বংশীহারী, 23 জুলাই: মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে এলেন স্বাস্থ্যকর্তার স্ত্রী। বিএমওএইচের স্ত্রী'র দেওয়া রক্তে প্রাণ বাঁচাল আরও এক মহিলার। ঘটনাটি বংশীহারী ব্লকের কুশকারি গ্রামের ঘটনা । হন্য হয়ে খুঁজে স্ত্রীর রক্ত কোথাও না-পেয়ে গর্ভবতী মহিলার স্বামী ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের দ্বারস্থ হন। গর্ভবতী মহিলাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের স্ত্রী। রক্ত দিয়ে মা ও সন্তানের প্রাণ বাঁচান তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কুশকারি গ্রামের বছর কুড়ির নমিতা হেমব্রম আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কয়েকদিন আগে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্বামী দেবাশিস হেমব্রম 17 জুলাই রশিদপুর হাসপাতালে স্ত্রীকে নিয়ে আসেন। সেখানেই তাঁকে ভরতি করা হয়। ওইদিন তাঁর রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম। দু'দিন চিকিৎসারত অবস্থায় থাকাকালীন 19 জুলাই তাঁর ফের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। কোনও উন্নতি না-হওয়ায় ওইদিন তাঁকে গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে তাঁকে ভরতির পর রক্তের প্রয়োজন পড়ে। ও পজিটিভ গ্রুপের রক্ত শীঘ্রই দেওয়া না-হলে মা ও শিশুকে বাঁচানো সম্ভব নয়। স্ত্রীর এই অবস্থায় দেবাশিস হেমব্রম ব্লাড ব্যাংকে রক্তের খোঁজ করেন। সেখানে রক্ত নেই বলে ফিরে আসেন। রক্তের সন্ধানে বা ডোনার খুঁজতে স্বামীর দু'দিন কেটে যায়। সর্বত্রই হতাশ হয়ে ফিরতে হয় তাঁকে। শেষমেশ স্ত্রীকে বাঁচাতে রশিদপুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কোয়ার্টারে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
আরও পড়ুন: মানবিক জেলাশাসক, পাশে দাঁড়ালেন বিশেষভাবে সক্ষম পড়ুয়া-সহ অসহায় পরিবারের
কোথাও রক্ত না-পেয়ে ডাক্তারবাবুকে কাতর কণ্ঠে বলেন, "ডাক্তারবাবু আমার স্ত্রী ও সন্তানকে বাঁচান। কোথাও আমার স্ত্রীর জন্য ও পজিটিভ রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না।" ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন স্বাস্থ্য আধিকারিকের স্ত্রী জয়িতা কর। বিষয়টি শোনার পর তিনি নিজের রক্ত দিতে উদ্যত হন। দেবাশিসকে তিনি বলেন, "তুমি ফিরে যাও রক্তের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।" রক্তের গ্রুপ মিলে যাওয়ায় শনিবার বিকেলে জয়িতাদেবী রশিদপুর থেকে সোজা রওনা দেন গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।
সেখানে মুমূর্ষু ওই গর্ভবতী মহিলার জন্য স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন তিনি। সেই রক্ত রবিবার দুপুরে নমিতা হেমব্রমের শরীরে দেওয়া হয়েছে । বর্তমানে বাচ্চা-সহ গর্ভবতী সুস্থ আছেন। রশিদপুর হাসপাতালের স্বাস্থ্য আধিকারিক পুলকেশ সাহা বলেন, "ব্লাড ব্যাংকে রক্তের অভাব দেখা দেয়। ওই রোগীর কথা আমার স্ত্রীকে জানালে তিনি রক্ত দিতে সম্মতি জানান। গঙ্গারামপুর হাসপাতালে গতকাল রক্ত দেয় আমার স্ত্রী। রবিবার দুপুরে ওই গর্ভবতী মহিলাকে রক্ত দেওয়ার ফলে বাচ্চা ও মায়ের দুইজনেরই প্রাণ বাঁচে।
আরও পড়ুন: চোখের দৃষ্টি ফেরাতে সাহায্য বিডিও-র, বিশেষ উপহার নিয়ে হাজির বৃদ্ধা