কলকাতা, 21 অক্টোবর: শিয়ালদা স্টেশন থেকে লক্ষ্মীকান্তপুর লোকালে বহড়ু স্টেশন ৷ সেখান থেকে মাত্র 3 কিলোমিটার গেলেই ময়দা গ্রাম ৷ আর এই গ্রামেই রয়েছে এক পাতালভেদী কালীমূর্তি (Moyda Kalibari) ৷ কথিত আছে, ময়দানবের আরাধ্য দেবী পাতালভেদী দক্ষিণাকালী ময়দানবেশ্বরী ৷ কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর চৈতন্য চরিতামৃত এবং বৃন্দাবন দাসের চৈতন্য ভাগবত থেকে জানা যায়, শ্রীচৈতন্যদেবের সপার্ষদ নীলাচলযাত্রার পথও ছিল এটি ৷ আদিগঙ্গার প্রবাহপথ ধরে শ্রীচৈতন্য ময়দা গ্রামের উত্তরে বারুইপুরের কাছে আটিসারা গ্রামে আসেন ৷ এখানে তিনি অনন্ত পণ্ডিতের বাড়িতে আশ্রয় নেন ৷ ময়দার এই কালীমন্দির 1176 বঙ্গাব্দে কলকাতার সাবর্ণ রায়চৌধুরীরা নির্মাণ করান ৷ বন্দ্যোপাধ্যায়দের মন্দিরের সেবায়েত হিসেবে নিযুক্ত করেন রায়চৌধুরীরাই ৷ তবে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়েও এক ঐতিহাসিক কাহিনি আছে ৷
সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের 36তম বংশধর তথা আঞ্চলিক গবেষক শুভদীপ রায়চৌধুরীর কাছ থেকে জানা যায়, রায়চৌধুরী পরিবারের এক বংশধর একদিন বজরা নিয়ে গঙ্গার বুকে বেড়াতে বের হন ৷ হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ে, দূরে বকুল গাছের ডালে একটি ছোট মেয়ে দোল খাচ্ছে ! জমিদার বজরা থামিয়ে মেয়েটির খোঁজ করতে থাকলে মাঝিরা জানায়, "ও ডাইনি ! ওকে ধরা যায় না !"
আরও পড়ুন: সতীপীঠ কালীঘাটের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে কলকাতার নামকরণের ইতিহাস
রায়চৌধুরীদের জমিদারকে রাতে ওই বালিকা স্বপ্নে জানায় যে, সে পাতালভেদী দক্ষিণাকালী ! বকুল গাছের গোড়ায় যে মাটির স্তূপ আছে, তা খুঁড়লেই পাওয়া যাবে এক খণ্ড শিলা ! স্বপ্নে সেখানেই মন্দির তৈরি করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় ওই বালিকা ৷ সেই মতোই রায়চৌধুরীদের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় মন্দির ৷ শুধু কালীপুজোতেই নয়, বিশেষ বিশেষ তিথিতে পুজো দেওয়ার জন্য খুব ভিড় হয় এই মন্দিরে ৷ এখনও কালীপুজোর সময় সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের নাম করে জোড়া পাঁঠা বলি দেওয়া হয় ৷ এছাড়া, মায়ের পুকুরে স্নান করে পুণ্যার্থীরা ময়দানবের পরমারাধ্যা দেবী পাতালভেদী ময়দানবেশ্বরী দক্ষিণাকালীর পুজো দেন ৷
কালীপুজোর সারাদিন মায়ের পুজো চলে ৷ তবে বিশেষ পুজো শুরু হয় রাত 12টার পর ৷ আর ভোর 3টে নাগাদ সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের নামে জোড়া পাঁঠা বলি দেওয়া হয় ৷