পাথরপ্রতিমা, 30 অক্টোবর: অভাবের সংসারে পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছে মাঝপথেই । কিন্তু লকডাউনের কয়েক মাসে গোটা পাথরপ্রতিমার ভরসা হয়ে উঠেছেন চম্পা বেরা । খাতা-কলমের পরিবর্তে তাঁর হাতে এখন ‘মাতৃযান’ অ্যাম্বুল্যান্সের স্টিয়ারিং । আর তাতেই পাথরপ্রতিমায় প্রসূতিদের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বছর কুড়ির এই তরুণী ।
লক্ষ্মীজনার্দনপুর অঞ্চলের মহেশপুর গ্রামে বাড়ি চম্পার । বাড়ির ছোট মেয়ে তিনি । বড় দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে আগেই । অভাবের সংসারে তা-ও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন চম্পা । লকডাউন চলাকালীনই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন । রায়দিঘি কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তিও হন । কিন্তু বাবার অসুস্থতা তাঁকে কলেজ ছাড়তে বাধ্য করে । বর্তমানে তিনিই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ।
আরও পড়ুন: Prashant Kishor: বিজেপি কোথাও যাচ্ছে না, সত্যিটা বুঝছেন না রাহুলই; মন্তব্য প্রশান্তর
চম্পার বাবা রবীন্দ্রনাথ বেরাই এত দিন অ্যাম্বুল্যান্স চালিয়ে সংসারের খরচ জোগাতেন । একার রোজগারেই তিন মেয়েকে বড় করেন । বিয়েও দেন দু’জনের ৷ কিন্তু নার্ভের সমস্যা নিয়ে তিন-তিনটি অপারেশন হওয়ার পরও, লকডাউনে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি ৷ তাতে ডান পায়ের কর্মক্ষমতা যেমন চলে যায়, তেমনই চিকিৎসা করাতে গিয়ে জমানো টাকা তো খরচ হয়ে যায়ই, মাথায় চাপে প্রচুর টাকার ঋণও ৷
এমন পরিস্থিতিতে উপায় না দেখে চম্পাকেই সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয় ৷ এমনি খেয়ালের বশে মেয়েকে অ্যাম্বুল্যান্স চালানো শিখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু ৷ এই দুঃসময়ে বাবার শেখানো সেই বিদ্যাই শাপে বর হয় চম্পার ৷ ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অ্যাম্বুল্যান্স-এ চাপিয়ে প্রসূতিদের নিয়ে আসার কথা ছিল রবীন্দ্রনাথবাবুর ৷ তাঁর জায়গায় নিজে সেই কাজ হাতে তুলে নেন চম্পা ৷
আরও পড়ুন: TMC-Congress: কংগ্রেসের রাজনীতি শুধু টুইটারেই, বিজেপিকে হারানোর গরজ নেই, কটাক্ষ তৃণমূলের
চম্পা বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স চালাত । আমাকেও শিখিয়েছিল । কিন্তু বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে । তাতে কলেজের প্রথম বর্ষেই পড়াশোনায় ইতি টানতে হয় আমাকে । এখন আমাকেই দেখতে হচ্ছে সংসার । অ্যাম্বুল্যান্স চালিয়ে যা রোজগার হয়, তা থেকে বাবার ওষুধ চলে । সংসারের খরচও উঠে আসে । পরবর্তী কালে সরকার সাহায্য করলে ফের পড়াশোনা শুরু করব ।’’
শুরুতে মেয়ের সিদ্ধান্তে কিন্তু কিন্তু করলেও, চম্পার অদম্য জেদ এবং লড়াকু মানসিকতার কাছে হার মানেন রবীন্দ্রনাথবাবু এবং তাঁর স্ত্রী ৷ তাতে শুধু বাবার চিকিৎসার খরচই বইছেন না চম্পা, সংসারের হালও ধরেছেন ৷ তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ এলাকাবাসীও ৷ আশাকর্মীদের ফোন পেলেই অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে বেরিয়ে পড়েন চম্পা ৷ আবার অভাবী মানুষজনের ক্ষেত্রে বিনা ভাড়াতেই রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেন ৷