বালুরঘাট, 29 মে : কারও গলব্লাডারে স্টোন । কারও আবার পেটে টিউমার । কেউ তিনবার ভরতি হয়েছেন । কেউ আবার মাস খানেক আগে ভরতি হয়েছেন । কিন্তু অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে না কারও । প্রত্যেকবারই পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে অস্ত্রোপচারের তারিখ । ফলে সমস্যায় পড়ছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা হাসপাতালের রোগীরা । তাই খরচ বেশি হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই এখন নার্সিংহোমেই ভরসা রাখছে । কিন্তু কেন এরকম পরিস্থিতি জেলা হাসপাতালের ? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উত্তর, কোরোনা ও লকডাউনের কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে কোল্ড OT অর্থাৎ অস্ত্রোপচার বিভাগ । শুধু খোলা আছে জরুরি অস্ত্রোপচার বিভাগ ।
দক্ষিণ দিনাজপুরের এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল জেলার অধিকাংশ মানুষ । কোল্ড ও জরুরি বিভাগ মিলিয়ে এই হাসপাতালে প্রতিদিন 20 থেকে 30 টা অস্ত্রোপচার হত । কিন্তু বর্তমানে এই হাসপাতালের চিত্রে বিপুল বদল এসেছে । কোরোনা ও লকডাউনের জেরে বন্ধ রাখা হয়েছে হাসপাতালের কোল্ড OT বিভাগ । শুধু মাত্র খোলা রয়েছে জরুরি অস্ত্রোপচার বিভাগ । যার ফলে এখন 10-15টার বেশি অস্ত্রোপচার হয় না হাসপাতালে । তার মধ্যেও আবার সিজ়ার বেশি ।
বর্তমানে হাসপাতালের 50 জন রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন । কিন্তু অস্ত্রোপচারের একটি বিভাগ বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না । ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের অস্ত্রোপচারের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে । তাই বাধ্য হয়ে খরচ বেশি হওয়া সত্ত্বেও রোগীরা নার্সিংহোমের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন ।
বালুরঘাট শহরের মিঠুন রায় । বেশ কিছুদিন ধরে তিনি গলব্লাডারের স্টোন হওয়ায় ব্যথায় ভুগছেন । যার ফলে এখনও পর্যন্ত এই জেলা হাসপাতালে তিনবার ভরতি হয়েছেন । কিন্তু প্রতিবারই পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে অস্ত্রোপচারের তারিখ । ফলে এখন তাঁর পরিবার নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচারের চিন্তাভাবনা করছেন । তবে, খরচের বিষয়টি নিয়েও তাঁরা চিন্তিত । মিঠুনের বন্ধু অনুপরঞ্জন দাস বলেন, "লকডাউনের জন্য অস্ত্রোপচারের খরচ আরও বেড়ে গেছে । ফলে সরকারি হাসপাতালে কোল্ড অস্ত্রোপচার বিভাগ খোলা থাকলে সাধারণ মানুষের সুবিধা হত ।"
একই সমস্যায় বালুরঘাট শহরের অমৃতখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়খইল এলাকার গীতা সরকার । পেটে টিউমার নিয়ে মাসখানেক আগে বালুরঘাট হাসপাতালে ভরতি হন । কিন্তু কোল্ড অস্ত্রোপচার বিভাগ বন্ধ থাকায় তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছিল । পরে পেটের ব্যথা বাড়তে থাকায় মালদার একটি নার্সিংহোমে তাঁর অস্ত্রোপচার করানো হয় । গীতা সরকারের ছেলে সৌভিক সরকার বলেন, "মায়ের পেটের ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচার করাই । মা এখন সুস্থ রয়েছেন । কিন্তু নার্সিংহোমে অনেক খরচ হয়েছে । সরকারি হাসপাতালে খরচ কম লাগত ।"
বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে সুপার তপন কুমার বিশ্বাস জানান, সরকারের নির্দেশেই আপাতত জেলা হাসপাতালে কোল্ড OT বিভাগ বন্ধ রয়েছে । শুধুমাত্র জরুরি অস্ত্রোপচার বিভাগ চালু রয়েছে । এছাড়াও বালুরঘাট হাসপাতালে অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসক কম থাকায় সমস্যা হচ্ছে । তবে, সরকারি নির্দেশমতোই তাঁরা কাজ করবেন ।