হিলি, 4 অক্টোবর : হিলিতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী লাগোয়া ঘরে ঘরে বিক্রি হচ্ছে মাদক । বালুরঘাট সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেশার সামগ্রী কিনতে অনেকেই আসছেন হিলিতে । হিলির বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে চুরির প্রবণতা । অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশেরও মদত রয়েছে এই ব্যবসায় । তবে পুলিশের দাবি ভিন্ন । তিনজন মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে দু'জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । বাকি একজনের খোঁজে তল্লাশি চলছে ।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রায় তিন দিকেই বাংলাদেশ সীমান্ত । মোট 252 কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে এখনও 30 কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত উন্মুক্ত । হিলি ব্লকে সবথেকে বেশি উন্মুক্ত সীমানা রয়েছে । সীমান্তবর্তী হিলিতে চোরাচালানের পাশাপাশি বাড়ছে মাদক পাচার । হিলি থানার পূর্ব কালিকাপুর গ্রামে প্রায় ঘরে ঘরে মুদি দ্রব্যের মতই বিক্রি হচ্ছে নেশার সামগ্রী হেরোইন । ফলে পূর্ব কালিকাপুর তো বটেই, হিলির যুব সম্প্রদায় আসক্ত হয়ে পড়ছে ।
সূত্রের খবর, হিলি ব্লকেই প্রায় 200 থেকে 300 যুবক নিয়মিত মাদক সেবন করে । হেরোইনের তিনরকমের পুরিয়া রয়েছে । সবথেকে ছোটো পুরিয়ার দাম প্রায় 200 টাকা । মাঝারি পুরিয়ার দাম 300 এবং বড় পুরিয়ার দাম প্রায় 500 টাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের নাকের ডগায় হেরোইন বিক্রি হলেও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয় না কোনও ব্যবস্থা । পূর্ব কালিকাপুরের গ্রামবাসীরা একাধিকবার হিলি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে । তবে কোনও লাভ হয়নি । এই ব্যবসার পিছনে শুধুমাত্র পুলিশ নয় রাজনৈতিক মদতও রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ ।
সীমান্তবর্তী এই গ্রামে সেরকমভাবে কোনও কর্মসংস্থান নেই । ফলে লাভের আশায় অনেকেই এই পথে হাঁটছেন বলে দাবি স্থানীয়দের । সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বহিরাগতদের আনাগোনা চলে । এমনকী যুবসম্প্রদায় নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ায় এলাকায় বাড়ছে চুরি প্রকোপ । বাড়ির ছোটো ছোটো জিনিস চুরি যাচ্ছে । স্থানীয়দের দাবি, এই চুরির পিছনে রয়েছে হেরোইন আসক্ত যুবকরা । বাড়ির থালা, বাটি, বালতি থেকে দোকান এবং মসজিদের বিভিন্ন জিনিস চুরি যাচ্ছে । কখনও চোর ধরা পড়ছে, আবার কখনও ধরা পড়ছে না । স্থানীয়দের আশঙ্কা, অবিলম্বে পুলিশ প্রশাসন বিষয়টির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হবে হিলিতে ।
এবিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মঞ্জুয়ার বিবি জানান, পূর্ব কালিকাপুরের প্রায় ঘরে ঘরে হেরোইন বিক্রি হয় । শুধুমাত্র হেরোইন নয় । বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা ট্যাবলেট, গাঁজাও । গ্রামের বেশির ভাগ যুবক নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে । একাধিকবার হেরোইন বিক্রি বন্ধের জন্য হিলি থানায় জানিয়েছেন স্থানীয়রা । পুলিশ কোনওরকম কর্ণপাত করেনি । তাঁদের ধারণা হেরোইন ব্যবসায় মদত আছে পুলিশের । এই ব্যবসা গ্রামে বন্ধ হোক ।
অন্য এক স্থানীয় বাসিন্দা মোশারফ মণ্ডল জানান, তাঁর ভাই হেরোইনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছিল । এক সময় সে আত্মহত্যাও করতে যায় । গ্রামের অন্যান্য যুবক এই নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে । নেশার টাকা না পেয়ে অন্য এলাকায় গিয়ে চুরি করছে তারা । চুরির টাকা দিয়ে ফের ফের নেশা করছে তারা । গ্রামে দিন দিন চুরির প্রবণতা বাড়ছে ।
যদিও পুলিশের দাবি ভিন্ন । DSP হেডকোয়ার্টার ধীমান মিত্র জানান, হিলির পূর্ব কালিকাপুরে অভিযুক্ত তিনজনের মধ্যে দু'জনকেই সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে । তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয় । বাকি একজনের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে ।