দার্জিলিং, 12 জুলাই: আপনারা প্রতিজ্ঞা করুন, কোনও ধান্দাবাজ নেতাদের পাহাড়ে অশান্তি করতে দেবেন না । জিটিএ'র শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পাহাড়াবাসীকে এই বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata in GTA Oath taking)। পাহাড়ে তিনি উন্নয়নের চেষ্টা করলেও তা হতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি ৷
এ দিন মমতা বলেন, "পাহাড়ে এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এর আগে দেখিনি । পাহাড়বাসী দেখিয়ে দিল তারা যা পারে তা অন্যান্যরা পারে না । সে জন্য আপনাদের ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই । এর আগে গত দশ বছরে 7 হাজার কোটি টাকা দিয়েছিলাম । কিন্তু সঠিক ভাবে কাজ হয়নি ৷"
দশ বছর আগে শেষ জিটিএ নির্বাচন হয়েছিল । তখন পাহাড়ের সর্বেসর্বা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিমল গুরুং । তাঁর নেতৃত্বেই জিটিএ-তে বোর্ড গঠন করে মোর্চা । রাজ্যের সঙ্গে সখ্যতাও বজিয়ে রেখেছিলেন বিমল গুরুং । কিন্তু তারপরে 2017 সালে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলনে গোটা পাহাড়ে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে । এমনকী দশ বছরে রাজ্যের তরফে জিটিএ-কে দেওয়া সাত হাজার কোটি টাকার হিসেবও নেই ৷ সেই অডিট নিয়ে সুর চড়িয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও । আর পাহাড় পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে 'ধান্দাবাজ' নেতারই রয়েছেন বলে এ দিন জিটিএর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের খোলা মঞ্চ থেকে সাফ জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী (Do not allow anyone to disturb peace in hills)।
মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের অভিযোগ, তিনি পাহাড়ের উন্নয়ন করতে চাইলেও বাধ সেধেছিলেন পাহাড়ের নেতারাই (Mamata Banerjee in Darjeeling)। প্রকল্পের টাকা নয়ছয় থেকে একাধিক দুর্নীতি হয়েছে । এ দিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার । তা হল, পাহাড়ে জিটিএ'র দ্বিতীয় পর্যায়ে মোর্চা নেতা বিমল গুরুং, জিএনএলএফ নেতা মন ঘিসিংদের আর কোনওভাবেই গুরুত্ব দিতে তিনি নারাজ । পাহাড়ের কোনও নেতাই যাতে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে বা করতে চাইলে যাতে পাহাড়বাসীরাই প্রতিরোধ করেন তার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee says in GTA oath taking ceremony)।
আরও পড়ুন: জিটিএ মামলার দ্রুত শুনানিতে নতুন বেঞ্চ গঠনের আর্জি খারিজ প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "এর আগে অনেক গড়বড় হয়েছে । পাহাড়ে অনেক ভূমিকম্প হয় । এখন ভূমিকম্প হলে কী হবে জানি না । কাজ করার কোনও সিস্টেম ছিল না ৷ এ বার সিস্টেম ফলো করতে হবে । আমি পূর্ণ সহযোগিতা করব । আগে অনেক প্রকল্প নিয়েছিলাম । কিন্তু কাজ করতে দেয়নি । আমি বন্ধুত্ব চাই । ঝগড়া চাই না । আমি পাহাড়ে কিছু নিতে আসব না । দিতেই আসব ।"
এ দিনের ভাষণে পাহাড়ের ইতিহাস তুলে ধরে আক্ষেপ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর দাবি, এর আগেও মন ঘিসিং, বিমল গুরুংদের নিয়ে জিটিএ'র মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি কায়েম করার চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু দেখা গিয়েছে, সে সময় বিমল গুরুং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ছেড়ে বিজেপির হাত ধরে । পাহাড়ে অশান্তি শুরু হয় । ফের সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তা-ই চাইছেন মমতা । পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখতে মুখ্যমন্ত্রী সবরকম সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন ৷