কোচবিহার, 6 নভেম্বর : এবার দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ বিধায়ক মিহির গোস্বামী ৷ গতকাল ও আজ সোশাল মিডিয়ায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন ৷ তাঁর অভিযোগ, "দিদির দলে যোগ দিয়েছিলাম কারণ তখন CPI(M)-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেসের দাদা-দের থেকে দিদিকেই বেশি আস্থার মানুষ বলে মনে হয়েছিল । অবাক হয়ে দেখলাম লড়াইয়ে জিতে ক্ষমতা দখলের পর দিদি সেই CPI(M)-ই আস্থা রাখছেন । যে মানুষগুলি দিদিকে অজস্র অকথা কুকথা বলতে কখনও ছাড়েনি, তারা একে একে তৃণমূলে এসে ছোটো বড় গদি দখল করে বসে আছে । তবে আমার মতো কর্মী কিন্তু দিদির উপরে আস্থা হারাইনি ।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই যুব কংগ্রেস করতেন কোচবিহারের দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামী । পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করলে তিনি সেখানে যোগ দেন ৷ তারপর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ সৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন । কোচবিহার জেলা তৃণমূলে তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে । সম্প্রতি তৃণমূলের কোচবিহার জেলা ও ব্লক কমিটি প্রকাশ হতেই দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে দলের সমস্ত সাংগঠনিক পদ থেকে ইস্তফা দেন মিহির গোস্বামী ।
তারপর থেকেই টানাপোড়েন শুরু হয় দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে । তাঁকে বোঝাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ থেকে শুরু করে অনগ্রসর কল্যাণ মন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণ বর্মণ দৌড়ঝাঁপ করলেও তাঁর দেখা পাননি । ফলে তিনি কি তৃণমূলে থাকবেন না BJP-তে যাবেন এ নিয়ে যখন কোচবিহারের জল্পনা চলছে ঠিক তখনই তিনি সোশাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্ট করছেন ।
তিনি লেখেন, ‘‘গত 10 বছরে দিদিকে ঘিরে যে পারিষদ বলয় তৈরি হয়েছিল তার থেকে সামাজিক দূরত্ব রেখে গিয়েছি বরাবর । তবু গত দশবছরে দলের মধ্যে অপমানিত হয়েছি অগুনতিবার । কিন্তু তাই বলে দিদির উপর আস্থা হারাইনি। আজ যখন দেখছি দিদির দলে কোনও ঠিকাদার থিংকট্যাঙ্ক কম্পানি ঢুকে পড়ে তছনছ করে দিচ্ছে ঘরবাড়ি, অপমানিত জনপ্রতিনিধিরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ৷ অথচ দিদি অন্তরালে নির্বিকার, তাহলে সেই ঘরবাড়ির মতোই দিদির প্রতি এতদিনের সব আস্থা ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয় ?’’
তিনি আরও লেখেন, " আজকাল নিজেকেই নানা প্রশ্ন করি । বয়সটা যখন 22 বছর কম ছিল, আবেগের পরিমাণ তো তখন বেশি ছিল । কিন্তু সেসময় প্রিয়রঞ্জনকে ছেড়ে মমতার অনুগামী হয়েছিলাম আবেগকে বেশি পাত্তা না দিয়েই । তবে কি রাজনীতিতে কেরিয়ার তৈরির জন্যই পৃথক তৃণমূল পরিবারে শামিল হয়েছিলাম? তাহলে কেন পারলাম না একটা মোটর গাড়ি কিনতে? কেন পারিনি কলকাতায় একটা ছোটো ফ্ল্যাটের মালিক হতে? কেন এক ফালি জমি শান্তিনিকেতন বা মন্দারমনিতে কিনে রাখতে পারি নাই একটা ছোটো বাগান ভিলা বানাব বলে? আমি কেবল মানুষের জন্যই কাজ করতে চেয়েছি । বিনিময়ে আমি তো কেবল সম্মান-ভালোবাসাটুকুই চেয়েছি । আজ বুঝতে পারি আমার রাজনীতি-পাঠের ভাষায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন শিগগির । কারণ আমার কোচবিহার ও আমার উত্তরবাংলার জন্য বহু কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও এখনও সুযোগ পেলাম কোথায়?’’
তৃণমূল বিধায়কের সঙ্গে একাধিক বার ফোনে ধরার চেষ্টা করা হলেও, তাঁর ফোনে পাওয়া যায়নি ৷ এমনকী বিষয়টি নিয়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব কোনও মন্তব্য করতে চায়নি ৷