দার্জিলিং, 24 মে : 11 বছর পর পাহাড়ে অবশেষে 26 জুন হতে চলেছে জিটিএ (গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) নির্বাচন (GTA Election date announced) । আর সেবিষয়টি মোটামুটি স্পষ্ট করে দিলেন জিটিএ নির্বাচনের বিশেষ পর্যবেক্ষক তথা ডিভিশনাল কমিশনার অজিত রঞ্জন বর্ধন । মঙ্গলবার দার্জিলিংয়ের লালকোঠি জিটিএ কার্যালয়ে সর্বদলীয় বৈঠক করেন তিনি । পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচনের জন্য 27 মে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হবে । মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক ওই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন বলে জানা গিয়েছে । 2011 সালে শেষবার জিটিএ নির্বাচন হয়েছিল ৷
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড় সফরে গিয়েই জিটিএ নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে এসেছিলেন । সে সময় পাহাড়ের সব রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তিনি । যদিও সেই সময় পাহাড়ের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল জিটিএ নির্বাচনের বিরোধিতা করেছিল । পরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফ থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল পাহাড়ের মানুষ এই মুহূর্তে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নয় । যদিও এর পরেও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকা এবং স্বরাষ্ট্র দফতরের আরও বেশ কয়েকজন আধিকারিকদের সঙ্গে দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের জেলাশাসকের বৈঠকেই স্থির হয় সর্বদল বৈঠকের পর জিটিএ নির্বাচন ঘোষণা হতে পারে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে । সেইমতো এদিন পাহাড়ে সর্বদলীয় বৈঠক হয় ৷
এদিনের সর্বদলীয় বৈঠকে পাহাড়ের 18টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতটি দল উপস্থিত ছিল । অনিত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা, সিপিআইএম, অজয় এডওয়ার্ডয়ের হামরো পার্টি, গোর্খা রাষ্ট্রীয় কংগ্রেস, হিল তৃণমূল কংগ্রেস, হরকা বাহাদুর ছেত্রীর জন আন্দোলন পার্টি ও বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলন । সর্বদলীয় বৈঠকের পর রাজ্য সরকারের তরফ থেকে 26 জুন জিটিএ ভোটের দিন হিসাবে স্থির করা হয় এবং এক্ষেত্রে 29 জুন হবে ভোট গণনা ।
আরও পড়ুন : HC on GTA Election : জিটিএ-র নির্বাচনী ফলের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে হাইকোর্টের রায়ের উপর
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জিটিএ'র মোট 45 টি আসনে নির্বাচন হবে । নির্বাচন পরিচালনার জন্য কার্শিয়াং, দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের মহকুমাশাসকদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে । 26 জুন নির্বাচন এবং 29 জুন হবে গণনা ও ফলপ্রকাশ । 27 মে থেকে শুরু হবে মনোনয়ন প্রক্রিয়া । সাতদিন মনোনয়ন প্রক্রিয়ার পর, দুদিন স্ক্রুটিনি এবং তার পরের দুদিন মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য ধার্য্য হয়েছে । 27 মে থেকেই পাহাড়ে নির্বাচনী বিধি লাগু হয়ে যাবে । নির্বাচন পরিচালনার জন্য কর্মীদের তালিকা ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে ।
এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফ থেকে যেটুকু জানা গিয়েছে, 26 জুন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হতে পারে । এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে একই দিনে দুটি জায়গায় ভোট করানোর কথা বলা হয়েছিল । সেই মতো আগামিকাল ঘোষিত হতে পারে মহকুমা পরিষদ নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ।
এদিকে, সর্বদলীয় বৈঠকের পরই তড়িঘড়ি বৈঠকে বসে সমস্ত রাজনৈতিক দল । শিলিগুড়ি সংলগ্ন মাটিগাড়ার একটি হোটেলে জোট সঙ্গী জিএনএলএফের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিজেপি । বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ বিজেপির রাজু বিস্তা, বিজেপি বিধায়ক নিরজ জিম্বা ও জিএনএলএফ নেতারা । বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, "জিটিএ'র নির্বাচন আসলে ঠিকাদারদের টেন্ডার প্রক্রিয়া । এই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আমরা এবং জোটসঙ্গীরা অংশ নেব না । কেননা বিজেপি ও তার সহযোগীরা ঠিকাদার নই । জিটিএ একটি অসাংবিধানিক সংস্থা, না এর কোনও ক্ষমতা আছে, না এর কোনও আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আছে এবং এটা গোর্খা বিরোধী । তাই এই নির্বাচনে যাচ্ছি না । উলটে কিভাবে এই ভোট হয়, তানিয়ে আইনের পথে যাবো । রাস্তায় নেমে আন্দোলন হবে। বিমল গুরুং এর সঙ্গে আমার কথা হয়নি । তবে যারা গোর্খাদের পক্ষে থাকবে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না ।"
আরও পড়ুন : GTA Election : জিটিএ নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে সাময়িক স্বস্তিতে পাহাড়ের বিরোধী দলগুলি
অন্যদিকে, বৈঠকে বসে বিমল গুরুংও । তিনি দার্জিলিংয়ের সিংমারি দলীয় কার্যালয়ে রোশন গিরি ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন । একইভাবে বৈঠক ডেকেছে হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড ।
উল্লেখ্য,পাহাড়ের রাজনৈতিক সমাধান না করেই যদি গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর নির্বাচন করা হয়, তা হলে অনশনে বসবে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা । আগেই এই নিয়ে হুমকি দিয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুং। সেই মতো এদিন সর্বদল বৈঠকে মোর্চার তরফ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে এখনই ভোট না করানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে । অন্যদিকে বিজেপি এবং জিএনএলএফ জিটিএ নির্বাচনের বিরোধিতা করে এদিনের সর্বদল বৈঠক বয়কট করেছে বলে খবর ।
জিএনএলএফ-এর তরফ থেকে এই জিটিএ নির্বাচন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল । কলকাতা হাইকোর্ট এই নির্বাচনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিল । আগামী 21 জুন এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানি রয়েছে । তবে তার আগেই এই ধরনের সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকার ধাক্কা খাবে কি না, সেই প্রসঙ্গ ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ।
আরও পড়ুন : GTA Election in Hills : রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে মতভেদ, কিন্তু জিটিএ নির্বাচনের পক্ষে মত পাহাড়বাসীর
এদিকে পাহাড়ের রাজনীতিও বেশ পরিবর্তনশীল । বিমল গুরুং ইতিমধ্যেই রাজু বিস্তার সঙ্গে এক প্রস্থ বৈঠক করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে । তিনি আবার বিজেপির দিকে ঝুঁকছেন, এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে । এই অবস্থায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণ হয় তাই এখন দেখার ।