জয়নগর, 15 নভেম্বর: জয়নগর যেন শ্মশানপুরী। কালীপুজোর দিন পর্যন্ত সব ঠিক ছিল ৷ কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিনেই জীবন যেন ওলট-পালট হয়ে গেল জয়নগরের বাসিন্দাদের । সোমবার সকালে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হয় জয়নগরের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করের । আর এই খুনের ঘটনা কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই যেন রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় দক্ষিণ 24 পরগনার জয়নগরের বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের দলুয়াখাঁকি গ্রাম ।
গ্রামে এরপর যেন লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে যায় ৷ একের পর এক বাড়ি দাউদাউ করে জ্বলছে ৷ অসহায় হয়ে কাঁদছে একরত্তি শিশু থেকে শুরু করে মহিলারা । এই ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসে দমকল ৷ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত, সব পুড়ে ছাই ৷ সেখানে কেবল এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আধপোড়া চাল । হাত দিয়ে টেনে সেগুলোই একটা পাত্রে তুলে নিচ্ছেন সহায় সম্বলহীনরা ৷ এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে মঙ্গলবার সকালে । জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলেন, কিছু তো খেতে হবে । বাড়িতে নেই একজনও পুরুষ । আতঙ্ক চোখে-মুখে । তাই সেই পোড়া ঘরেই ছড়িয়ে থাকা চাল কুড়োচ্ছেন মহিলারা । কারও কোলে একরত্তি সন্তান, কোনও বাড়িতে শুকনো মুখে বসে আছে বছর চারেকের নাবালিকা । চাল-ডাল তো দূরের কথা, জল জোটাতেই বেগ পেতে হচ্ছে পরিবারগুলিকে ।
সইফুদ্দিন লস্কর খুনের পর যাঁদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁরা বলছেন, পুলিশ-প্রশাসন কোনও সাহায্যই করছেন না । গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তারা সিপিএম করে ৷ তাই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই খুনের সঙ্গে সিপিএমের নাম জড়িয়ে গ্রামে 20 থেকে 25টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এবং ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে । এই ঘটনার সঙ্গে গ্রামের কেউ জড়িত নব, শুধুমাত্র সন্দেহবশত এমনই কাণ্ড ঘটিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ।
গ্রামবাসীদের সাহায্যের জন্য মঙ্গলবার বিকেলে তাই ওই গ্রামে ছুটে গিয়েছিল বাম প্রতিনিধি দল । পুলিশি বাধার সম্মুখীন হন তারা ৷ ফলে গ্রামে ঢুকতে পারেননি বাম প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বরা । তবে অসহায় গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়াতে তাঁরা পিছপা হননি ৷ ওই পরিবারদের নিয়ে আসা হয়েছে জয়নগরের দক্ষিণ বারাসাতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে । সেখানেই মহিলা-শিশু থেকে গ্রামবাসীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে দুবেলা মুঠো খাওয়ারের । এই শীতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় এখন নিজেদের আস্তানা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলুয়াখাঁকি গ্রামের অসহায় মানুষদের । এ বিষয় এক অসহায় মহিলা সৈরব বিবি জানান, কিছু তো খেতে হবে । কেউ তো খেতে দিচ্ছে না ।
তাঁরা জানাচ্ছেন, রান্নার উনুন পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হয়েছে । তাঁদের বাড়ির পুরুষেরা সবাই আতঙ্কে ঘরছাড়া । তাঁরা কোথায় কেউ জানেন না । আমিনা লস্করের কথায়, "পুলিশ চলে গেলেই ওরা মারধর করবে বলেছে । মেয়েদের ওপর অত্যাচার করবে বলে হুমকি দিচ্ছে ।" উপায় কী এবার? কেউ জানেন না ।
তবে এ বিষয় রাজ্য কমিটির সদস্য তথা জয়নগরের সিপিএম নেতা অপূর্ব প্রামাণিক বলেন, "জয়নগরের তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে, তা কারোর অজানা নেই । পঞ্চায়েত ভোটের আগে গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল জয়নগর । এই ঘটনার সঙ্গে সিপিএমে দলে কোনও যোগ নেই । শুধুমাত্র সন্দেহবশত গ্রামে একের পর গ্রাম বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা । গ্রামের মহিলা ও শিশুরা অসহায় হয়ে পড়েছে ৷ তাই দলের পক্ষ থেকে ওদেরকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং দুবেলা দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে তাঁদের । পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে এই হামলা চালানো হয়েছে । গোটা গ্রাম যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ।"
আরও পড়ুন: