দার্জিলিং, 23 অগাস্ট: কেন্দ্রীয় সরকারের নানা নীতির জেরে BSNL কর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন । তবে পাশাপাশি লকডাউন পরিস্থিতিতে বেশ কিছু পরিকল্পনা করে পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড তথা BSNL । বেসরকারি মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড সার্ভিসের পাশাপাশি বেশ কিছু প্ল্যান বাজারে আনার পরিকল্পনা রয়েছে । লকডাউনে পঠনপাঠন থেকে নানা কজকর্ম অনলাইনে করার প্রবণতা বেড়েছে । তা মাথায় রেখেই সাজিয়ে তোলা হয়েছে একাধিক প্ল্যান । পাশাপাশি পরিষেবাতেও জোর দিচ্ছে BSNL ।
উত্তরবঙ্গ সার্কেলেটি জেলায় পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্রডব্যান্ড সার্ভিসে বিশেষ নজর দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা BSNL । সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার অরুময় ডাকুয়া জানিয়েছেন, "গোটা রাজ্যের সঙ্গে উত্তরবঙ্গেও লকডাউনে ইন্টারনেটের ব্যবহার আরও বেড়েছে । তা মাথায় রেখেই ভারতে ফাইবারের প্রসারে জোর দেওয়া হচ্ছে । ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সার্ভিস দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহক সংখ্যা গত কয়েক মাসে অন্তত পাঁচ গুণ বেড়েছে ।" উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, "আগে শিলিগুড়িতে এই ব্রডব্যান্ড সার্ভিসের ক্ষেত্রে মোট কানেকশনের সংখ্যা ছিল মাত্র 200 । এখন তা শিলিগুড়িতে বেড়ে হয়েছে 2000। শিলিগুড়ি শহর ছাড়াও অপটিক্যাল ফাইবার ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও । এর জেরে হাইস্পিড ডেটা ব্যবহার করতে ইচ্ছুক অনেকেই ঝুঁকছেন BSNL পরিষেবার দিকে । তাঁদের দ্রুত দেওয়া হচ্ছে ব্রডব্যান্ড কানেকশন । এর পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলিতেও অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে গড়ে প্রায় 200 কানেকশন দেওয়া গিয়েছে ।" পাশাপাশি, তিনি আরও জানিয়েছেন "মোবাইলের মাধ্যমে নেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে । উত্তরবঙ্গে আগে গড়ে দৈনিক 5000 হাজার GB ইন্টারনেট ব্যবহার হত । এখন তা দিনে 7000-8000 GB পৌঁছেছে ।" অরুময় ডাকুয়া জানিয়েছেন, "সর্বত্র কোনও কম্পানিরই অপটিক্যাল ফাইবার নেই । তাই বড় অংশের গ্রাহকেরই ভরসা মোবাইলের ইন্টারনেট । ফলে মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেটের ব্যবহার বিপুল ভাবেই বেড়েছে । এই দিকগুলি মাথায় রেখে বেশ কিছু প্ল্যানও বাজারে এনেছে BSNL ।"
সংস্থার JTO সেলস দীপঙ্কর দাস জানিয়েছেন, "লকডাউনে পড়াশুনা থেকে নানা কাজ অনলাইনে হচ্ছে । ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য সিমকার্ড বিক্রি বেড়েছে । আগে শুধু শিলিগুড়িতে মাসে 600-700 সিম বিক্রি হত । এখন মাসে গড়ে 1400 সিম বিক্রি হচ্ছে । প্ল্যান বাছাই এর ক্ষেত্রেও যেসব প্ল্যানে বর্ধিত ডেটা মেলে সেসব প্ল্যান ব্যবহারকারীরা পছন্দ করছেন ।" তিনি জানান, আগে দিনে 1 GB ডেটা ব্যবহারকারীর সংখ্যাই বেশি ছিল । কিন্তু এখন দিনে 2-5 GB ডেটা মেলে এমন প্ল্যানের ব্যবহার বেড়েছে । ছাত্রছাত্রীদের পঠন পাঠনের জন্য দৈনিক এই প্ল্যানগুলি বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে । শিলিগুড়িতে BSNL-এর পাশাপাশি বাজার ধরতে নেমেছে বেসরকারি মোবাইল সার্ভিস অপারেটরেরাও । ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রেও কেবল নেটওয়ার্কের পাশাপাশি বাজার দখলে মরিয়া লড়াই চালাচ্ছে জিও ফাইবার-সহ একাধিক সংস্থা। লকডাউনে উন্নত পরিষেবা ও বিপুল নেটের ব্যবহার করা যায় এমন প্ল্যানের জন্য গ্রাহকেরা তাঁদের কাছ থেকে কানেকশন নিচ্ছেন । লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কানেকশনের সংখ্যা । বাড়ছে ডেটার ব্যবহার । শহরাঞ্চলে বেসরকারি স্কুলগুলির অধিকাংশই অনলাইন স্ট্রিমিং এবং ইউটিউব ব্যবহার করে পড়ানোর চেষ্টা করছে । ফলে উন্নত ডেটার ব্যবহারের লক্ষে ছাত্র-ছাত্রীরা নানা কানেকশন নিচ্ছেন ।
শিলিগুড়ি বয়েজ় স্কুলের শিক্ষক রনজয় দাস বলেন, "ক্লাস টেন ও টুয়েলভের ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের অনলাইনে পড়াচ্ছি । নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলে পড়ানো শুরু করেছি । এর পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সেসব ভিডিয়ো ছাত্রছাত্রীদের দিচ্ছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই পড়িয়ে যেতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদের ।"