ডায়মন্ডহারবার, 9 অক্টোবর: গতকালকের পর আজও রাজ্যের বিভিন্ন পৌরসভাগুলিতে সিবিআই-এর তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে ৷ সোমবার সকালে ডায়মন্ডহারবার পৌরসভায় হানা দেয় সিবিআই আধিকারিকদের একটি প্রতিনিধি দল ৷ ডায়মন্ডহারবার পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান প্রণব দাসকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই আধিকারিকেরা ৷ পাশাপাশি ডায়মন্ডহারবার পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন মীরা হালদারের বাড়িতেও তল্লাশি অভিযান চালায় সিবিআই ৷
এর আগে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি চেয়ে ডায়মন্ডহারবার পৌরসভাকে নোটিশ দিয়েছিল ইডি ৷ কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থার নোটিশ অনুযায়ী সমস্ত তথ্য পাঠিয়েও দেয় পৌরসভা ৷ সেই সময় পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান প্রণব দাস বলেছিলেন, ‘‘নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা বলতে পারব না, সেটা আদালতের বিষয়।’’ এরপর আজ সিবিআই-এর 2টি দল ডায়মন্ডহারবার পৌরসভা এবং প্রাক্তন চেয়ারপার্সনের বাড়িতে একসঙ্গে হানা দিল ৷ জানা গিয়েছে, 2016 সালে ডায়মন্ডহারবার পৌরসভায় 16 জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল ৷ সেই নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে ছিল অয়ন শীলের সংস্থা ৷
যদিও, সেই বিষয়ে পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন মীরা হালদার জানিয়েছিলেন, 2016 সালের শেষ থেকে 17’র অগস্টের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছিল ৷ তবে, সেখানে দুর্নীতি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না ৷ তাঁর দাবি, বোর্ড অফ কাউন্সিলে আলোচনার মাধ্যমে যে ভাবে নিয়ম মাফিক কাজ করা হয়, সেই ভাবেই এজেন্সি মারফৎ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল ৷ সেক্ষেত্রে পৌরসভা সঠিকভাবেই এগিয়েছিল এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি ৷ এমনকি অয়ন শীল সম্পর্কে তাঁদের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না বলেই দাবি করেন মীরা হালদার ৷
এ দিন ডায়মন্ডহারবার পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন তথা 10 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মীরা হালদারের বাড়িতে সিবিআইয়ের 5 সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যায় ৷ সেখানে দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চালায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা ৷ সূত্রের খবর, পৌরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একাধিক প্রশ্ন এ দিন তাঁকে করা হয় ৷ জিজ্ঞাসাবাদের পর সিবিআই আধিকারিকরা মীরা হালদারের বাড়ি থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে গিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন: ‘কী অপরাধ করেছি আমি’, সিবিআই তল্লাশি শেষে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন ফিরহাদ
এ বিষয়ে ডায়মন্ডহারবারের সিপিআইএম নেতা দেবাশিস ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা ডায়মন্ড হারবার পৌরসভার এই নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি ৷ সিবিআই তদন্ত অবিলম্বে শেষ করে, দোষীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন জানাচ্ছি আমরা ৷’’ দুর্নীতি ইস্যুতে রাজ্যের শাসকদলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বিরোধী দলের নেতারা ৷ বিজেপি নেতা সুফল ঘাটুর অভিযোগ, ‘‘পৌরসভায় কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি অস্বচ্ছতার সঙ্গে হয়েছিল ৷ এই কর্মী নিয়োগের পিছনে আর্থিক লেনদেন রয়েছে ৷ তদন্তকারী সংস্থা যেভাবে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমার মনে হয় এই নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডের শিকড় কতদূর বিস্তৃত, তা দ্রুত সামনে আসবে ৷’’
আরও পড়ুন: 'দোষ করলে শাস্তি হোক', সিবিআই অভিযান নিয়ে সোজাসাপটা মন্তব্য দেবের
যদিও, বিরোধীদের অভিযোগে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বর্তমান চেয়ারম্যান প্রণব দাস ৷ তিনি বলেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে সিবিআই আধিকারিকরা ডায়মন্ডহারবার পৌরসভাতে এসেছে ৷ তাঁদের আমরা বিভিন্ন নথি দিয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করছি ৷ এই নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে ডায়মন্ডহারবার পৌরসভা কোনভাবেই যুক্ত নেই ৷ তদন্তের স্বার্থে সিবিআই আধিকারিকদের সাহায্য করতে পেরে পৌরসভার পক্ষ থেকে আমরা অত্যন্ত গর্বিত ৷’’
এ দিন প্রাক্তন চেয়ারম্যান মীরা হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর সিবিআই ফের ডায়মন্ডহারবার পৌরসভায় আসেন ৷ সেখানে 2016 সালে নিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি তদন্তাকারী আধিকারিকরা খতিয়ে দেখেন ৷