বাসন্তী, 25 এপ্রিল: ‘অ এ অজগর আসছে তেড়ে’, কিংবা ‘খোকা গেল মাছ ধরতে’ ছড়া থেকে শুরু করে ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’-র মতো গান শিখছে প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা ৷ তবে, এতে কোনও নতুনত্ব নেই ৷ পড়ুয়ারা স্কুলে এসব শিখবে এটাই স্বাভাবিক ৷ কিন্তু বিষয় হল, এগুলো যাঁর কাছ থেকে শিখছে এই খুদেরা, তিনি একজন বিশেষভাবে সক্ষম মহিলা ৷ তিনি কনকবালা মাইতি ৷ বাসন্তীর চুনাখালি হাটখোলার বাসিন্দা ৷ গ্রামের ছেলে-ছোকড়া এবং একাংশ মানুষ তাঁকে পাগল বলে রাগায় ৷ রাস্তা দিয়ে গেলে কেউ জল ছিটিয়ে দেয়, তো কেউ মুখ ঝামটা দিয়ে তাড়িয়ে দেয় ৷
কিন্তু, বাসন্তীর চুনাখালি হাটখোলা অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা কনকবালা দেবীর মধ্যে একটি অন্য বৈশিষ্ট্য দেখেছেন ৷ তিনি বাচ্চাদের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন ৷ ছড়ার মাধ্যমে শেখাতে পারেন অনেক কিছু ৷ তাই কনবালা মাইতিকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে স্কুলের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের কিছুক্ষণের জন্য পড়ানোর ৷ উদ্দেশ্য, স্কুলের পরিবেশে এনে তাঁকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সাহায্য করা ৷ স্কুল পড়ুয়াদের জন্য রান্না হওয়া মিড-ডে মিল থেকে কনকের জন্য দু-মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ ৷
পাশাপাশি যাতে কনকবালা মাইতির রাতের খাবারের কোনও অসুবিধা না-হয়, সেই দায়িত্বও নিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিমাই মালি ৷ এ তো গেল একটা দিক ৷ তাঁকে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা ৷ স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, তিনি লক্ষ্য করেছিলেন প্রতিদিন খিদের জ্বালায় স্কুলের গেটের সামনে বসে থাকা কনকের সঙ্গে স্কুলের পড়ুয়াদের বেশ বন্ধুত্ব হয়েছে ৷ তাদের সঙ্গে নানা ধরনের খুনসুটি করেন তিনি ৷ বিভিন্ন ধরনের ছড়া শিশুদের খেলার ছলে শোনান তিনি ৷
আরও পড়ুন: মাধ্যমিকে 'পা দিয়ে' লিখে স্বপ্ন জয় করতে চান মানসী
আর খুদে পড়ুয়ারা সেগুলি তাঁর সঙ্গে মনে আনন্দে বলছেও ৷ বিষয়টি বেশ কিছুদিন লক্ষ্য করার পর প্রধান শিক্ষক স্কুলের টিফিনের সময় কনককে স্কুলের প্রাঙ্গণে নিয়ে আসেন ৷ সেখানে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়ানোর কথা বলেন ৷ সে কথা শুনে ভীষণ খুশি হন কনকবালা মাইতি ৷ এরপর হাত-পা নাড়িয়ে কিছুটা ব্রতচারী ভঙ্গিতে ছোট ছোট পড়ুয়াদেরকে ছড়া শোনাতে থাকেন তিনি ৷ পড়ুয়ারাও অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে তাঁদের প্রিয় কনক দিদির সঙ্গে ছড়া কাটছে ৷ সেই ভিডিয়ো এখন সোশাল মিডিয়ার দৌলতে ভাইরালও হয়েছে ৷