কোচবিহার দক্ষিণ (কোচবিহার), 26 এপ্রিল: আজ জন সংযোগ যাত্রার দ্বিতীয় দিন ৷ মঙ্গলবার তাঁর নবজোয়ার কর্মসূচির প্রথম দিনে সিতাই, মাথাভাঙায় ব্যালট বাক্স ভেঙে ফেলার কাণ্ড ঘটেছে ৷ এরপর বুধবার ফের নিজের পছন্দের প্রার্থীর নামে ভোট দেওয়ার বার্তা দিলেন অভিষেক ৷ শুধু তাই নয়, আজ কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভায় 1 নং ব্লকের ঘুঘুমারি হোমিওপ্যাথি কলেজ গ্রাউন্ডে জনসভার মঞ্চ থেকে বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক থেকে শুরু করে শান্তনু ঠাকুরকে আক্রমণ করলেন ৷ কোচবিহারবাসীর উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, "বিজেপি বিধায়ক-সাংসদরা যদি মানুষের দাবি পূরণ না-করেন তাহলে তাঁদের বাড়ি ঘেরাও করুন ৷ যেখানে যেতে হয় আমি যাব ৷"
মঙ্গলবারের মতো আজও প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলীয় কর্মীদের কড়া বার্তা দিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন, মানুষকে প্রভাবিত করে ব্যালট ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী হওয়া যাবে না ৷ যারা এটা করবে তা মূর্খামি করছে ৷ এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত সবাইকে জানান, পঞ্চায়েতের প্রার্থী মানুষ ঠিক করবে ৷ কে প্রার্থী হবে, তা নেতারা ঠিক করবেন না ৷ যে দল ক্ষমতায় থাকে তারা রাস্তায় নামে না ৷ দেশে এই প্রথম এমন কর্মসূচি হচ্ছে ।
পঞ্চায়েতে প্রার্থী বাছাই করতে জনসংযোগ যাত্রা কেন ? এই প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, "আমরা কলকাতায় বসে ব্লকের নেতাদের থেকে মতামত নিয়ে প্রার্থী বাছাই করতে পারতাম ৷ কিন্তু করিনি ৷" তাঁর স্পষ্ট বার্তা, কোনও নেতার পা ধরে টিকিট পাওয়া যাবে না ৷ তিনি আশ্বস্ত করেন, প্রত্যেকে তাঁর নিজের বুথে ভালো লোকের কথা জানান ৷ যে মানুষের জন্য কাজ করবে, অভিষেক তথা তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকেই জেতাবে ৷ নির্দল নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবেই তাঁকে জেতানো হবে ৷ আজও তিনি নীল রঙের ব্যালট বক্সে ভোট দিয়ে প্রার্থীর সমর্থনে ব্যালটে ভোট দেওয়ার আর্জি জানান ৷ যাঁরা ভোট দিতে পারবেন না, তাঁরা ফোন করে কে প্রার্থী হতে পারেন সেই বিষয়ে মতামত দিতে পারবেন ৷
আরও পড়ুন: পাহারাদার তিনি নিজে, ব্যালট বাক্স লুঠের পর কড়া বার্তা অভিষেকের
অভিষেক জানান 100 দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে দিল্লি। 2 কোটি 65 লক্ষ মানুষের জীবন নির্ভর করছে এই প্রকল্পের উপর ৷ আর তাদের টাকা জোরজবরদস্তি আটকে রাখা হয়েছে ৷ এই টাকা ফিরিয়ে আনতে মানুষকে পাশে থাকতে হবে ৷ 2019 ও 2021 সালে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল যে ভালো ফল করতে পারেনি, তা স্বীকার করে নেন তৃণমূল সাংসদ ৷ তিনি জানান, প্রথমে 9টির মধ্য়ে 7টিতে পরাজিত হয়েছিল ঘাসফুল ৷ পরে একটি কেন্দ্রে উপনির্বাচনে জেতে তৃণমূল ৷ এখন কোচবিহারে 6 জন বিধায়ক বিজেপির ৷ একজন বিধায়কও বিধানসভায় কোচবিহার নিয়ে কিছু বলেননি ৷ তাঁরা কলকাতায় ফুর্তি করছেন বলে কটাক্ষ করেন অভিষেক ৷
কোচবিহার দিনহাটার বিজেপি সাংসদ তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে নির্বাচন করা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন ৷ অভিষেক উপস্থিত জনতাকে জানান, রাষ্ট্রমন্ত্রী যে মন্ত্রকের তার অধীনে বিএসএফ ৷ আর এই বিএসএফই কোচবিহারবাসীর উপর অত্যাচার চালাচ্ছে ৷ রাজবংশী সম্প্রদায়ের প্রেমকুমার বর্মনকে 108টি গুলিতে ঝাঁঝরা করেছে বিএসএফ ৷ তাঁর প্রশ্ন, এটাই কি কোচবিহারবাসীর পাওনা ?
তিনি জানান, ভোট ধর্মের নামে নয়, কর্মের নিরিখে হওয়া উচিত ৷ ধর্মের নামে 2019 সালে ভোট হয়েছিল ৷ তাই রামমন্দির হয়েছে, কিন্তু বাংলা টাকা পাচ্ছে না ৷ সিপিএম জমানায় পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসের কথা তোলেন অভিষেক ৷ তিনি জানান, 2018 সালের পঞ্চায়েত ভোট নয় ৷ প্রতি ভোটে প্রচুর মানুষ মারা গিয়েছে ৷ সেই বিষয়ে পরিবর্তন চাইছেন অভিষেক তথা তৃণমূল কংগ্রেস ৷ 2021 সালে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে সামনে রেখে বাংলার মানুষ ভোট দিয়েছে ৷ মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় যে কথা দিয়েছিলেন, তা রেখেছেন ৷ আগামী দিনে প্রতিটি মানুষের বাড়িতে রেশন পৌঁছে দেওয়া হবে ৷ গ্রীষ্ম-বর্ষায় কাউকে কোনও লাইনে দাঁড়াতে হবে না ৷ কেন্দ্র সরকারকে কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, "2019 সালে ধর্মের নামে ভোট হয়েছিল ৷ আজ টিভি খুললেই মোদিজির 56 ইঞ্চির ছাতি দেখতে পাচ্ছেন ৷ আর তিনি হাতির শুঁড়ে হাত বোলাচ্ছেন ৷"
আরও পড়ুন: চাষাবাদ করতে না-দিয়ে গুলি করছে বিএসএফ, অভিযোগ অভিষেকের