ভাঙড়, 12 জুলাই: ভাঙড় আছে সেই ভাঙড়েই। পঞ্চায়েতের ভোটপর্ব শেষে গণনার সময়েও হিংসা, খুন, বোমা-গুলি কোনও কিছুই বাদ গেল না । বুধবার সকাল থেকে মেলার মাঠ-সহ চালতাবেড়িয়া হাইস্কুল, বিজয়গঞ্জ বাজার, কাঠালিয়া এলাকা থেকে একাধিক বোমা উদ্ধার করেছে জেলা পুলিশের বোম স্কোয়াড । ঘটনাস্থলে গিয়েছে সিআইডি'র বম্ব স্কোয়াডও ৷ এলাকায় মোতায়েন রয়েছে ভিন রাজ্যের পুলিশও । চলছে টহল । কিন্তু তারপরও বিরাম নেই হিংসার । এরমধ্যে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং তাঁর দেহরক্ষীকে লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীদের গুলি করার ঘটনা সামনে আসায়, রীতিমতো উদ্বিগ্ন রাজ্য পুলিশের একাংশ। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আইপিএস মহলের একাংশও । এবার ভাঙড়ের হিংসার ঘটনার তদন্তভার গেল সিআইডির হাতে ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নের প্রথম দিন থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভাঙড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা । বোমা-গুলির আঘাতে একাধিক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে । এই অশান্তি নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে আইএসএফ এবং তৃণমূল । সেই ধারা অব্যাহত থাকল ভোট গণনার দ্বিতীয়দিন পর্যন্ত । মঙ্গলবার রাতে এলাকায় আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে আহত হয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার । সংবাদমাধ্যমের সামনে এই বিষয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও, আইপিএস মহলের একাংশের দাবি, কোন এলাকায় কখন পুলিশ ঢুকবে এবং পুলিশ কীভাবে উন্মত্ত জনতাকে বাগে আনবে, তার ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ বহুদিন ধরে রাজ্যে বন্ধ। এছাড়াও ন্যূনতম নিরাপত্তা ছাড়াই পুলিশকর্মীরা ভোটের ডিউটি করতে যাচ্ছেন । ভাঙড়ের মতো উত্তপ্ত এলাকায় কেন এইভাবে পুলিশ কর্মীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া যেতে হচ্ছে, তা নিয়েও আইপিএস মহলের একাংশে ক্ষোভ সামনে এসেছে।
অন্যদিকে, বুধবার সকাল থেকে ফের দেদার বোমা, গুলি চলতে থাকে ভাঙড়ে । ঘটনার খবর পেয়ে সকালেই ঘটনাস্থলে হাজির হয় সিআইডির একটি বিশেষ দল। গোয়েন্দাদের সঙ্গে ছিলেন সিআইডির বোম স্কোয়াডের অফিসাররাও । সিআইডি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই তারা আভ্যন্তরীণভাবে ওই এলাকায় কীভাবে বোমা এবং গুলি এসে পৌঁছাল তা জানার চেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে বহু বোমাও এদিন নিষ্ক্রীয় করেন বোম স্কোয়াডের কর্মীরা ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই দক্ষিণ 24 পরগনা বারুইপুর জেলা পুলিশের অন্তর্গত ভাঙড় এবং সংলগ্ন বেশ কিছু এলাকা প্রায় প্রতিদিনই খবরের শিরোনামে স্থান পেয়েছে। এর মধ্যেই অন্যতম বিজয়গঞ্জ বাজার, মেলার মাঠ, কাঠালিয়া চালতাবেড়িয়া হাই স্কুল । এই মনোনয়নপত্র পেশ করাকে কেন্দ্র করে আইএসএফ এবং তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর জেরে উভয় পক্ষের মোট তিন জনের মৃত্যু হয়েছিল । আর ভোট মিটে যাওয়ার পর গণনা চলাকালীন এখনও পর্যন্ত ভাঙড়ে একজন আইএসএফ কর্মী-সহ বেশ কয়েকজনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। এই খুনের নেপথ্যে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে অভিযোগ আইএসএফের ।
আরও পড়ুন: ভোটের হিংসায় মৃত্যুতে পরিবারকে 2 লাখ করে ক্ষতিপূরণ ও হোমগার্ডের চাকরি, ঘোষণা মমতার
রাজ্যের প্রাক্তন এডিজি নজরুল ইসলাম মনে করেন, বর্তমানে পুলিশের যা করণীয় সেইগুলো সঠিকভাবে আইন মেনে করতে পারছে না পুলিশ । পুলিশ চাইলেই আইন প্রয়োগ করে যথাযথ রাস্তায় চলতে পারে। কিন্তু পুলিশকে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থকরা ভয় দেখিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে আইনি পদক্ষেপ না করতে বাধ্য করছে বলে দাবি করেন তিনি ।