কলকাতা ১৪ এপ্রিল : নির্বাচন কমিশনের মাথাব্যথার কারণ শ্যাডো জ়োন। রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়ে গেছে বেশ কিছু এমন বুথ। যে বুথগুলোতে প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ দুঃসাধ্য। শ্যাডো জ়োনের এমন বুথে যোগাযোগের জন্য হ্যাম রেডিয়োর সাহায্য চাইল কমিশন। ভোটের শতাংশের হিসাব, গন্ডগোলের খবর, সবই কলকাতার মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তরে পৌঁছে দেবেন হ্যাম রেডিয়োর সদস্যরা।
কী এই শ্যাডো জ়োন? যে বুথগুলোতে ইন্টারনেটের সিগনাল নেই, যেখানে মোবাইলের টাওয়ার নেই, কমিশনের ভাষায় এই বুথগুলোই শ্যাডো জ়োন। যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ নেই সেগুলিকে বলা হয় নেট শ্যাডো জ়োন। আর যেখানে মোবাইল টাওয়ার পাওয়া যায় না, সেগুলিকে বলা হয় ভয়েস শ্যাডো জ়োন।
লোকসভা ভোটে সব বুথে ইন্টারনেটের সংযোগ চায় ভারতের নির্বাচন কমিশন। এরাজ্যেও যাতে সেই ব্যবস্থা করা যায় তারজন্য বহু আগে থেকেই সচেষ্ট হয়েছিল মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তর। এতে ইন্টারনেটহীন বুথ সংখ্যা কমিয়ে আনা গেছে অনেকটাই। কিন্তু সংখ্যাটা শূন্যতে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। সংখ্যাটা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার তৎপরতা থাকলেও মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তরের কর্তাদের কপালে ভাঁজ। প্রতিকূল পরিবেশে সব বুথে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা যাবে তো ? যদি না করা যায় তবে সেই সব বুথে যোগাযোগের মাধ্যম কী হবে, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরের কর্তারা।
ভোটের দিন দপ্তরের সঙ্গে ভোট কর্মীদের যোগাযোগের মাধ্যম হল SMS বেসড ভোট মনিটরিং সিস্টেম। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, SMS বেসড ভোট মনিটরিং সিস্টেম ১০০ শতাংশ কার্যকরী হয় না। ফলে ভোটের শতাংশের হিসেব পেতে সমস্যা হয়। নানা সমস্যার কারণে অনেক সময় প্রিজ়াইডিং অফিসারের SMS মুখ্য নির্বাচনী কমিশনের আধিকারিকের দপ্তরে পৌঁছায় না। আর তাই বুথস্তরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখার জন্য একটি অ্যাপ এনেছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর। যার মাধ্যমে বুথস্তরের ভোট কর্মীরা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারছে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তরে। দেওয়া যাচ্ছে রিপোর্ট। জানানো যাচ্ছে অভিযোগ। এই অ্যাপটি কার্যকরী হওয়ার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ দরকার। পাশাপাশি নির্বাচনে সুরক্ষার অন্যতম ব্যবস্থা ওয়েব কাস্টিংয়ের জন্যও প্রয়োজন ইন্টারনেট সংযোগ। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বুথের সব ছবি ঘরে বসেই দেখতে পান কমিশনের কর্তারা।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তর সূত্রে খবর, আগে রাজ্যের বহু বুথেই ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। কমিশনের নির্দেশ আসার পর সক্রিয় হয় রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তর। সেই সূত্রেই দফায় দফায় বৈঠক হয় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের সঙ্গে। জানিয়ে দেওয়া হয় সব বুথেই থাকতে হবে ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা। তারপরও গোটা রাজ্যে প্রায় এক হাজার বুথে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায়নি। সেই সূত্রেই ডাক পড়েছে হ্যাম রেডিয়োর। ওয়েস্টবেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরিশ নাগ বিশ্বাসকে চিঠি লিখেছেন উত্তর 24 পরগনা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক। উত্তর 24 পরগনার সীমান্ত লাগোয়া বেশ কিছু অঞ্চল এবং সুন্দরবনের লাগোয়া কিছু অঞ্চল এখনও মোবাইল শ্যাডো জ়োন। এই অংশগুলোতেই যোগাযোগ স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হ্যাম রেডিয়োকে। এই বিষয়ে ভারতের মিনিস্ট্রি অফ টেলিকমিউনিকেশন থেকে অনুমোদন পেয়েছে হ্যাম রেডিয়ো। ইতিমধ্যে মোবাইল শ্যাডো জ়োনে গিয়ে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়েছেন রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যরা। ফলে নির্বাচনের দিন কমিশনের যোগাযোগের ভরসা হতে চলেছে হ্যাম রেডিয়োই।