জয়নগর, 1 অক্টোবর : কথিত আছে, স্বয়ং মা দুর্গাই বয়স্ক মহিলার বেশে এসে জমিদার বাড়ির সদস্য ভুবনমোহিনী মিত্রকে পুজো শুরু করার কথা বলেন ৷ তারপর 1136 সাল থেকেই দক্ষিণ 24 পরগনার জয়নগরের মিত্র জমিদার বাড়িতে চলে আসছে দুর্গাপুজো ৷ জমিদারি প্রথা না থাকলেও অতীতের নিয়ম মেনে প্রতিবছর পুজো হয় এখানে । কালের নিয়মে জৌলুস কিছুটা কমলেও পুজোর আচার-আচরণে এতটুকুও খামতি রাখেন না জমিদার বাড়ির সদস্যরা ।
এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি কাকতালীয় ঘটনা ৷ বাড়ির একটি কাঁঠাল গাছে এই পুজোর সময় কাঁঠাল ফলবেই ৷ সেই কাঁঠাল পুজোর নৈবেদ্য হিসাবে মা দুর্গাকে নিবেদন করা হয় । জমিদার বাড়ির বিশাল ঠাকুর দালানে জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজোর দু‘দিন পর থেকেই মূর্তি তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায় ৷
আরও পড়ুন : Durga Puja Special : ইন্দো-বাংলা সীমান্তে জমিদারবাড়িতে একইসঙ্গে পুজো হয় সোনা ও মাটির দুর্গার
দক্ষিণ 24 পরগনার সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, নামখানা, রায়দিঘি, মথুরাপুর ইত্যাদি এলাকা জুড়ে জমিদারি প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার করেছিল মিত্ররা । অতীতে পুজোর সময় এই জমিদার বাড়িতেই প্রজারা পুজোর যাবতীয় জিনিসপত্র পাঠাতেন ৷ কিন্তু কালের নিয়মে জমিদারি প্রথার অবসান ঘটেছে ।
অতীতে সাতটি ছাগল ও মোষ বলির প্রথার প্রচলন থাকলেও এখন দু‘টি করে ছাগল বলি হয় । বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যেই রয়েছে বিশাল পুকুর ৷ কলাবউ স্নান থেকে শুরু করে প্রতিমা বিসর্জন, সব এই পুকুরেই হয় ৷
কর্মসূত্রে পরিবারের সদস্যরা ভিনরাজ্যে ও ভিনদেশে থাকলেও পুজোর চারদিন বাড়ি ফিরে একত্রে আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই ৷ অতীতের মতন এখনও পুজোয় নরনারায়ণ সেবা দেওয়া হয় ৷
আরও পড়ুন : Durga Puja Special : রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত পুজো এবার 351 বছরে পা দিল
জমিদার বাড়ির সদস্য শুভেন্দু মিত্র জানান, আনুমানিক 300 বছর পুরনো এই পুজোয় মৃৎশিল্পী থেকে পুরোহিত সকলেই বংশপরম্পরায় এই পুজো করে আসছেন ৷ অতীতে দেড় মণ চালের নৈবেদ্য সমর্পণ করা হলেও বর্তমানে এক মণ চালের নৈবেদ্য দেওয়া হয় ৷ অতীতে মহালয়ার পরের দিন থেকেই পুজো শুরু করা হলেও এখন ষষ্ঠী থেকেই মূলত পুজো শুরু হয় ৷ আগে প্রতিদিন বলিদানের প্রথা থাকলেও এখন শুধুমাত্র দু'দিন বলি দেওয়া হয় । জৌলুস কমলেও আচার-আচরণে খামতি না রেখে নিয়ম মেনেই এখনও চলছে মিত্রবাড়ির পুজো ।
আরও পড়ুন : Calcutta High Court : এবারও জারি বিধিনিষেধ, দুর্গাপুজোর মণ্ডপে প্রবেশ নিষিদ্ধ দর্শনার্থীদের