মৌসুনি দ্বীপ, 10 ডিসেম্বর: প্রত্যেক বছর একের পর এক বিধ্বংসী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তছনছ হয়ে গিয়েছিল মৌসুনি দ্বীপের একাংশ ৷ ফণি, বুলবুল, আমফান, যশের মতো দুর্যোগে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবনের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মৌসুনি ৷ এই ছোট্ট দ্বীপটির বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি, চাষের জমি সবকিছু নষ্ট হয়ে যায় ৷ পাশাপাশি এই দ্বীপে গড়ে ওঠা রিসর্ট, কটেজও ভেঙে যায় ৷ স্বাভাবিকভাবে পর্যটন ব্যবসায়ীদের প্রভূত ক্ষতি হয় ৷ এখনও প্রতি পূর্ণিমা ও অমাবস্যার কোটালে প্লাবিত হয়ে যায় উপকূলের এলাকাগুলি ৷ তাই বারবার ধাক্কা খাচ্ছে পর্যটন ব্যবসা ৷ এদিকে শীত এসেছে বাংলায় ৷ এই সময় মৌসুনি দ্বীপে সুদিন ফিরবে বলে মনে করছেন এলাকার পর্যটন ব্যবসায়ীরা ৷
শীতের মরশুম মানেই মৌসুনি দ্বীপে পর্যটকদের আনাগোনা ৷ তাই নতুন করে সাজছে মৌসুনি ৷ রঙের পোঁচ পড়ছে কটেজগুলিতে ৷ সংস্কারের কাজও চলছে ৷ পর্যটকেরাও আসতে শুরু করেছেন ৷ এই অবস্থায় আশার আলো দেখছেন কটেজ মালিকরা ৷ চিনাই, মুড়িগঙ্গা, বটতলা নদী এবং চারদিক সমুদ্রে ঘেরা ছোট দ্বীপ মৌসুনি ৷ 2017 সালে হাতেগোনা কয়েকটি কটেজ দিয়ে শুরু হয়েছিল পর্যটন ব্যবসা ৷ প্রথম দিকে তেমন পর্যটকের দেখা তেমন না মিললেও ধীরে ধীরে জায়গাটি পরিচিতি পেতে থাকে ৷ নির্জন এই পরিবেশে সমুদ্রের ঢেউ, পাখির কলতান শুনে ছুটি কাটাতে আসেন অনেকেই ৷
এদিকে ফি বছর সুন্দরবনের উপর দিয়ে বয়ে যা একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ৷ ঘূর্ণিঝড়, বন্যার তাণ্ডবে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল গোটা দ্বীপ ৷ আর্থিক মন্দার কারণে বহু কটেজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু শীত পড়তেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে এই দ্বীপ ৷
ডিসেম্বর পড়তেই পর্যটকরা আসছেন মৌসুনি দ্বীপে ৷ এ বিষয়ে মৌসুনি দ্বীপের এক কটেজ মালিক তারক কুমার সরদার বলেন, "সমুদ্রের একেবারে কাছাকাছি থাকার কারণে কটেজগুলি বিভিন্ন সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷ কয়েক মাস আগেই প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল একাধিক কটেজ ৷" স্থায়ী কংক্রিটের নদী বাঁধ না-থাকার কারণে বারবার প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই কটেজগুলি ৷ এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "7-8 কিলোমিটার বাঁধ ইতিমধ্যে পাকা করার কাজ হয়ে গিয়েছে ৷ আর 800 মিটারের কাজ হয়ে গেলেই মৌসুনি একেবারে নিরাপদ হয়ে যাবে ৷"
ফের ঘুরে দাঁড়াবে মৌসুনি দ্বীপের অর্থনীতি, আশাবাদী পর্যটক ব্যবসায়ীরা ৷ কলকাতার এক পর্যটক দেবারতি সরকার বলেন, "আমি একাধিকবার এই মৌসুনি দ্বীপে এসেছি ৷ এই জায়গাটা আমার খুব ভালো লাগে ৷ সামনেই সমুদ্র আর নির্জন পরিবেশ মানসিক শান্তি দেয় ৷ এখন তো কলকাতা থেকে খুব কম সময়ে এই মৌসুনি পর্যটন কেন্দ্রে চলে আসা যায় ৷" মৌসুনি দ্বীপে পৌঁছনোর জন্য নদীপথে একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে নামখানা ব্লক প্রশাসন ৷ আগের থেকে বেশি বেশি ফেরি সার্ভিস চালানো হচ্ছে ৷ এর ফলে খুব সহজেই মাত্র 3 ঘণ্টা সময়ে কলকাতা থেকে মৌসুনি দ্বীপে চলে আসা যায় ৷ শীতের মৌসুনি দ্বীপের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পর্যটকদের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে দ্বীপের বহু বাসিন্দা ৷ লক্ষ্মীলাভের দিন গুনছে মৌসুনি পর্যটন কেন্দ্রের কটেজ মালিকরা ৷
আরও পড়ুন: