গঙ্গাসাগর, 27 ডিসেম্বর: অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক দিনের ৷ জানুয়ারি মাসের 8 তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা ৷ মেলার আগে আগে বহু পুণ্যার্থী ভিড় জমিয়েছে গঙ্গাসাগরের কপিলমুনি মন্দির চত্বরে ৷ এই বছর রেকর্ড সংখ্যক পুণ্যার্থীদের সমাগম হতে পারে সাগর সঙ্গমে ৷ রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে গঙ্গাসাগর মেলাকে (Gangesagar Mela 2023) কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তা চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে ৷ গঙ্গাসাগর মেলায় পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় কোনও খামতি রাখতে চাইছে না রাজ্য সরকার ৷ ইতিমধ্যে মেলার দিনগুলিতে সুন্দরবন পুলিশ জেলার পক্ষ থেকে প্রায় 13 হাজার অস্থায়ী হোমগার্ড নিয়োগ করা হবে বলে জানা গিয়েছে ৷ 30 জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার অফিসার সর্বক্ষণ নজরদারি চালাবেন ৷
মেলার জন্য পুলিশের 12টি সেক্টর-সহ সাব সেক্টর ঢেলে সাজানো হয়েছে ৷ ভিড় সমাল দিতে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা দুটো সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে ৷ মুড়িগঙ্গা নদী পেরনোর আগে মূল ভূখণ্ড ট্র্যাফিক পুণ্যার্থীদের ভিড় সামাল দেবে ৷ আর সাগরদ্বীপের জন্য আইল্যান্ড ট্র্যাফিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ৷ যাত্রী পারাপারের জন্য পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে 6টি বার্জ, 45টি ভেসেল ও 8টি লঞ্চের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে ৷ মহিলা পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্য মহিলা পুলিশের 30টি উইনার্স টিম নজরদারি চালাবে মেলা প্রাঙ্গণ ও আশেপাশের এলাকায় ৷
এই দলের সদস্যরা দিনেরাতে মোটরবাইকে নজরদারি চালাবে ৷ কলকাতা ও ডায়মন্ডহারবার পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রাখার জন্য সুন্দরবন পুলিশের দু'টি দল বাবুঘাট ও পৈলানে মোতায়েন থাকবে ৷ পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে এবারও সুন্দরবন পুলিশ জেলার পক্ষ থেকে গঙ্গাসাগর সহায়তা অ্যাপ চালু রাখা হবে ৷ গঙ্গাসাগরের সমুদ্রতটে ও সমুদ্রস্নানের উপর নজরদারি চালানোর জন্য পুলিশের প্যাট্রলিং টিম রাখা হবে ৷ আগে অস্থায়ী টাওয়ারের মাধ্যমে রেডিয়ো টেলিফোনি (আরটি) কমিউনিকেশনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হত ৷ রাজ্য সরকার এ বছর লট নম্বর আট, কচুবেড়িয়া থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত স্থায়ী টাওয়ার বসিয়েছে ৷ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এই কমিউনিকেশন সিস্টেম আরও উন্নত করা হয়েছে ৷
আরও পড়ুন: গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণে কালীঘাট-সহ রাজ্যের 5টি মন্দিরের অস্থায়ী কাঠামো
পুলিশের পক্ষ থেকে 7টি কন্ট্রোল রুম ও 14টি সাব কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে ৷ আগামী 10-15 জানুয়ারি পর্যন্ত এই কন্ট্রোল রুম থেকে 24 ঘন্টা নজরদারি চালানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হবে ৷ এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে 91 টি মোটরবাইক প্যাট্রলিং টিম রাখা হবে ৷ এর মধ্যে কলকাতা পুলিশের 20 টি মোটরবাইক প্যাট্রোলিং টিম থাকবে ৷ জলপথে নজরদারি চালানোর জন্য 19টি লঞ্চ ও 6টি স্পিডবোট দিয়ে প্যাট্রোলিং চালানো হবে ৷ এ বারের মেলাতে অ্যান্টি ক্রাইম প্যাট্রলিং টিমের উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে ৷ মেলায় 23টি অ্যান্টি ক্রাইম প্যাট্রোলিং টিম সাদা পোশাকে নজরদারি চালাবে ৷ মেলা প্রাঙ্গণের পাশাপাশি সমুদ্রতট ও কচুবেড়িয়া পয়েন্টে সবচেয়ে বেশি নজরদারি চালানো হবে ৷ মেলায় আসা যাওয়ার পথে পুণ্যার্থীদের ভিড় সামাল দেওয়া বা ক্রাউড কন্ট্রোলের জন্য বাফার জোনের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে ৷ জেটিঘাটগুলিতে ভিড় জমলেই বাফার জোনে আটকে দেওয়া হবে পুণ্যার্থীদের বাস-সহ বিভিন্ন গাড়ি ৷ পরে ধীরে ধীরে পুণ্যার্থীদের পাস করানো হবে ।
নাশকতা দমনের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে 6টি অ্যান্টি-সাবোটেজ টিম রাখা হবে ৷ 2টি বোমা ডিসপোজাল টিম রাখা হচ্ছে ৷ নজরদারির জন্য স্নিফার ডগ রাখা হবে ৷ এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ, এনডিআরএফ কোস্টগার্ড-সহ অন্যদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কড়া নজরদারি চালানো হবে ৷ পুলিশের তরফে 415টি সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি চালানো হবে ৷ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে 2 হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি চলবে ৷ এই সব সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি সরাসরি পুলিশ ও প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে ৷ যদি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাধীন এলাকায় কোনও গোলমাল বা সমস্যা তৈরি হয়, তা হলে তড়িঘড়ি কন্ট্রোল রুম থেকে পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হবে ৷ সিসিটিভি ক্যামেরা ছাড়াও ১১ টি ড্রোনের মাধ্যেমে পুলিশের পক্ষ থেকে নজরদারি চালানো হবে ৷