বালুরঘাট, ২৮ অগাস্ট : স্কুল পড়ুয়াদের ড্রেস বানানোর জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কাছ থেকে ঘুষ চাইছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা । ঘুষের টাকা দিতে না পারায় পাচ্ছেন না কাজের বরাত । এই অভিযোগ তুলে আজ বালুরঘাট জেলা প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর শতাধিক মহিলা । তাঁদের দাবি, স্কুল ড্রেস বানানোর জন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের ঘুষ দিতে পারবেন না তাঁরা । দাবি মানা না হলে আগামী দিনে আরও বড় আন্দোলনে নামার হঁশিয়ারি দিয়েছেন ।
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পোশাক দেয় সরকার । প্রাথমিক স্কুল পড়ুয়াদের পোশাকের বরাত দেওয়া হয় স্বনির্ভর গোষ্ঠী মহিলাদের । কয়েক বছর ধরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা বরাত পেয়ে আসছেন । অভিযোগ, চলতি অর্থবর্ষে স্কুল পড়ুয়াদের পোশাক বানানোর বরাত দেওয়া হয়নি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের । কাজের বরাত পেতে গেলে প্রাথমিক শিক্ষকরা তাঁদের কাছ থেকে ঘুষ চাইছেন বলে অভিযোগ । পোশাক পিছু 100 থেকে 150 টাকা পর্যন্ত ঘুষ চাওয়া হচ্ছে । টাকা দিতে না পারায় মিলছে না পোশাক বানানোর বরাত ।
এদিকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় প্রায় 2 লাখ 9 হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা সদস্য রয়েছেন । 29 হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে । 64টি সংঘ রয়েছে । 2017 ও 2018 সালেও প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পোশাক বানানোর বরাত এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাই পেয়েছিলেন । এবার সেই পোশাক তৈরির বরাত পাননি । ঘুষ দিয়ে বরাত পেতে চান না তাঁরা । পুরো বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনতে আজ বিকেলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর শতাধিক মহিলা বালুরঘাট হাইস্কুল মাঠ থেকে মিছিল করে জেলা প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান । ঘণ্টা দেড়েক চলে বিক্ষোভ । পরে আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকজনের প্রতিনিধিদল জেলাশাসকের কাছে নিজেদের দাবি-দাওয়া পেশ করেন ।
এবিষয়ে আন্দোলনকারী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা বনশ্রী সরকার জানান, সরকার প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পোশাক তাঁদের মাধ্যমেই সরবরাহ করত । এর ফলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও অর্থ উপার্জন করে উপকৃত হতেন । তবে এবার তাঁরা পোশাক তৈরির কোনও বরাতই পাননি । ঘুষের বদলে কোনও রকম কাজ করতে রাজি নন । এই দাবিতে আজ জেলাশাসকের কাছে যান । দাবি-দাওয়া জানান । তিনি বলেন, "স্কুল ড্রেসের যে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে সেই টেন্ডারে কেন সংঘ সমবায়কে অর্ডার দেওয়া হচ্ছে না ? যদিও বা অর্ডার দেওয়া হয় তাহলে কেন শিক্ষকরা টাকা চাইছেন আমাদের কাছে ? এই বিষয়টা আমরা মানতে পারছি না ৷ টাকা দেব না ৷ টাকা না দিলে আমাদের অর্ডার দেওয়া হবে না কেন ? জেলাশাসকের কাছে আমাদের একটাই দাবি তিনি এই বিষয়টির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিন ৷"
যদিও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন প্রাথমিক শিক্ষক । পোশাক তৈরির জন্য কোনও রকম ঘুষ চাওয়া হয়নি বলে দাবি তাঁদের । অন্যদিকে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক নিখিল নির্মল ।