তপন, 9 নভেম্বর: তপনে একই পরিবারের 5 জনের মৃত্যু । গতকালই পুলিশ মৃতদের বাড়ির পাশের পুকুর থেকে উদ্ধার করেছে একটি দা । পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ওই দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে পরিবারের ৪ সদস্যকে । এছাড়াও মৃত অনু বর্মণের হাতে গ্রামেরই বেশ কিছু লোকের নাম লেখা রয়েছে । এইসব বিষয় সামনে আসতেই মৃতের পরিবারের দাবি টাকা পয়সা ও সম্পত্তির জন্য পরিকল্পনা মাফিক পাঁচ জনকে খুন করা হয়েছে । আজ দুপুরে জামালপুরে আসে তপন থানার OC সৎকার সাংবো-সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকরা । বাড়িটি সিল করে দেয় পুলিশ ।
তপন ব্লকের চন্ডিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ জামালপুর এলাকার বাসিন্দা অনু বর্মণ । পেশায় কৃষক । প্রথমে জামালপুর গ্রামের ভেতরে অন্যান্য শরিকদের সঙ্গে এক জায়গায় বাড়ি ছিল তাঁদের । শরিকের সঙ্গে ঝামেলা ও কিছু কুসংস্কারের কারণে প্রায় 7-8 বছর আগে গ্রাম থেকে বেরিয়ে রাস্তার ধারে বাড়ি করেন অনু । সেখানে বয়স্ক মা, স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন । স্থানীয়রা জানিয়েছে, একটা সময় অনেক সম্পত্তি ছিল তাঁদের । তবে অনুর টিবি রোগ হওয়ার পর থেকেই সেভাবে কাজ করতে পারত না । যার জেরে অনেকটাই জমি জায়গা বিক্রি করেছে । জমি বিক্রির প্রায় ৩ লাখ টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাতে বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা ছিল অনুর । সেই টাকাটা বাড়িতেই ছিল।
রবিবার সকালে অনুর ভাইপো অমিত বর্মণ তাঁদের বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকি করলেও কোনও উত্তর না পায়নি । এরপর পাঁচিল টপকে ভেতরে ঢুকেই দেখে অনু বর্মণের ঝুলন্ত দেহ । পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের রক্তাক্ত দেহ ঘরেই পড়ে আছে । ঘটনার পর থেকে সেই টাকা ও গয়না পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পরিবারের বাকিরা । যদিও পুলিশ সোনা ও টাকার চুরি যাওয়ার কথা অস্বীকার করেছে । গতকাল রাতেই মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে তপন থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে যায় তপন থানার পুলিশ । পরে জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহম্মদ নাসিম-সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকরাও যান । গতরাতে ঘটনাস্থানে যান গঙ্গারামপুর বিধানসভার বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌতম দাসও । কথা বলেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে । এরপর আজ সকালে ঘটনাস্থানে যান তপনের বিধায়ক তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা।
জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত জানিয়েছেন, "ঘটনায় গতরাতে খুনের মামলা দায়ের হয়েছে । আজ বাড়িটি সিল করা হয়েছে, যাতে কোনও তথ্য প্রমাণ লোপাট না হয় । পাশাপাশি বাড়িতে বহিরাগত কেউ এসেছিল কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য আঙুলের ছাপ নেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের জানানো হয়েছে ।"
আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ময়নাতদন্তের রিপোর্টে চলে আসবে । মৃতের হাতে যাদের নাম লেখা ছিল তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে । স্থানীয়দের ও পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ।