হিলি, 4 জুন : লকডাউনের জের বন্ধ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর হিলি । চলছে না পণ্যবাহী লরি । এর জেরে কয়েকশো লরিচালকের রুজি রোজগার কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে । উপার্জন বন্ধ লরির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত অনেকেরই । পেট চালানোর জন্য ইতিমধ্যেই অনেকে অন্য পেশায় চলে গেছেন । কবে খুলবে সীমান্ত, সেই দিকে তাকিয়ে চালক-খালাসিরা । তবে সীমান্ত খুললেই যে লরি ফের আগের মতো চালানো যাবে, সেই বিষয়ে সংশয়ে মালিক-চালকরা । কারণ, দু'মাসেরও বেশি সময় চলাচল না করায় গাড়িগুলির যন্ত্রাংশ বিকল হয়েছে । যন্ত্রাংশ এখনই সারিয়ে তোলার মতো সামর্থ্য নেই অনেকেরই ।
প্রসঙ্গত, কোরোনার জন্য গত 23 মার্চ থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় লকডাউন কার্যকর হয়েছে । বর্তমানে পঞ্চম দফায় লকডাউন চলছে । যদিও চতুর্থ দফা থেকে লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে । লকডাউনের ফলে গত 26 মার্চ থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার একমাত্র আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর হিলি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে । আন্তর্জাতিক ব্যবসা বন্ধ থাকায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বেশিরভাগ পণ্যবাহী লরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে । আন্তর্জাতিক ব্যবসায় পণ্য পরিবহণের জন্য ও লাভের আশায় অনেকেই জমি জায়গা বিক্রি করে লরি কিনেছেন । জেলার সব থেকে বেশি লরি রয়েছে হিলিতে । এই ব্লকে কমবেশি প্রায় সাড়ে 500 লরি রয়েছে । গোটা জেলাতে সংখ্যাটি এক হাজারেরও বেশি ।
লকডাউনের কারণে ব্যবসা বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ পণ্যবাহী লরি চলাচল করছে না বললেই চলে । শুধুমাত্র হিলি ট্রাক টার্মিনাস ও 512 জাতীয় সড়কেই 300-র বেশি লরি বিভিন্ন পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে । দীর্ঘদিন ধরে মাল ভরতি লরি দাঁড়িয়ে থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে চাকা ও অন্য যন্ত্রাংশ । হিলি ট্রাক টার্মিনাসে দাঁড়িয়ে থাকা পাথর বোঝাই লরির বেশ কয়েকটি চাকা ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে । লকডাউন উঠলেও দাঁড়িয়ে থাকা বেশিরভাগ লরির চলাচল করতে পারবে না বলে দাবি মালিক ও চালকদের ।
এবিষয়ে মালিক বিভূতি দাস ও নিতাই সরকার বলেন, লকডাউনের কারণে লরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে । সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়েছে লরিচালকরা । সমস্যায় পড়েছে মালিকরাও । কী করে লরির EMI -এর টাকা, রোড ট্যাক্স ও চালকদের বেতন দেবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন সকলেই । মালিকরা জানাচ্ছেন, অনেক খালাসি-চালক পেশা বদল করে সবজি বিক্রি ছেড়ে লোকের বাড়িতে কাজ করছেন । অনেকে কাজ না পেয়ে বাড়িতেই বসে রয়েছেন । তাঁদের বাঁচাতে খুলে দেওয়া হোক হিলি আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর । এই স্থলবন্দর খোলা থাকলে কাজ হলে তাদের রুজি-রোজগার চলে । চালকরাও দীর্ঘদিন ধরে না আসায় তারাই মাঝেমধ্যে গাড়ি চালু করেছেন ।
এই বিষয়ে, হিলি এক্সপোর্টারস অ্যান্ড কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সঞ্জিত মজুমদার বলেন, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় কমবেশি 1 হাজার লরি আছে । এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কয়েক হাজার কর্মী । ব্যবসা বন্ধ থাকায় সকলেই ব্যাপক সমস্যায় পড়েছে । শুধুমাত্র লরির কর্মীরাই নয় মালিকরাও সমস্যায় পড়েছেন ৷ কি করে তার কর্মীদের বেতন দেবেন সেই নিয়ে চিন্তিত সকলেই । অন্যদিকে, এবিষয়ে রাজ্যসভার সাংসদ তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান অর্পিতা ঘোষ বলেন, এইসব শ্রমিকদের 100 দিনের কাজ দেওয়ার জন্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে ।