিশ দেখে চমকে যান রুম্পা মজুমদার । পাঁচ বছর পরেও মা-বাবা তাঁকে খুঁজছে জানতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি । জানা যায়, নাকাশিপাড়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করে আবার সংসার বেঁধেছেন তিনি । নতুন সংসারে দুই বছরের একটি সন্তানও রয়েছে তাঁর । নিয়মমাফিক রুম্পাকে নিজেদের হেফাজতে নেয় নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ । সোমবার ট্রেনে শিলিগুড়িতে নিয়ে আসা হয় রুম্পাকে । মঙ্গলবার তাঁকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় । পাঁচ বছর পর বাবা-মাকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রুম্পা । বুধবার রুম্পাকে পাঠানো হয় জলপাইগুড়ি আদালতে । দিদিকে বলোতে একটা এসএমএস যে, পাঁচ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে চোখের সামনে এনে দেবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি রুম্পার পরিবার ।
আরও পড়ুন: "দিদিকে বলো" কর্মসূচি কি সফল ?
দাদা মহাদেব মালাকার বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ, দিদিকে খুঁজে দেওয়ার জন্য ।" শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার শুভেন্দ্র কুমার বলেন, "দিদিকে বলো পোর্টালে নিখোঁজের অভিযোগ জমা পড়ে । এরপর তদন্ত শুরু হয় । নানা তথ্য সংগ্রহ করা হয় । টানা সাড়ে পাঁচ মাসের প্রচেষ্টার পর নিখোঁজ ওই মহিলাকে উদ্ধার করা হয় নাকাশিপাড়া থেকে ।"