দার্জিলিং, 18 মার্চ: জলপাইগুড়ির জঙ্গলে সেনার ফায়ারিং রেঞ্জে হাতির মৃত্যুর (Death of Elephants in Army Firing Range) ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ৷ পাশাপাশি অবিলম্বে সেনার প্রশিক্ষণ বন্ধ করার জন্য বন দফতরকে চিঠি দিয়েছেন তিনি ৷ শুধু তাই নয়, সেনা যাতে গভীর জঙ্গল সংলগ্ন হাতির করিডরে যেসব ফায়ারিং রেঞ্জ আছে সেগুলো স্থানান্তরিত করে সেই উদ্যোগও নিয়েছেন তিনি ৷ সেই মর্মে ইতিমধ্যে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (Forest Minister Jyotipriya Mallik) রাজ্যের মুখ্য বনপাল (হেড অফ ফরেস্ট ফোর্স)-কে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন ৷
পরিবেশ ও পশু প্রেমী সংগঠনের তরফেও একই দাবি উঠেছে ৷ দু’দিনে ফায়ারিং রেঞ্জে তিনটে হাতি মৃত্যুর পরই রাজ্যের একাধিক পশু ও পরিবেশ প্রেমী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ৷ বন দফতরের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে চিঠি দিয়ে হাতির মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করে অভিযোগ জানাবে ৷ এছাড়াও তারাও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে ফায়ারিং রেঞ্জ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানাবে ৷
রাজ্যের প্রায় 20টি পরিবেশ ও পশু প্রেমী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শিলিগুড়িতে বৈঠকে বসে ৷ সেই বৈঠকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে চিঠি দেওয়াক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ প্রসঙ্গত, 13 মার্চ জলপাইগুড়ির তিস্তা চরে ফায়ারিং রেঞ্জে সেনার প্রশিক্ষণের সময় আচমকা হাতির পাল ঢুকে পরায় মৃত্যু হয় তিনটি হাতির ৷ পাশাপাশি জখম হয়েছে আরও কিছু হাতি ৷
এ দিন ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা বলার সময় মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘আমরা সত্যিই খুব চিন্তিত ৷ সেনাকে বলেছি দ্রুত সেসব জায়গায় প্রশিক্ষণ বন্ধ করতে ৷ সেই বিষয়ে প্রধান মুখ্য বনপালকে বলেছি যোগাযোগ করার জন্য ৷ একটি রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে ৷ পাশাপাশি সেনা যাতে তাঁদের ফায়ারিং রেঞ্জ অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়, তার জন্যও বনপালকে বলেছি বিষয়টি সেনার সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করতে ৷ এ ভাবে বন্যপ্রাণি মারা গেলে আমরা বসে থাকব না ৷’’
সলিটারি নেচার অ্যান্ড অ্যানিমেল প্রোটেকশন ফাউন্ডেশনের সম্পাদক কৌস্তভ চৌধুরী জানিয়েছেন, খুবই মর্মান্তিকভাবে হাতিগুলির মৃত্যু হয়েছে ৷ সমস্ত পশু ও পরিবেশ প্রেমী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা একত্রিত হয়ে এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানাবে ৷ পরিবেশ, বন, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে চিঠি দিয়ে তারা আবেদন জানাবে ৷ যাতে ফায়ারিং রেঞ্জ হাতির করিডর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় ৷ একই দাবিতে বনমন্ত্রীকেও সংস্থাগুলি চিঠি দেবে ৷ সঙ্গে হাতির প্রত্যেকটি করিডরকে আইনি স্বীকৃতি দেওার দাবি জানিয়েছে ৷
আরও পড়ুন: ডুয়ার্সে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু রুখতে থার্মাল ডিভাইস আইডিএস ব্যবহারের সিদ্ধান্ত রেলের
শিলিগুড়ি সংলগ্ন বৈকুন্ঠপুর ফরেস্ট ডিভিশন ও মহানন্দা অভয়ারণ্য এলাকায় সেনার ফায়ারিং রেঞ্জ রয়েছে ৷ আরও দু’টো রেঞ্জ এলাকায় রয়েছে হাতির করিডর ৷ একটি আপালচাঁদ-গুলমা করিডর ও অন্যটি মহানন্দা দলকা করিডর ৷ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির তরফে দাবি উঠেছে যে, হাতির করিডর থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে ফায়ারিং রেঞ্জ করতে হলে, আগে থেকে পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করতে হবে ৷ পাশাপাশি, নির্দিষ্ট সময়েই প্রশিক্ষণ করতে হবে ৷ পাশাপাশি প্রশিক্ষণের আগে, প্রশিক্ষণের সময় ও প্রশিক্ষণের পর পুরো এলাকা ড্রোন সার্ভিল্যান্সে রাখার দাবি জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগলি ৷