বংশিহারী(দক্ষিণ দিনাজপুর), 19 এপ্রিল: নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে টাঙ্গন নদী ৷ সেই নদী পারাপার করতে গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো ৷ এখন গ্রীষ্মকাল তাই জল সেরকম নেই ৷ কিন্তু বর্ষা এলেই বাড়বে নদীর জল ৷ তখন ছয়মাস বাঁশের সাঁকোও আর কাজে আসবে না ৷ পারাপার করতে হবে নৌকো করে ৷ পাকা সেতুর দাবি সেখানকার মানুষজনের বহুদিনের ৷ 34 বছর বাম, তারপরে 11 বছর তৃণমূল । একের পর এক সরকার বদল হলেও পরিস্থিতির বদল হয়নি ৷ ফলে স্কুল পড়ুয়া থেকে বয়স্ক, দেউড়িয়া গ্রামের সকলকেই নদীর এপার থেকে ওপার যেতে হচ্ছে এই ভাবেই ৷ বহু প্রতিশ্রুতি মিললেও তা বাস্তবায়িত হয়নি বলে ক্ষোভ গ্রামবাসীদের ৷ পাকা সেতু না হওয়ায় আজও বহু কষ্টে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাইক সমেতও পারাপার হচ্ছে লোকজন ।
কংগ্রেস, বাম ও তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা সবাই জানে বংশিহারী গাঙ্গুরিয়া পঞ্চায়েতের দেউড়িয়া ঘাটে টাঙ্গন নদীর উপর বাঁশের সাঁকোর কথা । ভোটের আগে শুধুই মিলেছে প্রতিশ্রুতি। সেতু তৈরি করার জন্য কয়েকবার মাপজোক পর্যন্ত হয়েছে । এক সময় প্রচার পর্যন্ত হয়েছে কয়েকদিনের মধ্যেই রড, সিমেন্ট ,ইট ,বালি পড়বে সেতু নির্মাণের জন্য । দেউড়িয়া টাঙ্গন নদী পার হলেই ওপারে রয়েছে সিংরাইল, বাজিতপুর, আইঘড়া, বলিপুকুর, পাটুল, কেলাদরি, হরিপুর, গণেশপুর গ্রাম । বুনিয়াদপুর থেকে নালাগোলা যেতে এই পথ দিয়ে গেলে আট কিলোমিটার রাস্তা কম হয় ।
সারাবছর বাঁশের সাঁকোয় কখনও নৌকা করে এপারে হাট-বাজার করতে আসেন ওই এলাকার লোকজন । অপরদিকে দেউড়িয়া-সহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের ছেলে মেয়েরা 200 মিটার লম্বা বাঁশের সাঁকোয় বা নৌকায় পার হয়ে বাজিতপুর হাই স্কুলে পড়াশোনা করতে যায় । জানা গিয়েছে, স্থানীয় গ্রাম্য সমাজের ছট পুজো কমিটির পক্ষ থেকে বাঁশের সাঁকোটি করা হয়েছে । বর্ষায় যখন নদীতে জল বাড়ে তখন তাদের পক্ষ থেকে নৌকাই পারাপারের জন্য ব্যবস্থা করা হয় । যৎসামান্য পয়সার বিনিময়ে মানুষ,সাইকেল, মোটরসাইকেল পারাপার করছে । তবে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে পারাপারের জন্য কোনও টাকা নেওয়া হয় না ।
শিংরাইল গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব শমসের মিয়া জানান, বাপ ঠাকুরদার আমল থেকেই সারা বছর অতি কষ্টে পারাপার হয়ে আসছেন তারা । ছোট থেকে শুনছেন ব্রিজ হবে । আজ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন শুধুই ভরসা বাঁশের সাঁকো। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হয়তো এই বাঁশের সাঁকোই দেখে আসবেন তিনি বলে জানাচ্ছেন।
দেউড়িয়া গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী কোয়েল চৌধুরী জানায়, পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত এভাবেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে টাঙ্গন নদী পার হয়ে স্কুলে যাচ্ছে সে । ব্রিজটি হলে এলাকার ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা হবে । প্রতিদিন প্রায় একশো জন ছাত্রছাত্রী এভাবেই স্কুলে যায়। বংশিহারী ব্লকের বিডিও সুদেষ্ণা পাল বলেন, "দেউড়িয়া এলাকায় সেতু করার বিষয়টি আমরা অনেকবার করে জেলা প্রশাসনের কাছে জানিয়েছি। তবে এই ব্রিজ করতে গেলে প্রচুর টাকা পয়সার দরকার । আমরা নতুন করে আবারও জেলা প্রশাসনের কাছে জানাচ্ছি এই ব্রিজের বিষয়ে।"
আরও পড়ুন: তৈরির বছরে ভাঙল সেতু, বাঁকুড়ায় ভোগান্তিতে গ্রামবাসী