বালুরঘাট, 30 জুলাই : বছর তিরিশ আগেই গত হয়েছেন স্বামী । দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার ভালোই চলছিল বালুরঘাট ব্লকের চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েতের কুয়ারন এলাকার তাসিয়া হেরের (62) । ছেলেদের বিয়ে দেওয়ার পরই সংসারে নামে অন্ধকার ৷ বিয়ের পর থেকেই বৃদ্ধ মা ও অবিবাহিত বোনকে দেখে না তারা । একই বাড়িতে ছোটো ছেলে থাকলেও দেখে না মাকে ৷ কর্মসূত্রে বড় ছেলে থাকে ভিন রাজ্যে । এদিকে তাসিয়ার রুগ্ন চেহারা, চোখে পড়েছে বার্ধক্যের ছাপ । কাজও করতে পারেন না তিনি । অন্যদিকে, মেয়ের শরীর দুর্বল হওয়ায় সেও পারে না কোনও কাজ করতে ৷ যার জন্য মা-মেয়ের সংসারে জোটে না দু'বেলা ভাত । প্রতিবেশীদের সাহায্যে কখনও খাবার জোটে । দুঃস্থদের জন্য নানা সরকারি সুবিধা থাকলেও কোনওটাই মেলেনি এই অসহায় হেরে পরিবারের । গ্রামবাসীদের আর্জি, প্রশাসন তাদের বাঁচার জন্য যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে উপকৃত হয় তাসিয়া ও তাঁর মেয়ে ।
বালুরঘাট ব্লকের চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েতের কুয়ারন সংসদের ধিচুপাড়া এলাকার বাসিন্দা তাসিয়া হেরে ও সারা হেরে । স্বামী লুইস দীর্ঘ দিন আগে মারা গেছেন । স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই পরিবারে আর্থিক অনটন লেগেই রয়েছে । স্বামীর অবর্তমানে দুই ছেলে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করে । কিন্তু তাদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকেই উলটোপুরাণ । ছেলেরা তার মা ও বোনের খোঁজ রাখেন না । ফলে কার্যত অনাহারে দিন কাটাতে শুরু করে মা ও মেয়ের ।
বাড়ির চারিদিক পাটকাঠির বেড়া দিয়ে ঘেরা । মাথার উপর টিনের ফাটা চাল । তাসিয়ার মেলেনি বার্ধক্য ভাতা । এমনকি জোটেনি ইন্দ্র আবাস যোজনার ঘর । এবিষয়ে তাসিয়া হেরে জানান, সারা শরীরে ব্যথা । ব্যাথায় নড়াচড়া করতে পারেন না তিনি । মাঝে মধ্যে রান্না করেন ৷ প্রতিবেশীরা চাল ডাল দিয়ে কখনও কখনও সাহায্য করেন । কোনওদিন সেই সাহায্য না পেলে শাক পাতা খেয়েই করতে হয় দিন গুজরান । আক্ষেপের সুরে তিনি আরও জানান, দীর্ঘ দিন থেকেই তিনি অসুস্থ । মেয়েকে নিয়ে থাকেন । সরকারের তরফ থেকে এখনও কোনওরকম সাহায্য মেলেনি । প্রশাসনের সাহায্য পেলে তাঁরা অন্তত খেয়ে বাঁচতে পারতেন ।
তাসিয়ার মেয়ে সারা হেরে জানান, একই বাড়িতে দাদা থাকলেও সে তাদের দেখে না । নেয় না খোঁজ খবরও । কোনও রকমে প্রতিবেশীদের কাছে চেয়ে দিন চলছে তাদের ।
স্থানীয় বাসিন্দা পিটার বারু এবিষয়ে জানান, দেখে খুব খারাপই লাগে ওদের । হেরে পরিবার যাতে সরকারি সুবিধা ও বার্ধক্য ভাতা পান তার জন্য BDO অফিসে আবেদন করেছিলেন । তবে কোনও লাভ হয়নি । জোটেনি সাহায্য । মা, মেয়ে শরীরের যা অবস্থা তাতে কাজও করতে পারেন না তাঁরা । কেউ সাহায্য পেলে উপকৃত হত পরিবারটি । দরকার পরলে আবারও পঞ্চায়েত ও BDO অফিসে যাবেন তিনি ।
অন্যদিকে, চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পার্থ দাস বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ।