ক্যানিং, 8 জুন : খুব বড় ঝড় আসতে চলেছে জানিয়েছিল প্রশাসন ৷ সেই মতো গ্রামের সবাইকে নিরাপদস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ৷ সেখানে বসে বাইরে আমফানের তাণ্ডব দেখেছিলেন নীলমণি, প্রতিমারা ৷ কয়েক ঘণ্টা পর যখন সব শান্ত, তখন একে একে নিজেদের বাড়ি ফেরা শুরু ৷ বাড়ি ফিরে যে কী দেখতে হবে তা নিয়ে আশঙ্কা ছিলই ৷ ক্যানিং 2 নম্বর ব্লকের মৌখালি গ্রাম ৷ এটাই নীলমণি হালদার, প্রতিমা সর্দারদের ঠিকানা ৷ গ্রামে পৌঁছে বুকটা যেন কেঁপে উঠল ৷
গ্রামের রাস্তাটাই আর নেই ৷ ভেঙে গিয়েছে রাস্তা ৷ যত দূর চোখ যায়, শুধু জল ৷ রাস্তা নেই, চাষের জমি নেই, পুকুর নেই ৷ পুরো গ্রামটাই জলের তলায় ৷ ভেঙে গিয়েছে মাতলা নদীর বাঁধ ৷ কেউ যেন এসে নিজের হাতে সব লন্ডভন্ড করে দিয়ে গিয়েছে ৷ কারও বাড়ির অস্তিত্বই নেই ৷ মাটির বাড়ি পুরোটাই ভেঙে পড়ে গিয়েছে ৷ কারও বাড়ি থাকলেও নেই ছাদ ৷ এতদিন লকডাউন-কোরোনায় দুর্দশার দিন কাটাচ্ছিলেন ৷ তার উপর থাবা বসাল আমফান ৷ এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ৷ আমফানের জেরে মাথার ছাদ, মুখের ভাত দু'টোই হারিয়েছে বহু মানুষ ৷
বিঘার পর বিঘা জমি জলের তলায় ৷ ভেসে বেড়াচ্ছে মৃত প্রাণীদের দেহ ৷ জলের মধ্যেই মরে পড়ে আছে মাছ ৷ নেই পানীয় জল, নেই স্নানের জল ৷ নোনা জলে ভরে গিয়েছে চারিদিক ৷ এর মধ্যে কোরোনার জন্য সামাজিক দূরত্ব মানবেন নাকি এক হয়ে নিজেদের গ্রাম সামলাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না নীলমণিরা ৷ থাকার জায়গা নেই, খাবার নেই ৷ মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার, গ্লাভস তাঁদের কাছে এখন আড়ম্বরের সমান ৷
প্রশাসন সূত্রে খবর, মাতলা নদীর বাঁধ ভেঙে মৌখালি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার বিঘা জমি জলের তলায় ৷ কয়েকশো কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছে প্রশাসন ৷ আগামী চার-পাঁচ বছর এই জমিতে কোনও ফসল উৎপাদন হবে না বলেও রয়েছে আশঙ্কা ৷ নোনা জলে ভরে যাওয়ায় মিষ্টি জলের মাছে যেন মড়ক লেগেছে ৷ প্রশাসনের তরফে এলাকায় কমিউনিটি কিচেন তৈরি করা হয়েছে ৷ সেখানে একবেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা ৷
আয়লার 10 বছর পর ধীরে ধীরে ওই এলাকার জমি চাষযোগ্য হয়ে উঠেছিল ৷ কিন্তু, আমফানের জেরে আবার নোনা জল ভরে যাওয়ায় ফের আতঙ্কিত এলাকার চাষিরা ৷ স্থানীয়রা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিউনিটি কিচেনের পাশাপাশি সবরকম সাহায্য করছে প্রশাসন ৷ কিন্তু, আগামী চার-পাঁচ বছর কোনও চাষ করা যাবে না ৷ আগামী বছরগুলোতে কীভাবে রোজগার করবেন, কীভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে চিন্তিত তাঁরা ৷