বালুরঘাট, 4 আগস্ট: তৃণমূলের 10 জন কাউন্সিলরকে প্রায় 10 দিন ধরে বালুরঘাটের রঘুনাথপুর এলাকার একটি বেসরকারি হোটেলে নজরবন্দী করে রাখা হয়েছে । হোটেলের সামনে 24 ঘণ্টার জন্য মোতায়েন রয়েছে পুলিশ ৷ কলকাতা হাইকোর্ট গঙ্গারামপুর পৌরসভার 18 জন কাউন্সিলরের নিরাপত্তার জন্য জেলা পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিল ৷ সেখানে 10 জনকে নিরাপত্তা দেওয়ার নামে নজরবন্দী করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্র । যদিও গঙ্গারামপুর পৌরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু সরকার সাফ জানিয়েছেন, তাঁর কাউন্সিলরদের কোথায় রাখা হবে সেটা তাঁদের ব্যাপার ।
আরও পড়ুন: নজরদারি চালাতে গঙ্গারামপুরের কাউন্সিলরদের বাড়ির সামনে বসছে CCTV !
উল্লেখ্য, চলতি বছর 24 জুন তৃণমূল নেতা বিপ্লব মিত্র BJP-তে যোগ দেন ৷ এরপরই গঙ্গারামপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্রের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন 10 জন কাউন্সিলর । 25 তারিখ প্রশান্ত মিত্র ও তাঁর ভাই চিরঞ্জীব মিত্রকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় । এদিকে অনাস্থা আনার কিছুদিনের মধ্যেই পৌর আইনের বলে প্রশান্তবাবু তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু সরকারকে সংশ্লিষ্ট পদ থেকে অপসারণ করেন । নতুন ভাইস চেয়ারম্যান পদে তুলসিপ্রসাদ চৌধুরিকে বসান । পাশাপাশি গঙ্গারামপুর পৌরসভার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন । যার ফলে গত 23 জুলাই তলবি সভার উপর স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট । চলতি মাসে 5 তারিখ অনাস্থা সংক্রান্ত বৈঠকের কথা বলা হয় ৷
গঙ্গারামপুর পৌরসভার 18 জন কাউন্সিলরকে নিরাপত্তা দিতে হবে ৷ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট । এদিকে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর থেকেই অর্পিতা ঘোষ ঘনিষ্ঠ গঙ্গারামপুর পৌরসভার 10 তৃণমূল কাউন্সিলরকে কলকাতাসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে ঘোরা হয় । গতমাসের 26 তারিখ ওই 10 জনকে জেলায় ফেরত আনা হয় । সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে দাবি করে তাঁরা জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন । এদিকে ওই দিন থেকেই ওই কাউন্সিলরদের বালুরঘাটের একটি বেসরকারি হোটেলে রাখা হয় ৷ সারাক্ষণের জন্য হোটেলের চারপাশে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ ৷
আরও পড়ুন: গঙ্গারামপুর পৌরসভা : তৃণমূলের আনা অনাস্থার নোটিশ খারিজ হাইকোর্টের
এবিষয়ে প্রশান্ত মিত্রের বক্তব্য, অনাস্থা আনার পর থেকেই ওই কাউন্সিলরদের বিভিন্ন জায়গায় রাখা হচ্ছে । যাতে তাঁরা কোনওভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না রাখতে পারেন ৷ এখন তাঁদের বালুরঘাটের একটি হোটেলে নজরবন্দী করে রাখা হয়েছে । যেখানে 24 ঘণ্টার জন্য মোতায়েন রয়েছে পুলিশ । হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল 18 জনের নিরাপত্তা দিতে হবে ৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে মাত্র 10 জনকে নিরাপত্তা দেওয়ার নামে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে । তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, বাকি 8জনকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি কেন ?
অন্যদিকে অমলেন্দুবাবু বলেন, "ও (প্রশান্ত মিত্র) বলবার কে? ও (প্রশান্ত মিত্র) তৃণমূল তো করে না । করে BJP ৷ যার জন্য জেলা তৃণমূল সুপ্রিমো সারা জীবনের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করেছে । ও (প্রশান্ত মিত্র) বলার কে আমার কাউন্সিলর কোথায় থাকবে না থাকবে । কোথায় আটকে রাখব ? কী করব ? সেটা আমাদের ব্যাপার । যারা তৃণমূল করবে তারা তৃণমূলে থাকবে । যারা তৃণমূল করবে না তারা BJP-তে যাবে । এই তো কথা । ওদের সঙ্গে পারিবারিক ঝগড়া নয় । রাজনৈতিক ঝগড়া ।"
আরও পড়ুন: নতুন ভাইস চেয়ারম্যান বসিয়ে আস্থা ভোটে সময় নিলেন প্রশান্ত মিত্র
অন্যদিকে BJP-র জেলা সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার বলেন, "গঙ্গারামপুর পৌরসভার 18 জন কাউন্সিলরকেই নিরাপত্তা দিতে বলেছে আদালত । কিন্তু 10 জনকে 10 দিন ধরে হোটেলে নজরবন্দী করে রাখা হয়েছে ৷ এর আগে এমন হয়েছে বলে কোনওদিন তাঁরা শোনেননি । গঙ্গারামপুর পৌরসভা দখল করতেই প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে এই ঘৃণ্যতম পন্থা অবলম্বন করেছে শাসকদল । তবে বেশিদিন এসব চলবে না । এভাবে মানুষকে আটকে রাখা সম্ভব নয় ।"
আরও পড়ুন: গঙ্গারামপুর পৌরসভা : 16 কাউন্সিলর তাঁর সঙ্গে, দাবি প্রশান্তর
যদিও জেলা পুলিশ প্রশাসন এবিষয়ে কিছু বলতে চায়নি ।