জয়নগর, 17 অক্টোবর : ঠিক যেন চণ্ডাশোক থেকে ধর্মাশোক হয়ে যাওয়ার গল্প । একসময় এলাকার ডাকাত দলের দোর্দণ্ড প্রতাপ নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন রামপদ মণ্ডল । নাম শুনেই ভয়ে কাঁপত এলাকা । বেশ কয়েকটা খুনও করেছেন । শুধু এলাকাতেই নয়, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমানের পাশাপাশি ভিনরাজ্যেও করেছেন ডাকাতি ৷ সেই মানুষ আজ হয়ে গিয়েছেন একেবারে অন্যরকম ৷ ডাকাতি ছেড়ে তৈরি করেছেন হরিনামের দল ৷ সময় কাটে গীতা নিয়েই ৷
মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করে ডাকাতি ছাড়েন রামপদ ৷ বদলে গিয়েছেন তাঁর মায়ের নির্দেশে । অস্ত্র ছেড়ে হাতে তুলে নিয়েছেন গীতা । জয়নগরের পিয়ালী নদীর পাড়ে মেরিগঞ্জ ঘাটের কাছে ছোট্ট একটি মাটির বাড়ি । সেই বাড়িতেই এখন জীবন কাটে বৃদ্ধ রামপদর । দেখে বোঝাই যায় না এক সময় লুটপাট, ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৷ তাঁর হাতে একাধিক খুন পর্যন্ত ঘটেছে ।
কীভাবে দস্যুবৃত্তিতে চলে এসেছিলেন তিনি, নিজের মুখেই সে কথা বললেন বৃদ্ধ ৷ পরিবারের অভাব ঘোচাতে গরুপাচারের সঙ্গে যুক্ত হন ৷ ধরা পড়ে জেলেও যেতে হয় ৷ সেখানেই ডাকাত দলের সঙ্গে পরিচয় ৷ তারপরই পুরোপুরি দস্যুবৃত্তিতে নামা ৷ একের পর এক ডাকাতি ও লুট চলতে থাকে । শুধু জেলা বা রাজ্যই নয়, ভিনরাজ্যেও দলবল নিয়ে ডাকাতি করেছেন তিনি ৷ নিজেই বললেন সেকথা ৷ একাধিক খুনও হয় তাঁর হাতে ৷ খুনের কারণ কী ছিল তা বলতে গিয়ে রামপদ জানান, তাঁর দলের নিয়ম ছিল, কোনও মহিলাকে হেনস্থা করা যাবে না । দলের সেই নিয়ম না মানায় নিজের চার-পাঁচজন সঙ্গীকে খুন করেছিলেন তিনি । সব মিলিয়ে জেলও খেটেছেন অনেকবার ।
বছর কুড়ি আগে মায়ের নির্দেশে ঘুরে দাঁড়ান রামপদ । তাঁর কথায়, "মা একবার দিব্যি করিয়েছিল যাতে ডাকাতি ছেড়ে দিই । মায়ের মাথা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেই ডাকাতি ছেড়ে দিয়েছি ।" তারপর থেকেই জীবন বদলেছে রামপদর । অস্ত্র ছেড়ে গীতা ও পুরাণ পাঠেই শান্তি খুঁজে নিয়েছেন তিনি । এখন তাঁর স্বপ্ন এলাকায় একটি মন্দির এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করবেন ৷ তাঁর এই পাল্টে যাওয়ার গল্পই এখন এলাকার বাচ্চা থেকে বুড়ো সবার মুখে মুখে ।
আরও পড়ুন : Bacon Bungalow: গোসাবায় পর্যটক টানতে সেজে উঠছে বিশ্বকবির স্মৃতি জড়ানো বেকন বাংলো