গোসাবা, 13 জুন : যশ-বিধ্বস্ত সুন্দরবনে ত্রাণ দিতে আসছে সরকারি ও বেসরকারি বহু সংস্থা । সেই ত্রাণের সঙ্গে সুন্দরবনে ঢুকছে প্লাস্টিক । গত কয়েকদিনে গোসাবা বাজার, পাখিরালয়, জটিরামপুর, ছোটোমোল্লাখালি, রাঙাবেলিয়া ও কুমিরমারীতে প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগ, বোতল, জলের পাউচে ভরে গিয়েছে এলাকা । ফলে দূষণ বাড়ছে সুন্দরবনে । পাশপাশি বাদাবনের বাস্তুতন্ত্রে এই জমে থাকা প্লাস্টিক মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন সুন্দরবনবাসীরা।
এখনও প্রতিদিন অন্তত চার থেকে পাঁচটি করে দল ত্রাণ নিয়ে ঢুকছে । এক একটি দল 400-500 পরিবারের হাতে প্যাকেটবন্দি খাবার তুলে দিয়ে যাচ্ছেন । অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের প্যাকেটেই খাবার দেওয়া হচ্ছে । অর্থাত্ শুধু এই এলাকাতেই সপ্তাহে অন্তত কয়েক হাজার প্লাস্টিক জমছে । এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে দক্ষিণ 24 পরগণা জেলার উপকূল এলাকায় কী পরিমাণে প্লাস্টিক জমা হচ্ছে !
পরিবেশবিদরা বলেন, "ত্রাণের সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর প্লাস্টিক সুন্দরবনে ঢুকে পড়ছে । সেগুলি মিশছে নদীর জলে । জোয়ার ভাঁটার সঙ্গে তা আরও বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছে । এর ফলে একদিকে যেমন জলজ প্রাণীদের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই ভূমিক্ষয় বাড়ছে । যাঁরা ত্রাণ দিতে আসছেন, তাঁদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে ৷"
এক পরিবেশকর্মী বলেন, "এটা একটা বড় সমস্যা । অতীতে দেখা গিয়েছে জলের সঙ্গে এই প্লাস্টিক প্যাকেট হরিণ, শুশুক, কুমিরের পেটে চলে গিয়েছে । গলায় প্লাস্টিক আটকে হরিণের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে । সুতরাং মানুষের উপকার করতে গিয়ে অনেকেই সুন্দরবনের বিপদ ডেকে আনছেন ।"
প্রশাসন অবশ্য নানা ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে । প্লাস্টিকের পরিবর্তে চট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে অনেক জায়গাতেই । প্রশাসনের তরফে পড়ে থাকা প্লাস্টিক সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কোথাও কোথাও । কোথাও আবার প্রশাসনের দেওয়া জলের প্লাস্টিক পাউচ জমে থাকার অভিযোগও উঠছে ।
গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র বলেন, "যাঁরা ত্রাণ দিতে আসছেন, তাঁদের বারবার প্লাস্টিক সম্পর্কে বার্তা দেওয়া হচ্ছে । কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই শুনছেন না । ইতিমধ্যেই আমরা দ্বীপাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পড়ে থাকা প্লাস্টিক সংগ্রহের কাজ শুরু করেছি । এই কাজে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ব্যবহার করা হচ্ছে ।" দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, "আমরা এ বিষয়ে নানা ভাবে প্রচার চালাচ্ছি ।"
আরও পড়ুন : গ্রহণ-কোটালের জোড়া ফলার ভয়ে ফের দুর্যোগের শঙ্কা গোসাবায়
ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্লাস্টিক প্যাকেট, জলের বোতল সংগ্রহ করে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে । গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের অফিসাররা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন । চম্পাহাটির সমাজসেবী প্রসেনজিৎ মিস্ত্রি জানান, তাঁরা সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় গ্রামের মানুষদের থেকে পুরানো 10টি বোতল নিয়ে একটি উন্নত মানের জলের বোতল দিচ্ছেন । তাঁরা সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে পুরানো বোতল সংগ্রহ করবেন ।