কোচবিহার, 10 নভেম্বর : প্রায় আটশো বিঘা জমিতে অতীতে ছিল বনাঞ্চল ৷ পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মানুষ নির্বিচারে ওই বিরাট বনভূমি সাফ করে কৃষিজমি ,বসতবাড়ি , বাগান তৈরি করেছে ৷ বনবিভাগের উদ্যোগে শনিবার থেকেই শুরু হয়েছে জমি জরিপের কাজ ৷ শুরু হয়েছে বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ৷ ঘটনাস্থান কোচবিহারের রানিরহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের সারোহাঁটি এলাকা ৷ ওই আটশো বিঘার মধ্যেই কোথাও আবার কিছু কৃষক তাঁদের পূর্বপুরুষের কাছে প্রাপ্ত জমিতে চাষবাস করছেন ৷ বনভূমি পুনরুদ্ধারের কাজে ওই কৃষকদের জীবিকা নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন ৷
বনবিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, 2001 সালের আগেই গোটা এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিয়ে এলাকাজুড়ে ছিল বিরাট একটি বনাঞ্চল ৷ প্রায় আটশত বিঘা জমির উপর ছিল এই বনভূমি ৷ মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই জলঢাকা নদীর ভাঙন , মানুষের নির্বিচারে বৃক্ষছেদন ,পশুপালন এই এলাকার বনাঞ্চল নষ্ট করে দেয় ৷ ছোটো-বড় সব গাছ কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে ৷ বর্তমানে কিছু জমি ছাড়া পুরো এলাকায় চলছে বিভিন্ন সময়ের কৃষিকাজ ৷ খুবই অল্প সময়ে মানুষের সীমাহীন চাহিদায় শেষ হতে বসেছে এই বনভূমি ৷ বনভূমির গাছ কেটে করা হচ্ছে কৃষি জমি, পশুচারণ ক্ষেত্র ৷ পুরো এলাকায় কোথাও কৃষিকাজ , কোথায় বাড়ি , আবার কোথাও বাগান বানিয়ে ফেলেছেন স্থানীয় মানুষজন ৷ ঘটনা নজরে আসতে দ্রুত বনভূমি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করা হয় বনবিভাগের তরফে ৷
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি এখানে শুধু বনভূমি ছিল না ,এখানে তাঁদের পূর্বপুরুষদের নিজের জমি ছিল ৷ চাষবাসও হত কিছু এলাকায় ৷ কিন্তু ,তাঁদের হাতে নথিপত্র নেই ৷ অনেকই জানান, "গাছ লাগানো ভালো ৷ তবে আমাদের চাষের জমিতে সরকার গাছ লাগিয়ে দিলে, যাব কোথায় আমরা? ওই জমিতে চাষবাস করেই আমাদের জীবন জীবিকা চলে ৷ আমরা যাব কোথায় ? কী ভাবে দিন চালাব ? সরকার আমাদের দেখবে কি ?" এমনই অভিযোগ বেশ কিছু বাসিন্দার ৷ তবে , ওই এলাকার অনেকই আবার কিছু অংশ জমিতে গাছ লাগানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ৷ আগ্রহী কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে গতকাল শুরু হয় জমির GPS ও জরিপের কাজ ৷
ওই জমির জরিপ শুরু হয় শনিবার থেকেই । কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকের রানিরহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের জলঢাকা নদী তীরবর্তী ওই এলাকায় সম্প্রতি আটশো বিঘা জমি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বনবিভাগ । প্রথম দফায় আপতত 225 বিঘা জমিতে বনসৃজন করবে বনবিভাগ । আগামী 2020 সাল নাগাদ বনসৃজনের কাজ শুরু হবে । গতকাল জমি জরিপের সময় ঘটনাস্থানে উপস্থিত ছিলেন মাথাভাঙা রেঞ্জ অফিসার সজল পাল, মাথাভাঙা বিট অফিসার বাবলু দাস, জামালদহ বিট অফিসার সুদীপ্ত তালুকদার ও রানিরহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ফুলেশ্বর রায় ।
মাথাভাঙা ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার সজল পাল জানিয়েছেন, "আপাতত 225 বিঘা জমিতে বনসৃজনের কাজ শুরু করা হবে । পরবর্তীকালে বাকি জমিতে বনসৃজন করা হবে । তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, বর্তমানে ওই সব জমিতে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ চাষাবাদ করে সংসার নির্বাহ করেছে ,সবার সঙ্গে কথা বলেই করা হবে বনায়নের কাজ ।"