পাথরপ্রতিমা, 19 জুন : কাকদ্বীপের বামানগর সুবালা উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র সৌমেন। ছোটবেলা থেকেই সে দেখে আসছে পরিবারের দারিদ্রতা। সৌমনের বাবা, মা দু'জনেই পরিযায়ী শ্রমিক। বাবা তপন পাত্র দিল্লিতে গাড়ি ধোওয়ার কাজ করেন ও মা অনিমা পাত্র সেখানেই পরিচারিকার কাজ করেন। পরিবারে চরম দারিদ্রতা থাকলেও, শত কষ্টের মধ্যেও কোনওদিন পড়াশোনা ছাড়েননি সৌমেন। অভাব ও দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে উচ্চমাধ্যমিকে অষ্টম স্থান অধিকার করেছে এই কৃতী ছাত্র (Soumen Patra From South 24 Parganas Ranked 8th in HS Exam 2022) ।
পরিবারের আর্থিক সংকট কাটাতে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে দিল্লি চলে যান সৌমেনও। দিল্লিতে একটি ছোট সংস্থায় কাজও শুরু করেন। পড়াশোনার হাল ছেড়ে দিয়ে বাবা, মার পাশে দাঁড়ানোই ছিল তাঁর লক্ষ্য। পরীক্ষার 81 দিনের মাথায় অর্থাৎ 10 জুন প্রকাশিত হয়েছে উচ্চমাধ্যমিকের ফল। দিল্লিতে থাকাকালীনই এক বন্ধুর কাছ থেকে সৌমেন খবর পান, উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন তিনি। এই খবর পাওয়ার পরেই বাড়ি ফিরে এসেছেন সৌমেন ৷ তাঁর লক্ষ্য আরও পড়াশোনা করে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া।
আরও পড়ুন : বিদ্যাসাগরের জীবন সংগ্রামই অনুপ্রেরণা! খেত মজুরি করেও উচ্চমাধ্যমিকে অষ্টম প্রিয়াঙ্কা
সৌমেন বলেন, "ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রতার মধ্যে বেড়ে ওঠা। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর কোনও উপায় ছিল না। পরীক্ষার পর আমি সিদ্ধান্ত নিই পরিবারের পাশে দাঁড়াব ৷ বাবা, মায়ের সঙ্গে দিল্লি চলে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের পাশে দাঁড়ানো ৷ পরীক্ষা ভাল হয়েছিল কিন্তু এত ভাল নম্বর হবে আমি ভাবতেই পারিনি। আমার ইচ্ছা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে একটা চাকরি পেয়ে বাবা, মাকে দিল্লি থেকে গ্রামে ফিরিয়ে আনব। দিল্লি থাকার কারণে রাজ্যে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় আমার বসা হয়নি। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে পড়াশোনার অনেক খরচ৷ পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। যদি আমার পড়াশোনা জন্য সরকার এগিয়ে আসে, তাহলে পড়াশোনা আবার আমি শুরু করতে পারব ৷ না হলে ফের দিল্লিতে ফিরে যেতে হবে।"
সৌমেনের দিদি শম্পা বর্মন বলেন, "ভাই ছোটবেলা থেকে বরাবরই মেধাবী ছাত্র। মাধ্যমিকে 75 শতাংশের কাছাকাছি নম্বর পেয়েছিল। কিন্তু মাধ্যমিকের পর পড়াশোনার সময় অনেকটা বাড়িয়েছিল। পরিবারে অভাব ৷ 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' বাবা, মা সকলেই দিল্লিতে থাকেন। ভাই উচ্চমাধ্যমিকের পর বাবা, মার কাছে দিল্লিতে চলে যায় সেখানে গিয়ে বাবা-মার পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে এত ভাল ফল করায় আমরা সবাই আনন্দিত ৷ কিন্তু ভাইয়ের স্বপ্ন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া, ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারবে না বাবা, মা। ভাইয়ের পড়াশোনার ক্ষেত্রে সরকার যদি এগিয়ে আসে তাহলে তাঁর স্বপ্ন পূরণ হবে।"
আরও পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিকে সাফল্যের চূড়ায় স্নেহা, চিত্রশিল্পী হওয়ার স্বপ্নে বাধা অর্থাভাব
এ কথা শুনে ইতিমধ্যেই সৌমেনের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও বিধায়ক। শ্রীধরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রদ্যুৎ বর্মন বলেন, "সৌমেন পাথরপ্রতিমার গর্ব, ছোটবেলা থেকে চরম দারিদ্র্যতার মধ্যে বড় হয়েছে। দারিদ্র্যতাকে হার মানিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে এত ভাল ফলাফল করেছে।" পাথরপ্রতিমার বিধায়কও সৌমেনের পড়াশোনার ক্ষেত্রে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।